করোনার মোকাবিলায় ছুতমার্গ চলবে না
২১ এপ্রিল ২০২০গোটা বিশ্বে করোনা সংকট সরকার ও প্রশাসনকে উভয় সংকটে ফেলছে৷ একদিকে সংক্রমণের হার কম রাখতে লকডাউন বা অন্য ধরনের কড়াকড়ির মাধ্যমে মানুষকে কার্যত গৃহবন্দি রাখতে হচ্ছে৷ অন্যদিকে এমন পরিস্থিতির কারণে বিপর্যস্ত অর্থনীতি আবার চালু করার জন্যও চাপ বাড়ছে৷ এই অবস্থায় লকডাউন তুলে নেবার দাবি জোরালো হয়ে উঠছে৷ বিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা করোনা সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছেন৷ এ বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় লকডাউন তুলে নেবার পরিণতি সম্পর্কেও আগেভাগে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না৷
জার্মানিতেও কড়াকড়ি শিথিল করার পক্ষে ও বিপক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে৷ সুইডেনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে ‘শিথিলপন্থি' শিবির বলছেন, মানুষের বিচারবুদ্ধির উপর ভরসা করে সব বাধা তুলে নেওয়া উচিত৷ সবাই সতর্ক হলে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷ অন্যদিকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপও চালু থাকবে৷ অর্থাৎ, ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার হওয়া পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের সঙ্গে সহাবস্থান করেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলতে হবে৷
এমন ‘সাহসি' বা ‘বেপরোয়া’ প্রস্তাব মেনে নিতে প্রস্তুত নন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ স্বভাবসিদ্ধ সংযম সরিয়ে রেখে গত সপ্তাহান্তে তিনি এমন আলোচনা সম্পর্কে চরম বিরক্তি প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর আশঙ্কা, যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে সংক্রমণের হার আবার বেড়ে যাবে৷ এমন ঝুঁকি নিতে তিনি নারাজ৷ পরোক্ষভাবে ম্যার্কেল ‘শিথিলপন্থি' শিবিরের আচরণ দায়িত্বজ্ঞানহীন হিসেবে তুলে ধরেছেন৷ তার বদলে তিনি ধীরে ধীরে বাধানিষেধ শিথিল করার পক্ষে৷ অর্থাৎ, নতুন করে বিপদ দেখা দিলে তিনি আবার পিছু হটার পথ খোলা রাখতে চাইছেন৷
চ্যান্সেলরের বক্তব্যের এমন সুর অনেকের কাছেই বাড়াবাড়ি বলে মনে হচ্ছে৷ খোলামেলা আলোচনার বদলে বিরোধীদের কণ্ঠ রোধ করলে আখেরে গণতন্ত্রের ক্ষতি হবে বলে মনে করছে সংবাদ মাধ্যমের একাংশ৷ এমনিতেই সরকারের বর্তমান পদক্ষেপের ফলে ব্যক্তির অধিকার খর্ব হচ্ছে, ফেডারেল জার্মানির ইতিহাসে যেমনটা এর আগে কখনো দেখা যায়নি৷ সে বিষয়ে তর্কবিতর্কের সুযোগও বন্ধ করার চেষ্টা করলে মানুষ প্রশাসনের উপর আস্থা হারাতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
করোনা-সংকট মোকাবিলায় সাধারণ মানুষের সহযোগিতা কতটা জরুরি, ম্যার্কেল নিজেই শুরু থেকে বার বার তা তুলে ধরেছেন৷ সহযোগিতার জন্য তিনি দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন৷ কোনো আলোচনা ছাড়াই উপর থেকে বিধিনিয়ম চাপিয়ে তা মেনে চলার হুমকি দিলে বাস্তবে কতটা সুফল পাওয়া যেতো, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ ‘শিথিলপন্থি’ শিবিরের দাবির মুখেও বিচক্ষণ এই নেতাকে ধৈর্য ধরে প্রয়োজনে বারবার কড়া বিধিনিয়মের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে বলতে হবে এবং যুক্তি দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে৷
অন্যদিকে কড়াকড়ি তুলে নেওয়ার প্রবক্তাদেরও এমন বেপরোয়া মনোভাবের পরিণতি বোঝা দরকার৷ সুইডেন বা অন্য কোনো দেশের অভিজ্ঞতা যে জার্মানির ক্ষেত্রে হুবহু প্রয়োগ করা সম্ভব, এমনটা ধরে নেওয়া কঠিন৷ একইভাবে অন্য কোনো দেশ জার্মানির বিশেষ অবস্থা অনুকরণ করলে একই ফল পাওয়ার সম্ভাবনা কম৷ গোটা বিশ্বে করোনা সংকটের মুখে সবাইকেই মানতে হবে যে, এমন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ সম্পর্কে মানুষের ধারণা ও জ্ঞান এখনো অত্যন্ত সীমিত৷ সংকীর্ণ মনোভাব ছেড়ে নিবিড় পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই শেষ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস কাবু করা সম্ভব হবে৷
এসবি/এসিবি