কর্মীদের পাশে বিএনপি, শুদ্ধি অভিযানে আওয়ামী লীগ
৪ মে ২০২২আগামী ডিসেম্বরের সম্মেলন ঘিরে দলে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। আর ঝিমিয়ে পড়া কর্মীদের চাঙা করতে এবারের ঈদে এলাকায় ছুটে গেছেন বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সম্প্রতি শেষ হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। অনেকেই দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। আগামী ডিসেম্বরে আমাদের যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে দলের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছেন তারা যেন না আসতে পারেন সে ব্যাপারে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। ফলে আমরা সেই সব নেতাদের তালিকা তৈরি করছি। আগামী ৭ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠকে প্রত্যেক বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তাদের নিজের এলাকার রিপোর্ট উপস্থাপন করবেন। আমরা ওই রিপোর্টে দলে অনুপ্রবেশকারী বা দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছেন তাদের বিষয়টি তুলে ধরব। পাশাপাশি যেসব জায়গায় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, ওই সব এলাকায়ও ডিসেম্বরের আগে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি করা হবে।”
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় দেড় বছর বাকি থাকলেও এখন থেকেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। জাকাত বা বিভিন্ন দান বা অনুদানের নামে সহযোগিতা নিয়ে কর্মীদের পাশে এবার দাঁড়িয়েছেন। অনেকে এলাকায় যেতে না পারলেও নিজ নির্বাচনী এলাকায় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন ঈদ উপহার। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন ও আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও হয়েছেন এলাকামুখী। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন তারা। ঈদ উপহার বিতরণের পাশাপাশি ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে গণসংযোগ করেছেন, চা-চক্রসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে সাধ্যমতো সহায়তা করছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এবারের ঈদ যতটা আনন্দের সঙ্গে হওয়ার কথা ছিল, ততটা হয়নি। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে অনেক মানুষের ঈদ কষ্টে কেটেছে। তারপরও বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা সাধ্যমত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছে।” এটা কি নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ? জবাবে জনাব প্রিন্স বলেন, "বিএনপি সবসময় নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের প্রস্তুতি সব সময় বিএনপির থাকে। এখন আসলে আমরা নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। বর্তমান সরকারের অধীনে যে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না, সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে। ফলে আমরা চাইছি, নির্দলীয় কোন সরকারের অধিনে নির্বাচন হোক। এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। আর বিএনপি অংশ না নিলে সেই নির্বাচন দেশে হবেও না।”
আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেই এবারের ঈদে নিজ নিজ এলাকায় শুভেচ্ছা সংবলিত পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন লাগিয়েছেন। নিজেকে জানান দিতে ব্যবহার করছেন ডিজিটাল প্ল্যাটফরমও। দাঁড়িয়েছেন গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যারা এলাকায় ঈদ করেননি, তারাও এবার এলাকায় ঈদ করেছেন। অনেক জায়গায় আবার কোন কোন নেতা গাড়ির সামনে-পেছনে বিশাল বহর নিয়ে এলাকায় শো-ডাউন করেছেন।
এবারের ঈদে নেতারা কতটা এলাকামুখী? জানতে চাইলে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম ইসমাইল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এবার কেন্দ্রীয় নেতারা অনেক বেশি এলাকামুখী। শুধু কেন্দ্রীয় নেতারা নন, জেলা পর্যায়ের নেতারাও নানা ধরনের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সামনের নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের তৎপরতা শুরু হয়েছে বলেই আমার মনে হয়েছে। আমার এলাকার সংসদ সদস্য উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম ঈদের নামাজ ঢাকায় পড়লেও ঈদের আগে দীর্ঘ সময় এলাকাতেই ছিলেন। মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন।”
মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার বুনাগাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বখতিয়ার উদ্দিন লস্কর ডয়চে ভেলেকে বলেন, "শুধু এবারের ঈদ নয়, করোনার শুরু থেকেই আমাদের এলাকার সংসদ সদস্য ড. বীরেন সিকদার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এবারের ঈদে তিনি মানুষের জন্য নানা ধরনের উপহারসামগ্রী পাঠিয়েছেন। আমরা সেগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।” এটা কি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি? জবাবে জনাব বখতিয়ার বলেন, "সামনে নির্বাচন, ফলে এখন থেকে তো প্রস্তুতি নিতেই হবে। ঈদে নেতারা সবসময় কর্মীদের সহযোগিতা করেন। ফলে সবকিছু মিলেই এবারের ঈদটা উৎসবমুখর হয়েছে। গরীব মানুষের মুখে এবার আমরা হাসি ফোটাতে পেরেছি।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নিজ এলাকা চট্টগ্রামে ঈদ করেছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ ঈদ করেছেন নিজ নির্বাচনী এলাকা কুষ্টিয়ায়। আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও ঈদ করেছেন নিজ নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম রয়েছেন গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দিনাজপুরে, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন নেত্রকোনায়, বিএম মোজাম্মেল হক শরীয়তপুরে, মির্জা আজম জামালপুরে, সাখাওয়াত হোসেন শফিক বগুড়ায় এবং অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন পটুয়াখালীতে নিজ নিজ এলাকায় ঈদ উৎযাপন করেছেন।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে তৃণমূলে বিএনপিকে চাঙা করতে দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা ঈদ করেছেন নিজ এলাকায়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা'য় ঈদ করেছেন। ঈদের দিন বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির কয়েকজন নেতা তার সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান নরসিংদীতে ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করেছেন। ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, বরকতউল্লাহ বুলু নোয়াখালীতে ও যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বরিশালে নিজ এলাকায় ঈদ করেছেন।