কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রে এবার তিন নারীর লড়াই
কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রে এবার তিন প্রধান দলই নারীদের প্রার্থী করেছে। তিনজনই লড়াকু ও হেভিওয়েট প্রার্থী।
মালা রায়েই ভরসা মমতার
তৃণমূল নেত্রী গতবারের জয়ী প্রার্থী মালা রায়ের উপরেই ভরসা রেখেছেন। ১৯৯১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত মমতা এই কেন্দ্র থেকেই জিতেছেন। তার আগে এখান থেকে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, গণেশ ঘোষ, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিরা জিতেছেন। মালা রায় এই কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। এটা তার চেনা কেন্দ্র। তাই তার উপরই ভরসা রেখেছেন মমতা।
সাবেক মন্ত্রী নতুন কেন্দ্রে
বিজেপি প্রার্থী হলেন সাবেক মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। গতবার তিনি জিতেছিলেন উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে। এবার তাকে রায়গঞ্জে প্রার্থী করেনি বিজেপি। করেছে একেবারে কলকাতা দক্ষিণে। বালুরঘাটের মেয়ে দেবশ্রীকে তাই লড়তে হচ্ছে খাস কলকাতায়, খুবই মর্যাদাপূর্ণ কেন্দ্রে।
সায়রা শাহ হালিম
সিপিএম এখানে প্রার্থী করেছে সায়রা শাহ হালিমকে। সায়রা বিধানসভা উপ-নির্বাচনে বালিগঞ্জ কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি রীতিমতো লড়াই করে হেরেছিলেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে। ৪৬ বছর বয়সি সায়রা শাহ হালিম হলেন সিপিএমের তারকা প্রার্থী। সায়রা আবার বলিউড তারকা নাসিরুদ্দিন শাহের ভাইয়ের মেয়ে।
কাউন্সিলর থাকার সুবিধা
সাংসদ থাকার পাশাপাশি মালা রায় কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলারও থেকেছেন। মানুষকে পুর সুযোগসুবিধা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি বরাবরই উদ্যোগী। এলাকায় তার জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ সেটাই। একসময় মালা রায় ও তার স্বামী নির্বেদ রায় দুজনেই কংগ্রেসে ছিলেন। তারপর মালা রায় তৃণমূলে যোগ দেন। ৬৬ বছর বয়সি পোড় খাওয়া রাজনীতিক মালা রায় তাই কলকাতা দক্ষিণে খুবই শক্তিশালী প্রার্থী।
সদা সক্রিয় মালা
নিজের কেন্দ্রে, পুরসভায় এবং লোকসভা মালা রায় সমান সক্রিয়। লোকসভায় তিনি ২০৪টা প্রশ্ন করেছেন। বাজেট নিয়ে একবার বলেছেন এবং দুইটি বিল নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। নয়বার জিরো আওয়ারে জরুরি বিষয় তুলেছেন। মালা রায়ের দাবি, গভীর রাতেও সমস্যা নিয়ে কেউ ফোন করলে তিনি ফোন তোলেন। মানুষ তার কাছে সমস্যা নিয়ে এলে সমাধানের চেষ্টা করেন। এলাকার জলের সমস্যার সমাধান করেছেন। তিনি মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেন।
দিনভর প্রচার
মালা রায়ের প্রচার শুরু হয়ে যাচ্ছে সকাল থেকে। চলছে রাত পর্যন্ত। কখনো হুড খোলা জিপে, কখনো শোভাযাত্রা করে, কখনো হেঁটে প্রচার চলছে মালা রায়ের। সঙ্গে থাকছেন কাউন্সিলার ও বিধায়কেরা। তাদের নিয়ে প্রতিটি এলাকা চষে ফেলছেন মালা রায়। প্রতিটি অলি-গলিতে যাচ্ছেন তিনি।
'আগের থেকে বেশি ভোটে জিতব'
মালা বলছেন, তিনি জানেন মানুষ কী চায়। সেইভাবেই তিনি কাজ করেছেন। মানুষের দুয়ারে সরকার পৌঁছে গেছে। তিনি ঘুরে ঘুরে দেখেছেন, মানুষ তাদের কাজে সন্তুষ্ট। তাদের অভিযোগ নেই। তিনি বিপুল সাড়া পাচ্ছেন। তাই গতবারের থেকেও বেশি ভোটে জেতার ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী। বারবার তার প্রচারে উঠে এসেছে কন্যাশী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পগুলির কথা।
কে এই সায়রা শাহ হালিম?
সিপিএমের প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম হলেন বিধানসভার সাবেক স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের পুত্রবধূ। তিনি নাসিরুদ্দিন শাহের ভাইঝি। বিদেশে পড়াশুনা, কর্পোরেট চাকরি করা এখন অতীত। বর্তমানে তিনি কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্র চষে ফেলছেন ভোট দেয়ার আবেদন নিয়ে।
কখনো হেঁটে, কখনো হুড খোলা গাড়িতে
সায়রা তার প্রচারে মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। তিনি হেঁটে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। আবার কখনো হুড খোলা গাড়িতে চেপে গলি গলি ঘুরছেন। বাংলায় সাবলীলভাবে বলার চেষ্টা করছেন। বলছেন, এবার এই আসনটি জেতার ব্যাপারে তিনি খুবই আশাবাদী।
বুদ্ধদেবের আর্শীর্বাদ নিয়ে
সায়রা প্রার্থী হওয়ার পর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাম অ্যাভিনিউর ফ্ল্যাটে গেছিলেন। সায়রার স্বামী ফুয়াদ হালিম পেশায় চিকিৎসক। বুদ্ধদেবেরও চিকিৎসা করেন। বুদ্ধদেব সায়ারাকে আশীর্বাদ করে বলেছেন, লড়াই করতে হবে। জিততে হবে। বুদ্ধদেবের সঙ্গে কথা বলার পর সায়রা আপ্লুত।
সায়রা একা নন
এবার কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট হয়েছে। ফলে সায়রার প্রচারে যোগ দিয়েছে কংগ্রেসও। কংগ্রেসের নেতা ও কর্মীদের নিয়মিত প্রচারে দেখা যাচ্ছে।
দেবশ্রী কেন কলকাতা দক্ষিণে?
বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী উত্তরবঙ্গের মেয়ে। তবে তিনি নিজেই এবার দক্ষিণবঙ্গে লড়তে চেয়েছিলেন। তাকে প্রার্থী করা হয়েছে, কলকাতা দক্ষিণে তৃণমূলের দুর্গে। দেবশ্রী বলেছেন, তিনি দলের অনুগত সৈনিক। দল যেখানে ভালো মনে করবে, প্রার্থী করবে, সেখানেই তিনি লড়বেন।
গতবারের জয়ের পিছনে
গতবার রায়গঞ্জে মহম্মদ সেলিম ও দীপা দাশমুন্সির মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হয়। সেই সুয়োগে দেবশ্রী চৌধুরী জিতে যান। এবারও বিপক্ষে দুই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে এখানে দেবশ্রীর লড়াই আরো কঠিন।
দেবশ্রী কী বলছেন?
দেবশ্রী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি লড়াই করছেন এবং করবেন। একদিন তো কাউকে লড়ে অন্যায়, দুর্নীকে উৎখাত করতে হবে। মমতার যেমন রাজনৈতিক ইতিহাস আছে, দেবশ্রীরও আছে। এর জবাবে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, একসময় মোদী তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বের করে দিয়েছেন, তারপর বিজেপি তাকে রায়গঞ্জ থেকে বের করে দিলো। এখন সান্ত্বনা পুরষ্কার হিসাবে কলকাতা দক্ষিণে তাকে প্রার্থী করা হয়েছে।
দেবশ্রীর মুখে বারবার তৃণমূলের দুর্নীতি
প্রচারে নেমে দেবশ্রী বারবার তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের দুর্নীতির কথা তুলছেন। সন্দেশখালিতে শাহজাহান শেখের কথা বলছেন। পুলিশের বাড়াবাড়ির কথা বলছেন। কালীঘাটে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করার পর দেবশ্রী বলেছেন, মমতার দুর্গে তিনি আঘাত হানতে চান।