টেকস্যাভি কলকাতা বইমেলা
৩০ জানুয়ারি ২০১৪কলকাতা বইমেলার ৩৮ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রিভিলেজ কার্ড বিলি করল বইমেলা কর্তৃপক্ষ৷ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার ওয়েবসাইটও এবার ঝাঁ চকচকে নতুন, আগের থেকে অনেক বেশি দৃষ্টিনন্দন এবং সপ্রতিভ৷ সেই ওয়েবসাইটে লগ ইন করে বাংলা সাহিত্য এবং প্রকাশনা সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলেই এসেছে একটি ই-মেলবাহিত শংসাপত্র৷ সেই মেলের প্রিন্টআউটই এবারের বইমেলার প্রিভিলেজ কার্ড, যা দেখালে, ৫০০ টাকার বেশি দামের বই কিনলেই পাওয়া যাবে মুদ্রিত দামের উপর অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ ছাড়৷
অর্থাৎ এতদিন বইমেলায় যে ১০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যেত, তার উপরে আরও ১৫ শতাংশ, মানে মোট ২৫ শতাংশ, মানে কলকাতার বইপাড়া অর্থাৎ কলেজ স্ট্রিটে প্রকাশনা সংস্থার নিজস্ব দোকান থেকে সরাসরি কিনলে সারা বছর যে ২০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায়, তার উপর বাড়তি আরও পাঁচ শতাংশ! কী বলা যায়, এতদিনে বুদ্ধি খুলল? যে ক্রেতারা এতদিন একটু দামী বই হলেই বইমেলা থেকে না কিনে কলেজ স্ট্রিটে ফিরে যেতেন, তাঁরা কি এবার তুমুল উৎসাহে বইমেলা যাবেন না? বইপাগল বাঙালি কি এর পর থেকে সারা বছর মুখিয়ে থাকবেন না জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের জন্য? এবং এবার কলকাতা বইমেলার বিক্রি যে আগের সমস্ত বছরের হিসেবকে টেক্কা দেবে, সেটা এখন থেকেই বলা যায়৷
১৯৭৬ সালে কলকাতার প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতাদের উদ্যোগে প্রথমবার যখন এই বইমেলা হয়েছিল, তখন স্টলের সংখ্যা ছিল কুল্যে ৫৬টি৷ এবার, এই ৩৮তম বইমেলায় ১৮ একর, মানে আট লক্ষ বর্গফুট এলাকায় ছড়িয়ে থাকা মোট ৭৭০টি স্টল! বিশ্বের ২৯টি দেশের প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিচ্ছে, তার মধ্যে এক বাংলাদেশ থেকেই এসেছে ২৫টি প্রকাশনা সংস্থা৷ দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী এ বছর৷ যে কারণে কলকাতা বইমেলার এবারের থিম দেশ পেরু৷ একটি ফটক এবং প্যাভেলিয়নের অলঙ্করণ হয়েছে সে দেশের ইনকা সভ্যতার ধ্বসস্তুপের অলঙ্করণে৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন পেরুর মহিলা সাহিত্যিক ফ্রান্সেসকা ডেনেগ্রি৷
গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা বইমেলার মঞ্চ ভাগ করেই অনুষ্ঠিত হচ্ছিল কেএলএফ বা কলকাতা লিটারারি ফেস্টিভাল৷ কিন্তু এবার কেএলএফ আলাদা হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু তাতে কলকাতা বইমেলার সেলেব্রিটি কোশেন্ট খুব একটা কমেনি৷ কারণ, উদ্যোক্তারা এবার থেকেই বইমেলায় শুরু করলেন তিন দিনের কলকাতা ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিটারারি ফেস্টিভাল, যাতে শরিক হবেন শশী থরুর, দেবদত্ত পট্টনায়েক, অমিত চৌধুরী, শ্যাম বেনেগাল এবং অপর্ণা সেনের মতো হেভিওয়েটরা৷ ল্যাটিন অ্যামেরিকান সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করবেন পেরু, স্পেন, কলম্বিয়া ও মেক্সিকো থেকে আসা কবি-সাহিত্যিকেরা৷ এবং অবশ্যই থাকছেন জনপ্রিয় বাঙালি লেখকেরা৷ এবার যেমন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিটারারি ফেস্টিভালের হাল ধরার দায়িত্ব রয়েছে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের হাতে৷
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যদিও না থেকেও আছেন এবারের কলকাতা বইমেলায়৷ তাঁর নামে মেলার একটি রাস্তার নামকরণ হয়েছে৷ যেমন রাস্তার নাম দেওয়া হয়েছে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, ঋতুপর্ণ ঘোষ, মনিভূষণ ভট্টাচার্য এবং মান্না দে-র স্মৃতিতে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর ভাষণে বলেছেন, এখন লোকের পড়ার অভ্যেস বদলেছে৷ ল্যাপটপ, ট্যাবলেট থেকে স্মার্টফোন, অনেক কিছুতেই বই পড়া যায় এখন৷ কিন্তু হাতে ধরে বই পড়ার যে মজা, তা আর কোনও কিছুতে নেই৷ তাই যাঁরা বই ভালবাসেন, তাঁরা একবার অন্তত বইমেলাতে আসবেনই৷