কলকাতার হাসপাতালে আগুনের তাণ্ডব
৯ ডিসেম্বর ২০১১আগুন লাগে শুক্রবার ভোর রাতে, দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় এএমআরআই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে৷ সেন্ট্রালি এয়ারকন্ডিশনড বাড়িটিতে আগুনের থেকেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে দম বন্ধ করা ধোঁয়া৷ওই বিষাক্ত ধোঁয়াই সম্ভবত প্রাণ কেড়েছে রোগশয্যায় বন্দি, চলৎশক্তিহীন রোগীদের৷ বার্তা সংস্থা স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ৮৯৷ অভিযোগ, হাসপাতালের বেসমেন্ট, যেটি বাস্তুকারের নকশায় গাড়ি রাখার জায়গা হিসেবে নির্দিষ্ট ছিল, সেটি কার্যত গুদামঘরে পরিণত হয়েছিল৷ হাসপাতালের কয়েকটি বিভাগও ছিল এখানে৷ খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কিছুদিন আগেই দমকল থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসেই দমকল এবং পুলিশের পক্ষ থেকে বেসমেন্টের ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল৷ তারাও আশ্বাস দিয়েছিল যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
রোগীদের আত্মীয়স্বজনের অভিযোগ, আগুন নেভানোর কাজ প্রায় দুঘন্টা দেরিতে শুরু হয়েছে৷ দমকলের অভিযোগ, তাদের দেরিতে খবর দেওয়া হয়েছে৷ প্রায় পুরোটাই কাঁচে ঢাকা আধুনিক বাড়িটিতে ঢুকতেও তাদের বেগ পেতে হয়েছে৷ এদিন সন্ধ্যাতেই মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, তাঁর সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে৷ এক, এএমআরআই হাসপাতালের অন্যতম কর্ণধার এস কে টোডি-সহ মোট ছজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে৷ এদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির জামিন অযোগ্য ৩০৪ ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে৷ দুই, এএমআরআই হাসপাতালের কলকাতার সবকটি শাখার লাইসেন্স বাতিল হয়েছে৷ উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পর এই হাসপাতালটিও সিল করে দেবে পুরসভা৷ আর তিন, কলকাতার পুলিশ কমিশনার এক উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তৈরি করেছেন, যে কমিটিতে কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশের পদস্থ অফিসাররা ছাড়াও থাকবেন দমকল, পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা৷ এরা আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখে সরকারকে দ্রুত রিপোর্ট দেবে৷ এই কমিটিকে তদন্তের কাজে সাহায্য করবে দিল্লি থেকে আসা জাতীয় ফরেনসিক দফতরের বিশেষজ্ঞরা৷
হাসপাতালে আগুন লাগার এই ঘটনা একদিকে যেমন প্রমাণ করল, এ ধরনের বিপর্যয় সামাল দিতে কলকাতা কতটা অপ্রস্তুত, তেমন এটাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল যে স্বাস্থ্য পরিষেবার নামে যারা কার্যত ব্যবসা করে, তারা কতদূর অমানবিক৷ ঢাকুরিয়ার স্থানীয় মানুষ, যাঁরা এদিন প্রথম হাত লাগিয়েছিলেন উদ্ধারের কাজে, রোগীদের আত্মীয়রা, যাঁরা সকাল থেকে অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে দেখেছেন আগুনের তাণ্ডব, তাঁরা সবাই এদিন শুধু চূড়ান্ত অসহযোগিতাই পেয়েছেন হাসপাতালের তরফ থেকে৷
প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক