1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতায় বর্ষবরণ ঘিরে অসচেতনতা

পায়েল সামন্ত
২ জানুয়ারি ২০২১

কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় কোভিড সর্তকতা উড়িয়ে উৎসবে শামিল হল মানুষ৷ অনেক জায়গায় ততটা সক্রিয় ছিল না পুলিশের নজরদারি৷

https://p.dw.com/p/3nS6M
কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কোভিড সর্তকতা উড়িয়ে উৎসবে শামিল হল মানুষ৷ অনেক জায়গায় ততটা সক্রিয় ছিল না পুলিশের নজরদারি৷
ছবি: Ranita Roy/REUTERS

২০২০ সাল কেটেছে নিরানন্দে৷ সব উৎসবে পড়েছে ভাটা৷ লকডাউনের জন্য দীর্ঘসময় ঘরবন্দি ছিল মানুষ৷ আনলক শুরু হতে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশ৷ এটা মনে করা হয়েছিল যে করোনা মুক্তির জন্য নতুন বছরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে জনতা৷ অপেক্ষা যেমন ভ্যাকসিনের তেমন করোনামুক্ত সময়ের৷ তাই ৩১ শে ডিসেম্বর বর্ষবরণের রাত ও পয়লা জানুয়ারি নববর্ষের প্রথম দিনে হইহই করে রাস্তায় নেমে পড়ল আবালবৃদ্ধবনিতা৷

নতুন বছর মানেই ব্যাপক হৈ-হুল্লোড়৷ রাস্তায় নাচানাচি ও গান বাজানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল পুলিশ৷ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশি নজরদারি থাকায় তাতে লাগাম টানা গিয়েছে৷ কিন্তু যেখানে পুলিশের নজরদারিতে শিথিল ছিল, সেখানে যথারীতি রাস্তায় হয়েছে হৈ-হুল্লোড়৷

সন্ধি মুখোপাধ্যায়

অন্যসব উৎসবের মতোই বর্ষবরণকে সীমিতভাবে উদযাপনের জন্য জনগণের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছিল পুলিশ প্রশাসন৷ শব্দবাজি, নাচ-গানে লাগাম টেনে বলা হয়েছিল চূড়ান্ত করোনা বিধি মনে চলতে হবে৷ কিন্তু বাস্তবে কী দেখা গেল? বর্ষবরণের রাতে জেলা বা শহরের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেল শব্দদানবের তাণ্ডব৷ এই পরিস্থিতি পুলিশের কেন সাউন্ড বক্স বা বাজি নিন্ত্রণের কোনো পরিকল্পনা ছিল না? প্রাক্তন পুলিশকর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দীপাবলিতে শব্দবাজিকে ঘিরে যতটা প্রচার চলেছিল, সেটা জনমানসে খুব প্রভাব ফেলেছিল৷ নিউ ইয়ার উদযাপনে তেমন প্রচার চলেনি৷ তাছাড়া উৎসবে মানুষ একটু পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করতে চান৷ সবর্দা ধরপাকড় চলবে, সেটা পুলিশও নয়৷’’

ইংল্যান্ডে করোনার নতুন ধরন যে আতঙ্ক তৈরি করেছে, তার বিন্দুমাত্র চিহ্ন কলকাতায় নেই৷ তার থেকেও বড় চিন্তা তৈরি হয়েছে করোনার ন্যুনতম স্বাস্থ্যবিধি ফাঁকি দেওয়া নিয়ে৷ ভ্যাকসিন আসার আগেই দুই গজের দূরত্ব, মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার ভুলে দীঘা, মন্দারমণির সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের উল্লাস চোখে পড়ার মতো ছিল৷ কলকাতায় নিক্কোপার্ক থেকে ইকো পার্ক, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে চিড়িয়াখানা- অধিকাংশ জায়গায় দেখা গেলো; গা ঘেঁষাঘেঁষি করে উৎসবে শামিল হয়েছে মানুষ৷ আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত জানান, চিড়িয়াখানায় বর্ষবরণে ৫১ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে৷ ইকোপার্ক কর্তৃপক্ষ জানান, নববর্ষের প্রথম দিনে ৮১ হাজারের বেশি মানুষ এসেছিলেন৷ 

Indien Kalkutta Nicco Park am Neujahrstag
কলকাতায় নিক্কোপার্কে উৎসবে শামিল হয়েছেন মানুষ৷ ছবি: Payel Shamanta/DW

কোথাও যথাযথ নিয়মের পালন, কোথাও নিয়ম না মেনে উৎসবে আনন্দ- এই দুই ক্ষেত্রেই পুলিশ ও প্রশাসনের প্রসঙ্গ উঠে আসছে৷ যেখানে নিয়ম পালন হয়েছে সেখানে প্রশংসিত হচ্ছে পুলিশি সক্রিয়তা৷ যেখানে প্রকাশ্যে নিয়ম মানা হয়নি সেখানে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ এ প্রসঙ্গে সন্ধি বলেন, ‘‘একদিনে এত মানুষ রাস্তায় নামার ফলে অসুবিধা তো হয়েছেই৷ এ ক্ষেত্রে সবাই মেনে চলবে না এটাই স্বাভাবিক৷’’

ভিড়ের মাঝে পুলিশের সঙ্গে মাস্ক পরা নিয়ে আমজনতার চেনা বচসার ছবি নববর্ষের প্রথম দিনেও দেখা গিয়েছে৷ দক্ষিনেশ্বরে দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে অথবা নিক্কোপার্কে দূরত্ববিধি পালন করাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়েছে৷ ইকোপার্কেও একই ছবি৷ পর্যটক ও স্থানীয়দের একাংশ মত্ত অবস্থায় আচরণের জন্য পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন৷ পার্কস্ট্রিটে হেলমেটবিহীন বেপরোয়া বাইকচালকদের লাইসেন্সও বাজেয়াপ্ত হয়েছে৷ লাগাতার মাইকে প্রচার, মাস্ক বিতরণের কর্মসূচীকে উড়িয়ে খোশ মেজাজে মানুষ৷ অনেকের মুখে মাস্ক রয়েছে, কিন্তু মাস্কহীন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়৷  

তবে সচেতনতা যে একেবারে নেই, সেটা বলা যায় না৷ এবার নিউ নর্মালে কাশীপুর উদ্যানবাটীতে কল্পতরু উৎসবে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ বিভিন্ন আবাসনের বাসিন্দারা অনলাইনে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷ অনেক আবাসনে করোনাবিধি বজায় রেখে অনুষ্ঠান করা হয়েছে, কোথাও সব অনুষ্ঠানই বাতিল করা হয়েছে৷ দমদমের দাগা কলোনীর নটরাজ অ্যাপার্টমেন্টের সমীর সাহা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০২০ সালে অনেকের নানা ক্ষতি হয়েছে৷ অনেক মৃত্যু দেখেছি আমরা৷ তাই শুধু প্রার্থনা করেই নতুন বছর শুরু করতে চেয়েছি আমরা৷ যাতে আগামী বছর মঙ্গলময় হয়৷’’ পাশাপাশি বিধাননগর পুলিশও নিরাপত্তা জোরদারের পরিকল্পনায় নতুন বছরের প্রথম দিনে একটি নতুন অ্যাপ চালু করেছে৷ এই অ্যাপ ডাউনলোড করা থাকলে যে কোনো পরিস্থিতিতে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে৷