কাচশিল্পী মাটেও গোনে
৩১ অক্টোবর ২০১৪কাচ নিয়ে ভাস্কর্য, কাচ থেকে ভাস্কর্য; কখনো বিমূর্ত, কখনো ব্যবহারিক, যেমন টেবিল ল্যাম্প: ফ্রান্সের মার্সেই বন্দরনগরীর আর্টস অ্যান্ড ক্রাফ্টস মিউজিয়ামে এ সমস্তই রাখা আছে৷ তার মধ্যে একটি ইলেকট্রিক কোম্পানির হেডকোয়াটার্সের জন্য তৈরি একটি অতিকায় ইলেকট্রিক বাল্ব পর্যন্ত৷ এ সবই মাটেও গোনে-র হাতে তৈরি৷
১৫ বছর আগে তিনি কাচের জিনিস তৈরির শিক্ষানবিশি শুরু করেন, পরে ডিজাইন নিয়ে পড়াশুনা করেছেন৷ কাচের জিনিস গড়ার সুপ্রাচীন হস্তশিল্পটিতে সবার আগে যে বস্তুটির প্রয়োজন পড়ে, তা হলো অভিজ্ঞতা৷ ৩৫ বছর বয়সি মাটেও সারা বিশ্বে সে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কাচের জিনিস তৈরি করা শিখতে বহু সময় লাগে – কেননা একটা কাচের জিনিস তৈরি করতে অপেক্ষাকৃত কম সময়ের মধ্যে পর পর অনেকগুলো কাজ করতে হয়৷ সেক্ষেত্রে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, সব কিছু ঠিকঠাক হবে, অর্থাৎ মাঝপথে থেমে গেলে চলবে না৷ গান-বাজনার মতো প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাজিয়ে যেতে হবে – যার জন্যে অনেক রেওয়াজ লাগে৷''
ভার্সাই-এর ফোয়ারা
আজ ছ'বছর হলো মাটেও তাঁর নিজের কর্মশালা চালাচ্ছেন – সুইজারল্যান্ডের বাসেল শহরের কাছে একটি সাবেক অ্যালুমিনিয়ামের কারখানায়৷ তাঁর কর্মশালায় মাটেও দশজন কর্মী নিয়ে ত্রিশটার বেশি প্রকল্পে কাজ করছেন – একযোগে৷
মাটেও-র দল আপাতত ধাতব টিউব আর কাচের বল দিয়ে একটি আধুনিক ফোয়ারা গড়ছেন প্যারিসের কাছে সুবিখ্যাত ভার্সাই প্রাসাদের অনুপম উদ্যানটির জন্য৷ কাচের বলগুলোর ভেতর দিয়ে একটি ধাতব নল চলে গেছে৷ সেই নলে তলা থেকে জল ঢোকানো যায়৷ সেই জল নল দিয়ে গিয়ে ওপর থেকে বেরিয়ে আসে৷
মাটেও ও তাঁর কাচশিল্পীরা একশো'টির বেশি কাচের বল তৈরি করেছেন, তাদের প্রত্যেকটিই একক ও অদ্বিতীয়৷ এ জন্য মাটেও তথাকথিত ‘পাইপ'-টিকে বারো'শো ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার চুল্লিটিতে ঢোকান – যে চুল্লিতে গলানো কাচ রাখা রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘তাপমাত্রা সঠিক আন্দাজ করা চাই, যেমন কাচ এখন ঠিক কতটা উত্তপ্ত, কেননা ৮০০ ডিগ্রির কম হলেই কাচ বড় শক্ত হয়ে যায় – যার অর্থ, তাপমাত্রা আবার বাড়াতে হয়, তবে খুব বেশি নয়, কেননা তাহলে কাচ তার আকার হারাবে৷''
কাচশিল্পীকে চারবার অবধি নতুন করে কাচ গরম করতে হতে পারে, যতক্ষণ অবধি না কাচের বলগুলি তাদের সঠিক আকার ও ঘনত্ব পেয়েছে৷ কেননা ভার্সাই-এর বাগানে তাদের সব ধরনের আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে হবে৷
সোনার তকমা
কাচের বলগুলি যাতে সত্যিই ‘ঝলমল' করে, সে জন্য ২৪ ক্যারেটের গোল্ড ফয়েল বা সোনার তবক ব্যবহার করা হয়৷ সেই সোনা দিয়ে আট কিলো ওজনের কাচের বল'গুলির ‘দ্যুতি' – এবং মূল্য – বাড়ানো হয়! কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, বলগুলিকে শক্তপোক্ত হতে হবে৷ মাটেও গোনে বলেন, ‘‘ভার্সাই-এর ফোয়ারাটার জন্য এই কাচের বলগুলো তৈরি করা খুব সোজা কাজ নয়৷ আমরা কাচটাকে যতটা টেকসই করা যায়, ততটাই করার চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু একটা ঝুঁকি তো থেকেই যায়, বিশেষ করে বাইরে ঠান্ডা-গরমের মধ্যে ব্যাপক ফারাকের ঝুঁকি, কিংবা কোনো বড় রকমের ঝড় আসার ঝুঁকি৷ সে ঝুঁকিও আমাদের হিসেবের মধ্যে রাখতে হয়েছে৷''
মাটেও গোনে নিজেকে কারিগর বলেই মনে করেন৷ বলেন, তিনি তাঁর গ্রাহকদের ধারণাগুলোকে বাস্তব রূপ দেবার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু তার ফলে যে সব বস্তু সৃষ্টি হয়, সেগুলি মাটেও-কে শিল্পীর সম্মান এনে দেয় বৈকি৷