‘আপিলের পথ খুলছে’
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩গণদাবির মুখে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের জন্য আপিলের সমান সুযোগ রেখে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে৷ এ বিষয়ের একটি প্রস্তাব মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদন পায় সোমবার৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ সেখানে সংশোধিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের খসড়ায় অনুমোদন দেয়া হয় বলে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে৷
সাংবাদিকদের মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া৷ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনেই আইনের এ সংশোধনী বিল আকারে পাস হবে৷ ফলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী মামলায় ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সংশোধিত আইনেই আপিল করা যাবে বলে আশা করা যায়৷''
গত সপ্তাহে আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার আদেশ দেয় ট্রাইবুনাল৷ তখন থেকে শাহবাগে ব্লগারদের উদ্যোগে শুরু হয়ে যায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন৷ দাবি একটাই – একাত্তরের ভূমিকার জন্য ‘মিরপুরের কসাই' নামে পরিচিত কাদের মোল্লাসহ অন্যান্য চিহ্নিত যু্দ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে৷
তখনই উঠে আসে দণ্ডের মাত্রা বাড়াতে আপিলের সুযোগ না থাকার বিষয়টি৷ এক পক্ষের আপিল করার কোনো সুযোগই না থাকায় আসামিপক্ষের আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাবার আশঙ্কাটাই বড় হয়ে ওঠে সবার মনে৷ শাহবাগের ‘প্রজন্ম চত্বর' এক দিন দুই দিন করে ছয়দিন পার করেও জানায়, সরকার ট্রাইবুনালের আইন সংশোধনের উদ্যোগ না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই৷ সারা দেশ তো বটেই, দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন৷ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা এক হয়ে জানাতে থাকেন, তাঁরা সকলেই আছেন ‘প্রজন্ম চত্বর'-এর পাশে, তাঁদেরও দাবি – স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কোনো রকমের ছাড় দেয়া যাবে না, সবার এক কথা, ‘‘রাজাকারদের ফাঁসি চাই৷''
এমন একটা অবস্থাতেই আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার৷ সচিবালয়ে এ নিয়ে একটা বৈঠক হয় রবিবার৷ বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ আশ্বাস দিয়েছিলেন, আইন সংশোধনের পর প্রসিকিউশন ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি দু পক্ষই আপিল করতে পারবে৷ তখন এ সংশোধনীর ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই বলেও জানান আইন মন্ত্রী, তিনি বলেন, ‘‘এ সংশোধন নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই, আসামিপক্ষ এবং প্রসিকিউশনের সমান অধিকার সৃষ্টির জন্যই আইন সংশোধন হচ্ছে৷''
আইন মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার পর আপিল বিভাগে ৪৫ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করার নিয়ম আছে৷ তবে প্রয়োজনে আরো ১৫ দিন সময় নেয়া যাবে, অর্থাৎ, আপিল করার পর সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে৷
প্রসিকিউশনেরও আপিলের সুযোগ রাখার বিধান যোগ করতেই গণদাবির মুখে আবার আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিতে বাধ্য হলো সরকার৷
এসিবি/এসবি