কার্বন নিরপেক্ষ শহর হতে অসলো যা করছে
১২ জানুয়ারি ২০২২যেমন মানুষ যেন ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে জাতীয় জাদুঘরে যেতে উৎসাহী না হয় সেজন্য সেখানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়নি৷ সাইকেল ও গণপরিবহনের কথা মাথায় রেখে শহরের যাতায়াত ব্যবস্থাও নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে৷
অনেকদিন ধরে অসলোর নগর পরিকল্পনায় নজর রাখছেন স্থপতি আনে মারিট লুন্ডে৷ তিনি বলেন, ‘‘গত ২০ বছরে অসলোতে অনেক পরিবর্তন এসেছে৷ শহরের মধ্য থেকে গাড়ি সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো ভবন গড়ে উঠেছে, মূলত হার্বার ঘিরে৷ এটি আরও প্রাণবন্ত, খোলামেলা ও সবাইকে কাছে টানার মতো শহর হয়ে উঠেছে বলে আমার মনে হয়৷''
নব্বই শতকের শেষদিক পর্যন্তও বিওরভিকা বন্দর ঘিরে অনেক পরিবহণ দেখা যেত৷ কিন্তু এখন সেটা মানুষ, সংস্কৃতি ও পরিবেশের মিলনস্থল হয়ে উঠেছে৷ যেমন সেখানে আছে ‘ডাইখম্যান বিওরভিকা' লাইব্রেরি৷ নরওয়ের মান অনুযায়ী, এটা জ্বালানি খুব কম ব্যবহার করা একটি ভবন, যাকে সাধারণত ‘প্যাসিভ হাউস' বলে৷ ভবনের ভেতরে ঢুকলে ছয়টি তলার দেখা পাওয়া যায়, যেখানে অনেক ফাঁকা জায়গা আছে - অনেকটা যেন বাসার বসার ঘরের মতো৷
আনে মারিট লুন্ডে জানান, ‘‘শহরের বাসিন্দাদের জন্য এটা একটা প্রাণবন্ত জায়গা৷ সবাই এখানে আসতে পারে৷ ভবনটা টেকসইভাবে তৈরি করা হয়েছে৷ যেমন এখানে কোনো পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই৷ ফলে আপনাকে গণপরিবহন ব্যবহার করতে হবে৷ এছাড়া ভবনে আরও এমন অনেককিছু আছে যেটা আসলেই টেকসই৷''
এখানে প্রায় সাড়ে চার লাখ বই ও এমন কিছু আছে, যা আপনাকে সৃষ্টিশীল হতে উৎসাহিত করে৷ যেমন থ্রিডি প্রিন্টার, পডকাস্ট করার জন্য একটা অডিও স্টুডিও৷ আরও আছে মিউজিক ইনস্ট্রুমেন্ট, যেগুলো সবাই ব্যবহার করতে পারে৷
লাইব্রেরির কাছে আকা ব্রুগে এলাকায় আছে নতুন জাতীয় জাদুঘর৷ ভবনের বাইরের অংশে নরওয়েতে পাওয়া যায় এমন স্লেট পাথর ব্যবহার করা হয়েছে, যা অনেকদিন পর্যন্ত টিকে থাকে৷
২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হতে চায় অসলো৷ সে কারণে সাইকেল ও গণপরিবহনের কথা মাথায় রেখে নতুন যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে৷ ইলেক্ট্রিক গাড়ি কেনার জন্য বোনাস, কর সুবিধাও দেয়া হচ্ছে৷ গাড়ি চার্জ করার জায়গাও বানানো হচ্ছে৷
অসলোতে দেখানোর মতো আরেকটা জায়গা হচ্ছে ভুলকান৷ আগে সেটা শিল্পাঞ্চল ছিল৷ এখন সেখানে পরিবেশবান্ধব আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন গড়ে উঠেছে৷ আরও আছে একটা বাজার৷ সেখানে জিওথার্মাল জ্বালানি ও সোলার প্যানেলের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা আছে৷ সেখান থেকে আশেপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়৷
অসলোর পরিবেশবান্ধব নীতি প্রাণিদের জন্যও সুফল বয়ে এনেছে৷ বিভিন্ন ভবনের ছাদে প্রায় ৪৫টি মৌচাক দেখাশোনা করেন আলেকজান্ডার ডু রিয়ে৷ মৌমাছিদের খাবারের জন্য অসলোর মধ্য দিয়ে একটি হাইওয়ে তৈরি করা হয়েছে৷ ডু রিয়ে বলেন, ‘‘হাইওয়েটা এভাবে কাজ করে৷ অসলোর কেন্দ্র দিয়ে চলে গেছে এমন এক রাস্তায় আমরা এমন সব গাছ লাগিয়েছি যেন মৌমাছি সেখান থেকে মধু সংগ্রহ করতে পারে৷ ফলে আশেপাশে উড়ে বেড়ানোর সময় মৌমাছিকে আর তার খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হয় না৷''
অসলোর ভবিষ্যৎমুখী নগর পরিকল্পনা অন্য শহরগুলোর জন্য শিক্ষনীয় হতে পারে৷
ক্রিস্টিয়ান ভাইবেসান/জেডএইচ