কালান্তরেও জ্বলবে আগুন
১৫ আগস্ট ২০১৪সামহয়্যার ইন ব্লগে রাকিব জাভেদ মিন্টু লিখেছেন,
‘‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা, যাঁর নেতৃত্বে আন্দোলন ও সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে৷ বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে থাকে৷ পঁচাত্তরের এই দিনে আগস্ট আর শ্রাবণ মিলেমিশে একাকার হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রক্ত আর আকাশের মর্মছেঁড়া অশ্রুর প্লাবনে৷ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সুবেহ সাদিকের সময় যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে বুলেটের বৃষ্টিতে ঘাতকরা ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল, তখন যে বৃষ্টি ঝরছিল, তা যেন ছিল আকাশেরই অশ্রুপাত৷ কাল থেকে কালান্তরে জ্বলবে এ শোকের আগুন৷ পঁচাত্তরে এই দিন স্ত্রী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ ও এক সহোদর আত্মীয়-পরিজনসহ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷''
আবদুল্লাহ আল আমিন লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী' উপন্যাসটি নিয়ে৷
তিনি লিখেছেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর মতো আত্মকথা ইতোপূর্বে অনেকেই লিখেছেন৷ ভারতে এই ধরনের আত্মজীবনী লিখেছেন সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, বিপিনচন্দ্র পাল, জওহরলাল নেহেরু, মহাত্মা গান্ধী, রাজেন্দ্র প্রসাদ, মওলানা আবুল কালাম আজাদের মতো বরেণ্য নেতারা৷ এ কালের ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করলে শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটিকে বাংলাদেশের ক্ল্যাসিকাল জাতীয় আত্মকথা বলে গ্রহণ করা যেতে পারে৷ ব্যক্তিজীবন জনজীবনে প্রোথিত করায়, সমকালের প্রয়োজনে আপাতত ইতিহাসের নির্বাচিত অংশের উদ্বোধনে, জাতির স্ব- নির্মিত অতীত প্রকল্প গঠনে এবং জনপ্রিয় ও সম্ভাব্য মুক্তিপ্রাপ্ত ভবিষ্যতের চিত্রাঙ্কনে মুজিবুরের এই অসমাপ্ত আত্মকাহিনী ধ্রপদী ভঙ্গিতেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের জীবনী কথা৷''
মো. গালিব মেহেদী খাঁন লিখেছেন, ‘‘...‘যার যার ধর্ম তার তার' ধর্মনিরপেক্ষতার এই ব্যাখ্যাটি বঙ্গবন্ধুই প্রথম উপস্থাপন করেন৷ ধর্মীয় আচার পালনের স্বাধীনতা তিনি দিতে চেয়েছিলেন সবাইকে সমান করে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠরা স্বাধীনতার স্বাদ সংখ্যালঘুদের চেয়ে একটু বেশিই আশা করেছিলেন৷ যা বঙ্গবন্ধুর এই ধর্মনিরপেক্ষতা তত্ত্বের কাছে এসে হোঁচট খায়৷''
তিনি লিখেছেন, ‘‘আজকের পৃথিবীতে ইসলামের দুটি রূপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে একটি উগ্রবাদী অন্যটি উদারনৈতিক৷ বঙ্গবন্ধুকে আমরা সেই উদারনৈতিক চিন্তাধারায় অভ্যস্ত ইসলাম বিশ্বাসী একজন মানুষ বলে গণ্য করতে পারি৷ আর এক জন দায়িত্বশীল রাষ্ট্র প্রধান তাঁর রাষ্ট্রে সব ধর্মের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে চাইবেন এটাই তো স্বাভাবিক৷ আর সে জন্যেই তিনি ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর খসড়া সংবিধান প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়৷ হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে; মুসলমান তার ধর্ম পালন করবে; খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ – যে যার ধর্ম পালন করবে৷ কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, বাংলার মানুষ ধর্মের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ চায় না৷ রাজনৈতিক কারণে ধর্মকে ব্যবহার করা যাবে না৷ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ধর্মকে বাংলার বুকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না৷ যদি কেউ ব্যবহার করে, তাহলে বাংলার মানুষ যে তাকে প্রত্যাঘাত করবে, এ আমি বিশ্বাস করি৷''
গালিব লিখেছেন, ‘‘আমরা যখন শুনতে পাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এ দেশে মসজিদ থেকে আযানের ধ্বনি নয় শোনা যাবে উলু ধ্বনি, আমরা যখন শুনতে পাই আওয়ামী লীগ নাস্তিকের দল, তখন সেই ধর্ম ব্যবসায়ী জিন্নাহকেই বারবার মনে করিয়ে দেয়৷ মনে হয় তাঁরই প্রেতাত্মা নতুন করে যেন আমাদের ঘারে এসে চেপে বসেছে৷''
তাই তিনি বলতে চেয়েছেন, ‘‘এটাই উপযুক্ত সময় একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে পিষে মারার৷ বঙ্গবন্ধু দেশকে পাকিস্তান মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন ঠিকই আভ্যন্তরীণ দেশ বিরোধী শক্তিকে নয়৷ সে কাজটি আজ তাঁর কন্যাকেই করতেই হবে৷ এটাই আসল কথা, এটাই শেষ৷''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ