কাল্পনিক সাহেবের কোরবানি ভাবনা
কাল্পনিক সাহেব ঢাকায় থাকেন৷ মধ্যবিত্ত মানুষটি ইতিমধ্যে করোনায় কাহিল হয়ে পড়েছেন৷ এই অবস্থায় সামনে আসছে কোরবানির ঈদ৷ তবে কষ্টের মধ্যেও সুখ খোঁজার চেষ্টা করছেন তিনি৷ কারণ, এটাই তার জীবনদর্শন৷
করোনায় কাহিল
অন্য অনেক মধ্যবিত্তের মতোই কাল্পনিক সাহেবের অবস্থাও করোনায় সঙ্গিন হয়ে উঠেছে৷ পরিবার নিয়ে কষ্টে থাকলেও সবাইকে তা বুঝতে দিতে চান না৷ তিনি যে বাঙালি মধ্যবিত্তদের একজন! লোকে কী বলবে, সেটাই তার কাছে বড়৷
আসছে কোরবানি
গতবছর অংশীদারদের সঙ্গে গরু কিনতে হাটে গিয়েছিলেন৷ লোকজনকে যেন বলতে পারেন সেজন্য গরুর ভাগা কিনতে সাধ্যের একটু বেশিই খরচ করেছিলেন৷ তাই গরু কিনে ফেরার পথে বুক ফুলিয়ে পথচারীদের গরুর দাম জানাতে জানাতে বাসায় ফিরেছিলেন৷ কিন্তু এবার কী হবে? ছবিটি প্রতীকী৷
কোরবানি দেবো, নাকি দেবো না
কাল্পনিক সাহেবের আর্থিক অবস্থা এখন এমন যে, কোরবানি না দিতে হলেই ভালো হতো৷ কিন্তু ঐ যে মধ্যবিত্ত মন! লোকজন কী বলবে, সেটা ভেবেই ঠিক করেছেন যে, যেমন করেই হোক কোরবানি দেবেন৷ তবে এবার বেশি টাকা খরচ করার সামর্থ্য নেই৷
আরেক চিন্তা
করোনার কারণে এবার ঢাকায় গাবতলী ও সারুলিয়ার দুটি স্থায়ী হাটসহ মাত্র ১২টি স্থানে হাট বসতে দেয়া হবে৷ তাই হাটে গিয়ে গরু-ছাগল কেনার চিন্তা বোধ হয় বাদ দিতে হবে৷ সেক্ষেত্রে অনলাইনে পশু কিনতে হবে৷ কিন্তু এর আগে কখনো অনলাইনে গরু কেনেননি কাল্পনিক সাহেব৷ তাই তিনি চিন্তিত৷ কারণ, তার মনে প্রশ্ন: অনলাইনে কেনা একটি পণ্য পছন্দ না হলে ফেরত দেয়া সম্ভব হলেও গরুর ক্ষেত্রে বিষয়টা কেমন হবে?
সরকারি, বেসরকারি ওয়েবসাইট
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে পশু কেনাবেচার জন্য ডিজিটাল হাট (https://foodfornation.gov.bd/qurbani2020/) চালু হয়েছে৷ এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনও একটি ডিজিটাল হাট (www.digitalhaat.net) চালু করেছে৷ বেসরকারি অনেক অনলাইন পোর্টালেও পশু কেনাবেচা হচ্ছে৷
দাম কি বেশি?
অনলাইনে গরু-ছাগল কেনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা কী বলছেন, সেদিকে খেয়াল রাখছেন কাল্পনিক সাহেব৷ এখন পর্যন্ত গরু-ছাগলের দাম একটু বেশি রাখা হচ্ছে বলে মনে করছেন ক্রেতারা৷ তবে করোনার সময়ে হাটে যেতে হবে না ভেবে স্বস্তিও পাচ্ছেন অনেকে৷ তাই একটু বেশি টাকা খরচ করতেও সমস্যা নেই তাদের৷ কিন্তু কাল্পনিক সাহেবের তো আর বেশি খরচ করার সামর্থ্য নেই৷ তার কী হবে?
মন্ত্রীদের খবর পড়ে স্বস্তি!
একদিন তিন মন্ত্রীর অনলাইনে গরু কেনার খবর পড়ে মনে যেন কিছুটা স্বস্তি (!) পেয়েছিলেন কাল্পনিক সাহেব৷ কারণ, মন্ত্রী হয়েও একজন মাত্র এক লাখ ২৮ হাজার টাকা, বাকি দুজন মাত্র এক লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন৷ এর মধ্যে একজন নিজের জন্য মাত্র ২০ শতাংশ মাংস রাখতে চেয়েছেন, আর আরেকজন পুরোটাই দান করতে চেয়েছেন৷ করোনার সময়ে নিজ দেশের মন্ত্রীদের এমন বদান্যতার খবরে স্বস্তি না পেয়ে উপায় আছে! আরও জানতে ‘+’-এ ক্লিক করুন৷
কেনার সময় সতর্কতা
কাল্পনিক সাহেব যেহেতু অনলাইনে গরু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাই এক্ষেত্রে কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, তা জানতে চান তিনি৷ ঢাকা উত্তর সিটির ‘ডিজিটাল হাট’-এর সঙ্গে সহযোগিতায় আছে ‘ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’৷ এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলছেন, এই হাটের মাধ্যমে পশু কিনলে তার দায়িত্ব ই-ক্যাব নেবে৷ এছাড়া বিশ্বাসযোগ্য ওয়েবসাইট থেকে গরু-ছাগল কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ভিন্ন অভিজ্ঞতা
করোনা সবার জন্য এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে৷ কাল্পনিক সাহেবও এবার প্রথমবারের মতো অনলাইনে গরু কিনতে চলেছেন৷ অভিজ্ঞতাটা যদি সুখের হয় তাহলে কে জানে ভবিষ্যতে হয়ত এটাই তার জন্য ‘নিউ নরমাল’ হয়ে উঠবে৷ সেক্ষেত্রে দাম বলে বুক ফোলানোর বিষয়টি রাস্তা থেকে ফেসবুকে চলে আসবে, এই আর কী৷ অবশ্য সেটা ভালোই হবে৷ কারণ রাস্তায় আর কয়জনকে দাম বলা যেত, ফেসবুকেতো তার চেয়ে বেশি মানুষকে জানানো যাবে!