কাশ্মীর ইস্যুতে বিজেপির ‘বাঙালি ছক’
১০ আগস্ট ২০১৯২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে নজরকাড়া ফল করার পর পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি৷ জয় শ্রীরাম স্লোগানকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে আক্রমণাত্মক প্রচার৷ এ বার তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া উগ্র জাতীয়তাবাদ৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রচারের একদিকে রয়েছে বাঙালি আবেগ এবং অন্যদিকে সংগঠনকে মজবুত করে তোলার উদ্যোগ৷
কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা রদ করার পর সবচেয়ে বেশি যে নামটি আলোচিত হচ্ছে, তা হল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়৷ ভারতীয় জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পুত্র৷ কাশ্মীরের জন্য বিশেষ মর্যাদা তিনি মেনে নিতে পারেননি৷ ১৯৫৩ সালে অনুমতি ছাড়া কাশ্মীরের প্রবেশ করে তাঁকে গ্রেপ্তার হতে হয়৷ বন্দি অবস্থায় কিছু দিনের মধ্যে মারা যান৷ বিজেপির সব স্তরের নেতাদের বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদি সরকার সাত দশক পর শ্যামাপ্রসাদেরই অপূর্ণ ইচ্ছাকে পূরণ করেছে৷
বিজেপির জয় শ্রীরাম স্লোগানের মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয় বাংলা স্লোগান তুলেছেন ধর্মীয় মেরুকরণ রোখার লক্ষ্যে৷ তার পাল্টা এ বার বিজেপি বাঙালি আবেগকে উস্কে দিতে হাতিয়ার করছে শ্যামাপ্রসাদকে৷ পণ্ডিত শ্যামাপ্রসাদ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ছিলেন৷ একজন বড় মাপের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তথা প্রথম কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য হলেও পশ্চিমবঙ্গে তিনি কখনই সেভাবে আলোচিত হননি৷
গেরুয়া শিবির বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের বড় শহরগুলিতে শ্যামাপ্রসাদের উপর আলোচনাসভার আয়োজন করবে৷ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী রিসার্চ ফাউন্ডেশন-এর অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রয়াত নেতার স্মৃতি বাঙালির মধ্যে জাগিয়ে তুলতে চান তারা৷ সেই লক্ষ্যেই আয়োজন করা হবে আলোচনাসভার৷ কাশ্মীরের সিদ্ধান্ত ঘোষণার দিনই দেখা গিয়েছে, বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা উল্লাসে মেতেছেন৷ কলকাতার রাস্তায় জাতীয় পতাকার নীচে ঠাঁই পেয়েছে শ্যামাপ্রসাদের ছবি৷
পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস কাশ্মীর সংক্রান্ত বিলের বিরোধিতা করেছে৷ সংসদে বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, কাশ্মীরের নেতা-নেত্রীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্র৷ গণতান্ত্রিক পথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পদক্ষেপ করা যেত৷ বিজেপি এই অবস্থানকে দেশবিরোধী তকমা দিয়ে জাতীয়তাবাদী প্রচারকে তুঙ্গে নিয়ে যেতে চায়৷
কাশ্মীর সংক্রান্ত ঘোষণার আগে থেকেই রাজ্যে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলছে৷ জেলায় জেলায় শিবির করে সদস্য সংগ্রহ করছেন বিজেপি নেতারা৷ ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর সদস্য সংগ্রহের মাত্রা বেড়েছে বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের৷ আগে ঠিক ছিল, ১১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই অভিযান৷ পরবর্তীতে অভিযান এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০ আগস্ট পর্যন্ত৷ এই অভিযানকে সামনে রেখে কাশ্মীর সিদ্ধান্তের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি৷
বিরোধীরা এই মুহূর্তে অনেকটাই ছত্রভঙ্গ৷ প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা বিজেপির পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন৷ পশ্চিমবঙ্গে বামেরা ক্রমশ পিছু হঠছে৷ এই পরিস্থিতি বিজেপির বিস্তারের পক্ষে অনুকূল৷ তাই সদস্য সংগ্রহের এটাই উপযুক্ত সময় বলে মনে করছে তারা৷ এরই মধ্যে কাশ্মীরের হাওয়া উঠে যাওয়ায় সহজেই অন্য দলের নেতা-কর্মীদের কাছে বার্তা দিতে পারছে নরেন্দ্র মোদির দল৷
বিজেপির এই জোড়া কৌশল সমাজ ও রাজনীতিতে প্রভাব ফেলছে৷ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হাফিজ মৈনুদ্দিনের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি বরাবরই শ্যা্মাপ্রসাদকে তাদের প্রচারে রাখে৷ তাঁর মতাদর্শ অনুসরণ করে৷ কাশ্মীরের সিদ্ধান্তের ফলে তারা শ্যামাপ্রসাদকে একেবারে সামনে নিয়ে এসেছে৷ এর মাধ্যমে বাঙালিদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ এ বারের নির্বাচনে মেরুকরণ হয়েছে৷ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিশানা করা হয়েছে৷ যে কোনো উপায়ে এ সব করার চেষ্টা হচ্ছে৷ কাশ্মীর তথা শ্যামাপ্রসাদ তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে''৷