কাশ্মীর ছাড়তে চান ভীত পণ্ডিতরা, শিবির সিল
২ জুন ২০২২গত তিনদিনের মধ্যে কাশ্মীরের কুলগামে দুইটি হত্যা হয়েছে। একজন স্কুল শিক্ষিকা এবং একজন ব্যাংক ম্যানেজারের। শুধু এই দুইটি হত্যাই নয়, কিছুদিন ধরে সন্ত্রাসীরা পণ্ডিত ও অ-কাশ্মীরিদের টার্গেট করেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের হিসাব হলো, জানুয়ারি থেকে ১৬জনকে হত্যা করা হয়েছে। এরপরই প্রায় চার হাজার পণ্ডিত হুমকি দিয়েছেন, সরকার যদি তাদের নিরাপত্তা না দিতে পারে, তাহলে তারা কাশ্মীর ছেড়ে চলে যাবেন।
তাদের দাবি, আপাতত, তাদের নিরাপদ কোনো জায়গায় নিয়ে যাওয়া হোক। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, শান্ত হলে, তারা আবার কাশ্মীরে ফিরবেন। এই চার হাজার পণ্ডিতকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্যাকেজ অনুযায়ী চাকরি দেয়া হয়েছিল।
এনডিটিভি-র রিপোর্ট অনুযায়ী, কাশ্মীরি পণ্ডিতরা যে ট্রানজিট ক্যাম্পে থাকেন, বুধবার সেই সব শিবিরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কাউকে সেখানে যেতে দেয়া হচ্ছে না। পণ্ডিতদেরও বেরোতে দেয়া হচ্ছে না। শ্রীনগরের পাশে ইন্দ্রনগর সহ অনেকগুলি শিবিরের ছবি একই।
সবচেয়ে বড় শিবির হলো ভেসু পণ্ডিত কলোনি। সেখানে কয়েকশ পণ্ডিত বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, স্লোগান দিয়েছেন। সেখানেও শিবিরের প্রধান দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এক বিক্ষোভকারী সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বলেছেন,''আমরা ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করব। তারমধ্যে সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিলে আমরা সবাই আবার ফিরে যাব।'' তিনি জানিয়েছেন, তারা ইতিমধ্যে লেফটন্যান্ট গভর্নর বা এলজি মনোজ সিনহার সঙ্গে দেখা করেছেন। সেখানে তাকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তারা উপত্যকায় ফিরতে চান না। তাদের আপাতত অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হোক। পুলিশের আইজি-ও বলেছেন, কাশ্মীরকে সন্ত্রাস-মুক্ত করতে একটু সময় লাগবে।
কুলগামে শিক্ষক ও ব্যাংক ম্যানেজারকে হত্যার পর পণ্ডিতরা ক্ষুব্ধ। নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে একজন বিক্ষোভকারী জানিয়েছেন, ''এক হাজার ২৫০ জন কাশ্মীরি পরিবারসহ শিবিরে আছেন। বাকি চার হাজার পণ্ডিত ভাড়াবাড়িতে থাকেন। সবাইকে নিরাপত্তা দেয়া অসম্ভব ব্যাপার। তাই একমাত্র সমাধান হলো, সবাই মিলে কাশ্মীর ছেড়ে চলে যাওয়া।'' পণ্ডিতদের অভিযোগ, তারা জম্মু চলে যেতে চান। কিন্তু তাদের যেতে দেয়া হচ্ছে না।
কাশ্মীরি পণ্ডিতরাই এখন অভিযোগ করছেন, বর্তমান সরকার পণ্ডিতদের কাশ্মীর-ত্যাগের দায় নিতে চায় না। তাই তাদের যেতে দেয়া হচ্ছে না। সেজন্যই শিবিরে কাশ্মীরিরা স্লোগান দিয়েছেন, 'প্রশাসন হায় হায়', 'সংখ্যালঘুদের বাঁচতে দাও', 'আমরা ন্যায় চাই' ইত্যাদি।
কাশ্মীরের সাংবাদিক রউফ ফিদার মতে, ''৩৭০ ধারা বিলোপের পর থেকে এই প্রবণতা শুরু হয়েছে। একটা প্রচার শুরু হয়েছিল যে, কাশ্মীরে এবার অ-কাশ্মীরিদের নিয়ে গিয়ে বসানো হবে। সন্ত্রাসীরা এখন বোঝাতে চাইছে, বিষয়টি অত সহজ নয়।''
তার মতে, ''সরকার যে দাবি করে, কাশ্মীরে সব স্বাভাবিক, এই সব হত্যা, পণ্ডিতদের চলে যাওয়ার ঘোষণা, তার উল্টো ছবিটাই স্পষ্ট করছে।''
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এনডিটিভি, দ্য স্ক্রল)