কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কাশ্মীরে ফেরানোর উদ্যোগ
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭তবে এ উদ্যোগের ভবিষ্যৎ নিয়ে শুরুতেই দেখা দিয়েছে প্রশ্ন৷
কথায় বলে ‘একেবারে না হবার চেয়ে দেরিতে হওয়াও ভালো'৷ ৯০-এর দশকে কাশ্মীরের অশান্ত,সহিংস পরিস্থিতি৷ প্রায় ছয়-সাত লক্ষ সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবার যাঁদেরকে ‘কাশ্মীরি পণ্ডিত' বলা হয়, প্রাণভয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়৷ তারপর ঝিলাম নদী বেয়ে বয়ে গেছে অনেক জল, কিন্তু কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঘরে ফেরা আর হয়নি৷ ২৬ বছর পর এখন কেন্দ্র ও জম্মু-কাশ্মীরের পিডিপি-বিজেপি জোট সরকারের চৈতন্য হয়েছে যে, তাঁদের স্বরাজ্যে সসম্মানে ফেরত আনা উচিত৷ কিন্ত পদনির্দেশিকা কী হবে ? বাস্তবতার ভিত্তিতে কিভাবে গ্রহণযোগ্য পুনর্বাসন কর্মসূচিই বা কী হবে? সেজন্য সরকারের তরফে প্রথমে এক অনুকূল বাতাবরণ তৈরি করা হবে উপত্যকায় এবং তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য রাজ্যের ১০টি জেলায় যে ১০০ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে৷ সেখানে তাঁদের জন্য গড়ে তোলা হবে উপযুক্ত পরিকাঠামো এবং কর্মসংস্থান৷ স্কুল পড়ুয়াদের জন্য দেওয়া হবে স্কলারশিপ৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি অঙ্গীকার করেছেন, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জন্য প্রথমে তৈরি করা হবে ৬০০০ ট্রানজিট শিবির৷
কিন্তু কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দাবি, জম্মু-কাশ্মীর থেকে কিছু এলাকা আলাদা করে পৃথক কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল গঠন করা হোক, যেটাকে তাঁরা বলছেন ‘মার্গদর্শন প্রস্তাব'৷ পানুন কাশ্মীর এবং নিখিল ভারত যুব কাশ্মীরি সমাজ নামে ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়া কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দুটি সংস্থার আরও দাবি, তাঁদের সার্বিক রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা নিয়ে মোদী সরকার তাঁদের নেতৃত্বের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট পথে আলোচনা শুরু করুক৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জীতেন্দ্র সিং জম্মুতে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের এক সম্মেলনে বলেন, তাঁদের স্বভূমির দাবি মেনে নিতে মোদী সরকারের আপত্তি নেই৷ তা সে কলোনি হোক বা উপনগরি হোক কিংবা স্বভূমি হোক৷ কাশ্মীরি পণ্ডিতরা যেটা চাইবেন, তাতেই মোদী সরকারের মত আছে৷
দিল্লির কাশ্মীরি গেজেট পত্রিকার প্রবীণ সম্পাদক সুশীল ভকিল, যিনি নিজেও কাশ্মীরি পণ্ডিত সমাজের একজন সদস্য, ডয়চে ভেলেকে এই প্রসঙ্গে যা বললেন, তাতে পুরো ছবিটাই গেল পালটে৷ বললেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীর থেকে সংখ্যালঘু হিন্দুদের জন্য আলাদা অঞ্চল গঠন করা যে সম্ভব নয়, সেটা স্পষ্ট করে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় জানিয়ে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং৷ আগেতে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সম্মেলনে তিনি কী বলেছিলেন সেটা বড় কথা নয়, সংসদে উনি যেটা বলেছেন সেটাই হবে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান৷ দ্বিতীয়ত, কাশ্মীরি মুসলিমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, কাশ্মীরে ফেরত আসতে হলে আগেকার মতো মুসলিমদের সঙ্গেই বসবাস করতে হবে৷ মধ্যপন্থী হুরিয়াত নেতা মিরওয়াজ ওমর ফারকও মনে করেন, কাশ্মীরি পণ্ডিত সমাজ কাশ্মীরি সংস্কৃতির অবিভাজ্য অঙ্গ৷ কাজেই তাঁদের ফেরত আসার কোনো শর্ত থাকতে পারে না৷
জানতে চাই তাহলে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিজের রাজ্যে ফেরা কিভাবে সম্ভব হবে? উত্তরে কাশ্মীর গেজেট পত্রিকার সম্পাদক বললেন, ‘‘কাশ্মীর উপত্যকায় শান্তি এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের জানমালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারলে আমাদের ফিরে যেতে আপত্তি থাকতে পারে না৷ কিন্তু সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি কি আমাদের জন্য আদৌ পালটেছে? দুদিন আগেও জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উপত্যকা৷ এটা তো চলছে লাগাতার৷ এই পরিস্থিতিতে কি পরিবার নিয়ে ফেরা যায়? যায় না৷ ২৬ বছর তো কেটে গেল নিজভূমে পরবাসী হয়ে বাস্তুহারা পরিবারের তকমা নিয়ে৷ দেখা যাক আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতে কী লেখা আছে৷''
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী