কাশ্মীরি যুব সমাজের মন জয় করতে রাজ্য সরকার ব্যর্থ
১১ অক্টোবর ২০১৬কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তিন তিনটা যুদ্ধ, নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, সীমান্ত পারের জঙ্গিদের সঙ্গে নিয়মিত গুলির লড়াই, কোনো কিছুই কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে পারছে না৷ কেন পারছে না, এটাই প্রশ্ন৷ গত রবিবার পুলিশের ছররা গুলিতে এক কিশোরের মৃত্যুকে ঘিরে পরিস্থিতি আবারো হয়ে ওঠে সহিংস৷ পাঁচটি থানা এলাকায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নতুন করে জারি করা হয় কারফিউ৷ তবে শ্রীনগর শহরের কেন্দ্রস্থল লালচক এলাকায় অবশ্য জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক৷
শান্তি ফেরাতে হলে ভূমিগত বাস্তবতার নিরিখে সমস্যার গভীরে গিয়ে এর কারণ বিশ্লেষন করতে হবে৷ অবলম্বন করতে হবে নয়া কৌশল৷ নইলে এই রক্তপাত থামার নয়৷ তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই সহিংসতা, ৭০ দিন ধরে চলা কারফিউ, নিরাপত্তা বাহিনীসহ হতাহতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলবে৷ এই লাগাতার সহিংসতার মূলে এক বড় ভূমিকা রয়েছে, বলা বাহুল্য, রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের, যাদের একটা বড় অংশ স্থানীয় জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের৷ ওই জঙ্গি সংগঠনটি গড়ে উঠেছিল ৮০-র দশকে আফগান জিহাদিদের প্রভাবে৷ লস্কর-ই-তৈয়বা কিংবা জয়সে মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ সংযোগ ছিল এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে হ্যাঁ, পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদত ছিল এবং আছে৷
এই হিজবুল মুজাহিদিনের প্রাণশক্তি কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়৷ এদের বেশির ভাগই শিক্ষিত বেকার৷ অথচ শান্তি প্রক্রিয়ার কোনো স্তরেই এদের কখনো সম্পৃক্ত করা হয়নি৷ এদের আস্থা অর্জনের চেষ্টাও করা হয়নি৷ আস্থা অর্জন কিভাবে হতে পারে? হতে পারে কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এবং উপযুক্ত যোগাযোগের সেতু গড়ে তুলে৷ মিডিয়া ব্ল্যাক-আউট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে, সোশ্যাল মিডিয়া জোরদার করে৷ মানাবাধিকারের নজীর রেখে, দমনপীড়ন আইন প্রত্যাহার করে৷
কাশ্মীরি যুব সমাজকে বোঝাতে হবে বুরহান ওয়ানি প্রকৃত অর্থে কে ? কী তাঁর পরিচয় ? চে গুয়েভারার তকমা দিলে কেন সেটা বিপ্লবের অপমান হবে সেটাও বোঝাতে হবে৷ সেই দিশায় যোগাযোগের পথে পা না বাড়িয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অটল বিহারি বাজপেয়ি, মনমোহন সিং এবং নরেন্দ্র মোদী৷ তার ফলাফল কী হয়েছে সেটা কারো অজানা নয়৷ তাই কাশ্মীর সংকটের জটিলতা দূর করতে প্রথমেই স্থানীয় কাশ্মীরি যুব সম্প্রদায়কে শান্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা জরুরি, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷ তবে ৯০-এর দশক থেকে যেভাবে তাঁদের মানসিকতা বদলে গেছে, বরং বলা উচিত বদলে দেওয়া হয়েছে, সেটা বিপরীতমুখি করে তোলা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হলেও তা করে দেখাতে হবে৷
কারণ বর্তমান আন্দোলন ৯০-এর দশকের তুলনায় ভিন্ন, সম্পূর্ণ স্থানীয়৷ ইনসানিয়াত, কাশ্মীরিয়াত বা জামহুরিয়াত বলাই যথেষ্ট নয়৷ কাশ্মীরের যুবমানসের গতিপ্রকৃতি বুঝে কাছে টানতে হবে৷ বৃহত্তর জনসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নয়৷ এই সত্যটার ওপর জোর দিতে বলেছেন রাজনৈতিক, মনস্তাত্বিক এবং সামাজিক বিশ্লেষকরা৷ জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং তাঁর উপদেষ্টারা বুঝে উঠতে পারেননি যে, কাশ্মীর রাজ্যের ভেতরে ভেতরে কী ঘটছে৷ দিল্লির কম্পাস কিভাবে, কোন দিকে ঘুরছে, সেটাও আন্দাজ করতে পারছেন না মেহবুবা সরকার৷ কাশ্মীরি যুব সমাজের মন জয় করতে কার্যত রাজ্য সরকার ব্যর্থ৷ সমস্যাটা এইখানেই৷