কাশ্মীরে প্রাণহানি
৯ জানুয়ারি ২০১৩মঙ্গলবার জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্জ জেলায় নিয়ন্ত্রণরেখার ভেতরে টহলরত দু'জন ভারতীয় সেনার পাকিস্তানি সেনার গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনাকে ‘‘প্ররোচনামূলক'' বলেই দেখছে ভারত৷ শুধু তাই নয়, মৃত সেনার লাশকে বিকৃত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই ঘটনাকে অমানবিক এবং অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেন৷ দিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে বিদেশ মন্ত্রকে ডেকে পাঠিয়ে এ বিষয়ে ভারতের কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো হয়৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমান খুরশিদ বলেন, এই ঘটনাকে বাড়তে দেয়া হবে না, যেভাবেই হোক৷ পাকিস্তানকে সেই বার্তাই দেয়া হয়েছে৷ পাকিস্তানের কাছ থেকে উত্তরের অপেক্ষা করা হচ্ছে এ মুহূর্তে৷ তবে পাকিস্তান সরকারের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয় যে, নিয়ন্ত্রণরেখায় পর্যবেক্ষণ চালিয়ে এই ধরণের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ ভারতের যদি সন্দেহ থাকে তাহলে তারা তৃতীয়পক্ষ বা নিয়ন্ত্রণরেখায় মোতায়েন জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের দিয়ে তদন্ত করাতে পারে৷
প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ আলাদা আলাদাভাবে চেয়ে পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতীয় নিরাত্তা উপদেষ্টা, সেনাবাহিনীর প্রধান এবং সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের কাছে৷ এ নিয়ে বৈঠক হবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটিতে৷
এই ঘটনা কিন্তু ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিতটা নাড়িয়ে দিয়েছে৷ আস্থাবর্ধক পদক্ষেপে আবারো বড় বাধা দেখা দিতে পারে৷ যেমনটা হয়েছিল, ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধের পর, ২০০১ সালে ভারতীয় সংসদ ভবনে জঙ্গি হামলার পর, অথবা ২০০৮ সালে মুম্বই সন্ত্রাসী হামলার পর৷ সে সময়ে থেমে গিয়েছিল দু'দেশের মধ্যকার সম্পর্ক৷ যাতে গতি আনতে নেয়া হয়েছিল বিভিন্ন আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ৷ যেমন অস্ত্রবিরতি, ভিসার নিয়ম শিথিল করা, ভারতকে সব থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের মর্যাদা দেয়া ইত্যাদি৷
কেন হচ্ছে এটা বারবার? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ বছরেই পাকিস্তানে নির্বাচন৷ আর তাতে শাসক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি বা পিপিপি'র জেতার সম্ভাবনা ক্ষীণ৷ তাই ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বাড়িয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে পারেন জারদারি সরকার৷ কারণ, ভারতবিদ্বেষ শাসক দলের একটা পরিচিত রাজনৈতিক হাতিয়ার৷
অন্যদিকে, এই ঘটনায় মনমোহন সিং সরকারও পড়বেন বিপাকে৷ বিরোধীদল সরকারকে চেপে ধরবে সরকারের নরম বিদেশ নীতির জন্য৷ ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি শোনা যাচ্ছে৷ কাজেই ভারতকে এমন এক কূটনীতি গ্রহণ করতে হবে যাতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দেয়া যায়, বলছেন বিশ্লেষকরা৷