‘কিয়েভের ভূত’ ফাইটার পাইলটের সত্য-মিথ্যা
২ মার্চ ২০২২ঐ পাইলট মিগ-২৯ বিমান চালান বলে মনে করা হচ্ছে৷
সামাজিক মাধ্যমে নীচের ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে৷ ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ‘ইউক্রেনলাইভ’ নামের এক টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়৷ এতে বলা হয়, আজ (শুক্রবার) কিয়েভের আকাশে ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর একটি মিগ-২৯ রাশিয়ার বিমানবাহিনীর এসইউ-৩৫ ফাইটার জেটকে গুলি করা ফুটেজ এটি৷
ইউক্রেনলাইভ টুইটার অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি প্রকাশের আগের দিন বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি হেলিকপ্টার ভূপতিত করার দাবি করেছিল ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী৷ একই দিন রাশিয়া ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অকার্যকর করে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছিল৷
কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে ভিডিওটি আসলে ‘ডিজিটাল কমব্যাট সিমুলেটর ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি ভিডিও গেমের সিকোয়েন্স৷ ২৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ইউটিউবে যিনি ভিডিওটি আপলোড করেছেন তিনি লিখেছেন, ‘‘এই ফুটেজটা ডিসিএস থেকে নেয়া, তবে এটি ‘কিয়েভের ভূতকে’ সম্মান জানাতে করা হয়েছে৷’’
ডিজিটাল কমব্যাট সিমুলেটর ওয়ার্ল্ড গেমের একজন মুখপাত্র ফুটেজটি তাদের গেমের সিকোয়েন্স বলে রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে৷
সাবেক প্রেসিডেন্টের টুইট
২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন পেট্রো পোরোশেঙ্কো৷ তিনি ককপিটে হেলমেট পরে থাকা এক পাইলটের ছবি ২৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার টুইটারে প্রকাশ করে বলেন, ইনিই ‘কিয়েভের ভূত’৷ তিনি আরও লেখেন, এমন শক্তিশালী ব্যক্তিরা থাকলে ইউক্রেন অবশ্যই বিজয়ী হবে৷
আসলে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ছবিটি তিন বছর আগে প্রকাশ করেছিল৷ নতুন হেলমেট পরে একটি টেস্ট ফ্লাইট পরিচালনার সময় ছবিটি তোলা হয়েছিল৷ ফলে ছবির ব্যক্তিটি যদি আসলেই সেই রহস্যময় পাইলট হয়ে থাকেন, তবুও ছবিটি পুরনো৷
হঠাৎ নায়ক বুয়েনস আইরেসের আইনজীবী
সামাজিক মাধ্যমে কিয়েভের ভূতের নামও প্রকাশিত হয়েছে৷ বলা হয়েছে তার নাম ভ্লাদিমির আবদোনভ৷ নীচের ছবিটি দেখুন৷
এবার নীচের ছবিটি দেখুন৷ ইমেজ প্রসেসিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে নয়েজ অ্যানালিসিস করলে কোনো ছবিতে পরিবর্তন আনা হলে তার চিহ্ন দেখা যায়৷ নীচের ছবিটি খেয়াল করে দেখুন, ঐ পাইলটের মুখ, পোশাকের ব্যাজ ও ব্যাকগ্রাউন্ডে ইউক্রেনের পতাকা যোগ করার প্রমাণ দেখা যাচ্ছে৷
একই ছবিতে রিভার্স ইমেজ সার্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবিটি যে ভুয়া, তার আরও প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ ছবিটি কয়েক বছর আগে অনলাইনে আপলোড করা হয়েছিল৷ সেখানে আলাদা মাথা, আলাদা ব্যাজ দেখা গেছে৷ এবং কোনো পতাকা ছিল না৷
পাইলটের পেছনের বিমানটি আরেকটু ভালো করে খেয়াল করলে বোঝা যায় সেটি আসলে রয়েল ক্যানাডিয়ান এয়ার ফোর্সের বিমান৷
এবার নীচের ছবিটি দেখুন৷ বামের ছবিটি ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর প্রকাশ করা৷ এতে ইউক্রেনের মেরিন ভিটালি স্কাকুনকে দেখা যাচ্ছে৷ রাশিয়ার ট্যাঙ্কের আগমন থামাতে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি ব্রিজ উড়িয়ে দিয়েছিলেন৷ সে কারণে তাকে ‘হিরো অফ ইউক্রেন’ উপাধি দেয়া হয়েছে৷
উপরের ছবির ডানপাশের ছবিটি ভুয়া৷ স্কাকুনের ছবিতে মাথা কেটে আরেকজনের ছবি বসানো হয়েছে৷ কিন্তু কার মাথা? সেটা জানা গেছে নীচের টুইট থেকে৷
টুইটটি করেছেন আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসের একজন আইনজীবী৷
‘কিয়েভের ভূতের’ আসল পরিচয় জানতে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছিল ডয়চে ভেলে৷ এখনও উত্তর পাওয়া যায়নি৷
ইনেস আইজেলে, মিশেল পেঙ্কে, ব়্যাচেল বেইগ/জেডএইচ