কী উদ্দেশ্যে জঙ্গি হামলা, কেন এই চরমপন্থা?
৯ জুন ২০১৬গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে জঙ্গিদের পরিচিত স্টাইলে মোট ৪৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যাতে নিহত হন ৪৮ জন৷ এদের মধ্যে দু'জন পুলিশ সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীও আছেন৷ গত আড়াই মাসে হত্যা করা হলো ১১ জনকে৷ এ সব হামলার অনেকগুলোরই দায় স্বীকার করেছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস ও আল-কায়েদার ভারতীয় উপ-মহাদেশের কথিত বাংলাদেশ শাখা আনসার আল-ইসলাম৷
গত রবিবার চট্টগামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে হত্যার পর পুলিশ জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার করেছে৷ এরইমধ্যে গত তিনদিনে মোট ছয় ‘জঙ্গি' পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুক যুদ্ধ' বা ‘ক্রস ফায়ারে' নিহত হয়েছেন৷ তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর নেতা-কর্মী বলে দাবি করছে পুলিশ৷
বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘‘চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার৷ তবে এ ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক না কেন, তাকে খুঁজে বের করা হবে৷''
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘এ সব ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কাউকে আটক করার পর যখন তথ্য পাই, তখনই বলি৷ একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না আমি ‘হেড অফ দ্য গভর্নমেন্ট'৷ আমার কাছে নিশ্চয়ই সব তথ্য আছে৷ তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছু প্রকাশ, প্রচার করা যায় না৷ কিন্তু সূত্র জানা যায়৷ আমরা সেই সূত্র ধরেই কথা বলি৷''
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘যারা মনে করেন বিএনপি-জামায়াতকে রাজনৈতিক কারণে দায়ী করছি, তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলব, তারা যদি জানেন এ সব গুপ্তহত্যার সঙ্গে কারা জড়িত তাদের নাম ঠিকানা দিন, আমরা কাউকে ছাড় দেবো না৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যখনই এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে, কোনো না কোনোভাবে দল দু'টির যোগসূত্র পাওয়া গেছে৷''
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘...এমন মানুষকে মারা হচ্ছে যাতে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়, মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি হয়৷''
এ প্রসঙ্গে নিরপাত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহেদুল আনাম খান (অব.) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাছে তথ্য বা খবর থাকার কথা বলেছেন৷ এখন এইসব তথ্য বা খবর প্রমাণসাপেক্ষ৷ যদি এ ধরনের প্রমাণ থাকে তাহলে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা উচিত দ্রুত৷''
তিনি বলেন, ‘‘এইসব হামলার মূল উদ্দেশ্য কী? এর রাজনৈতিক লক্ষ্য কী? তা স্পষ্টভাবে জানা প্রয়োজন৷ কারণ এই হত্যার মাধ্যমে নিশ্চয়ই তারা একটি লক্ষ্য অর্জন করতে চায়৷ আমরা আশা করব প্রধানমন্ত্রী কোনো রাজনৈতিক কথা বলেননি৷ তিনি যা বলেছেন তা বাস্তব হলে সেই তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীরা আটক হবে বলে আশা করি৷''
শাহেদুল আনাম খান বলেন, ‘‘গত কয়েকদিন ধরে জঙ্গিরা তাদের তৎপরতা চূড়ান্ত মাত্রায় নিয়ে গেছে৷ এর বিপরীতে ক্রসফায়ারে আমরা জঙ্গি নিহত হওয়ার খবর পাচ্ছি৷ কিন্তু জঙ্গি দমনে পুলিশের সার্বিক তৎপরতা আশাব্যঞ্জক নয়৷ দেশে এক ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে৷ সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত৷ তাই কথা নয় প্রধানমন্ত্রীর কথার কাজে প্রমাণ দেখতে চাই৷''
এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ উল আলম লেনিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মাজাভাঙা জঙ্গিরা এই হামলা চালাচ্ছে তা বিশ্বাস করা যায় না৷ তাদের পিছনে রাজনৈতিক শক্তি আছে৷ তাই এখন তারা গুপ্তহত্যায় নেমেছে৷ শুধু লেখক, ব্লগার বা ভিন্ন ধর্মের মানুষ নয়, তাদের টর্গেট সবাই৷ কারণ তারা দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করতে চায়৷ এইসব হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য বাংলাদেশে বিদেশি শক্তি যেন হস্তক্ষেপ করে৷''
তিনি বলেন, ‘‘২০০৪ সালে ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জঙ্গিরা যেমন জড়িত তেমনি বিএনপি-জামায়াতও জড়িত৷ তদন্তে তা জানা গেছে৷ সুতরাং পরিস্থিতি এখনও সেরকমই৷ খালেদা জিয়া এবং তাঁর প্রবাসী ছেলে তারেক রহমান দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে৷ আর যুদ্ধপরাধীদের দল এখন শেষ কামড় দিতে চাইছে৷ বিষয়টি তাই খুবই স্পষ্ট যে কারা এই হামলা এবং নাশকতার সঙ্গে জড়িত৷''
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘‘অবশ্যই অপরাধীরা ধরা পড়বে এবং তাদের আইনের আওতায় আনা হবে৷ কারণ তাদের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স' নীতি অবলম্বন করছে৷''