‘কী ছিল সাগর সরওয়ারের ল্যাপটপে?’
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি খুন হওয়ার পর বাসা থেকে তেমন কিছুই খোয়া যায়নি৷ শুধু দু'টি মোবাইল ফোন এবং দু'টি ল্যাপটপ পাওয়া যায়নি৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার কেন্দ্রে এখন খোয়া যাওয়া ঐ দু'টি ল্যাপটপ৷
বর্তমানে দেশের অন্যতম আলোচিত এই মামলাটির তদন্ত করছে ‘ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যটেলিয়ন' সংক্ষেপে ব়্যাব৷ তদন্তকারী সংস্থার মুখপাত্র লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তদন্তের শুরু থেকেই আমরা ল্যাপটপ দু'টি খুঁজছি৷ কিন্তু ল্যাপটপের কোনো ‘ক্লু' পাওয়া যায়নি৷ ফলে গত ৮ই জানুয়ারি আদালতের অনুমতি নিয়ে আমরা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দিয়েছি৷ তাদের কাছে ল্যাপটপের ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে৷ গত ২৯শএ জানুয়ারি বিটিআরসি সবগুলো মোবাইল ফোন কোম্পানিকে চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দিয়েছে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো মোবাইল ফোন কোম্পানি তথ্য দিতে পারেনি৷''
প্রশ্ন উঠেছে কী ছিল সাগরের ল্যাপটপ দু'টোয়? সাগরের অন্যতম ঘনিষ্ট বন্ধু, একসঙ্গে এনার্জি সেক্টরে একসঙ্গে কাজ করা সহকর্মী এবং বর্তমানে ‘সমকাল'-এর সিনিয়র রিপোর্টার রফিকুল বাসার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাগর ভাই নিহত হওয়ার ঠিক চার দিন আগে আমার সঙ্গে তাঁর লম্বা সময় আলোচনা হয়েছে৷ আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল তাঁর একটি বই৷ এর আগে ‘সাম্প্রতিক' থেকে সাগর ভাইয়ের একটি বই বের হয়েছে৷ বইয়ের নাম ‘কর্ণেলকে আমি মনে রেখেছি'৷ চার দিন আগের ঐ আলোচনায় সাগর ভাই আমাকে বলেন যে, বইটির পরবর্তী সংস্করণের লেখা তাঁর শেষ হয়েছে৷ এবারের বইমেলাতেই বইটা বের করতে চান তিনি৷'' বইয়ের বিষয়স্তু সম্পর্কে সাগর ভাই বলেন, পার্বত্য এলাকার আদিবাসীদের নিয়ে তাঁর এই লেখা৷ কয়েকদিনের মধ্যেই পান্ডুলিপি আমার কাছে দিতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু তার আগেই তো তিনি পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন৷''
রফিকুল বাসার বলেন, ‘‘বইয়ের পান্ডুলিপি ছাড়াও সাগর ভাইয়ের অভ্যাস ছিল ব্যক্তিগত ডায়েরি লেখা৷ একই সঙ্গে তিনি ব্লগও লিখতেন৷ তাঁর ল্যাপটপ দু'টির মধ্যে একটি বড় সাইজের এবং অপরটি ছোট আকারের৷ বড় ল্যাপটপটি তিনি জার্মানিতে ডয়চে ভেলেতে কাজ করার সময় কিনেছিলেন৷ আর ছোটটি দেশে ফেরার পর কেনেন৷ ছোট ল্যাপটপটি তিনি সব সময় সঙ্গে রাখতেন৷ এছাড়া ল্যাপটপে তাঁর বিভিন্ন সময় করা রিপোর্টগুলোও রেখে দিতেন৷ নতুন কোনো তথ্য পেলেও সঙ্গে সঙ্গে সংযোজন করতেন নিজের ল্যাপটপে৷''
সাগর-রুনি হত্যা মামলার বাদি রুনির ভাই নওশের আলম রোমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ল্যাপটপের বিষয়টি নতুন কিছু নয়৷ এর আগে ডিবি ও ব়্যাবকে আমরা ল্যাপটপ দু'টির সব কাগজপত্র দিয়েছি৷ আমরা ঐ ল্যাপটপ দু'টি সম্পর্কে যা জানি তাও বলেছি৷ কিন্তু ব়্যাব কিছুই করেনি৷ আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও রাখেনি৷''
কী ছিল সাগরের ল্যাপটপে, এ বিষয়ে কী কিছু জানেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নওশের বলেন, ‘‘সাগর ভাইয়ের ল্যাপটপ দু'টি ছাড়াও ঐ বাসায় কিন্তু আরও একটি ল্যাপটপ ছিল৷ সেটি অবশ্য নষ্ট৷ ঐ নষ্ট ল্যাপটপটা পাওয়া গেছে৷ শুধু ভালো ল্যাপটপ দু'টি খোয়া গেছে৷ সাগর ভাইয়ের ল্যাপটপে তাঁর সর্বশেষ বইয়ের একটা পান্ডুলিপি ছিল৷ এটি আসলে তাঁর আগের বই ‘কর্ণেলকে আমি মনে রেখেছি'-র পরের সংস্করণ৷ এটি পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে লেখা৷ এর পাশাপাশি ব্যক্তিগত ডায়েরি ও বিভিন্ন ধরনের ব্লগও লিখতেন সাগর ভাই৷''
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ৫৮/এ/২, রশিদ লজ অ্যাপার্টমেন্টের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়৷ এ ঘটনায় রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান বাদি হয়ে শেরেবাংলানগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন৷ এ মামলাটি বর্তমানে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ব়্যাব তদন্ত করছে৷