1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘কী তদন্ত হচ্ছে, কিছুই তদন্ত হচ্ছে না’

৭ নভেম্বর ২০১৭

ব্লগার ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায়কে কারা হত্যা করেছে, কেন হত্যা করেছে এবং কীভাবে হত্যা করেছে – তা জানার দাবি করেছে পুলিশ৷ তবে অভিজিতের বাবার কথায়, ‘‘কী তদন্ত হচ্ছে? কিছুই তদন্ত হচ্ছে না৷''

https://p.dw.com/p/2nBdR
ছবি: bdnews24.com

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আবু সিদ্দিক ওরফে সোহেল নামে একজন সদস্যকে আটকের পর পুলিশ বলছে, ‘‘অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ‘মোটিভ', এর সঙ্গে কারা জড়িত এবং তাঁকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে – এই পুরো বিষয়টি এখন তদন্তকারীদের কাছে পরিষ্কার৷'' প্রসঙ্গত, সোমবার ঢাকায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এই সদস্যকে আটক করা হয়৷

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সিসিটিভির ফুটেজ ধরে যে ছ'জনকে চিহ্নিত করেছিলাম তাদের মধ্যে একজন হলো আবু সিদ্দিক সোহেল৷ আমরা এর আগে ঐ ছ'জনের মধ্যে আরো একজনকে গ্রেপ্তার করেছিলাম৷ পরে সে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়৷ এখন বাকি চারজনকে আমরা গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি৷''

তিনি জানান, ‘‘আবু সিদ্দিক সোহেল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে৷ তার জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের ‘মোটিভ', কারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং কীভাবে এ হত্যার পরিকল্পনা হয়েছিল – তা আমরা জানতে পেরেছি৷ এখন সেই জবানবন্দি ধরেই আরো তদন্ত এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে৷''

অজয় রায়

মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা এখন নিশ্চিত যে অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জড়িত৷ তাদের ‘স্লিপার সেল' এই হত্যাকাণ্ড ঘটনায়৷ এদের আরো নানা ইউনিট কীভাবে অংশ নেয়, তাও আমরা জেনেছি৷ তবে সমস্যা হচ্ছে আমরা যেসব নাম জেনেছি, তা প্রকৃত নাম কিনা তা নিয়ে৷ কারণ এরইমধ্যে আমরা জানি যে এ ধরনের জঙ্গিদের একাধিক নাম থাকে এবং তারা বার বার নাম পরিবর্তন করে৷ এই হত্যাকাণ্ডে আট থেকে দশজন অংশ নেয় জানা গেছে৷ আবু সিদ্দিকেরও একাধিক নাম রয়েছে৷ এই যেমন, আবু সিদ্দিক ওরফে সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে সাহাদ৷

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে সিসিটিভির ফুটেজ ধরে শরিফুল ইসলাম ওরফে মুকুল রানাকে গত বছর খিলগাঁওয়ে আটকের করা হলেও, পরে সে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়৷ এই মামলায় আরো সাতজনকে গত দু'বছরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তবে  সিসিটিভির ফুটেজ ধরে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আবু সিদ্দিক ও বন্দুক যুদ্ধে নিহত শরিফুল ইসলাম – এই দু'জনই পুলিশের হাতে আটক হয়৷

আবু সিদ্দিক তার জবানবন্দিতে বলে, ‘‘অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক প্রধান জিয়া ‘স্পট'-এ ছিল৷ সে-ই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তদারক করেছে৷ জিয়াসহ মোট ন'জন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়৷ এদের মধ্যে চারজনের দায়িত্ব ছিল সরাসরি অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করা৷ আর বাকি চারজনের দায়িত্ব ছিল অভিজিৎকে অনুসরণ করা৷ জবানবন্দিতে আবু সিদ্দিক নিজেকে অভিজিতের অনুসরণকারী বলে দাবি করে৷''

মাসুদুর রহমান

যে চারজন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়, তারা প্রথমে বইমেলার বাইরেই অবস্থান করছিল৷ আবু সিদ্দিক নিজে তিন সহযোগী নিয়ে বইমেলার ভেতরে গিয়ে অভিজিতকে অনুসরণ করে৷ সে সময় টিএসসির আশেপাশেই অবস্থান করে মেজর জিয়া ও শরিফুল ইসলাম ওরফে মুকুল রানা৷ পরে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর দলের সদস্যরা টিএসসির একটু উত্তর দিকে ফুটপাতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে হত্যা করে অভিজিতকে৷

মামলার তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্র জানায়, ‘২০১৪ সালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেয়া আবু সিদ্দিক-এর সঙ্গে জিয়ার প্রথম একটি ট্রেইনিং সেন্টারে দেখা হয়৷ অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের আগে অন্তত চারদিন সে বইমেলায় গিয়ে অভিজিতকে অনুসরণ করে৷''

নতুন আসামি গ্রেপ্তারের ব্যাপারে অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি শুনেছি আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ কিন্তু পুলিশ আমাকে জানায়নি৷'' তদন্তে সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সন্তুষ্টির তো আর শেষ নাই৷ যেদিন প্রকৃত অপরাধীরা ধরা পড়বে, বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে, উপযুক্ত শাস্তি পাবে, সেদিন আমার সন্তুষ্টি৷''

অধ্যাপক অজয় রায় তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে বলেন, ‘‘তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে আর কী বলবো? দু'বছর ধরে শুনছি তদন্ত হচ্ছে৷ কিন্তু কী তদন্ত হচ্ছে? কিছুই তদন্ত হচ্ছে না৷ আমি বলবো, হয় তারা ইচ্ছা করে অপরাধীদের ধরছে না অথবা তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতার অভাব রয়েছে৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘পুলিশও আর যোগাযোগ করে না৷ বরং আমি নিজেই তদন্তকারীদের সঙ্গে চার-পাঁচবার দেখা করতে গেছি৷ কিন্তু তাঁরা আমাকে দেখলেই বিব্রত হয়, অস্বস্তি বোধ করে৷ বলে স্যার, আমাদের তদন্ত চলছে৷''  প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সস্ত্রীক বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় টিএসসির সামনে অভিজিৎ রায় ও তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা৷এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান অভিজিৎ এবং গুরুতর আহত হন তাঁর স্ত্রী বন্যা৷

অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন৷ কিন্তু পুলিশ এখনো আদালতে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি৷ এ পর্যন্ত ২৭ বার আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সময় নিয়েছেন তদন্তকারীরা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান