1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কুমিল্লায় পুলিশের বিরুদ্ধে কাজে গাফিলতির অভিযোগ

১৫ অক্টোবর ২০২১

একটি মন্দিরের দেয়াল টপকাতে না পারায় হামলাকারীরা দুইবার ফিরে যেতে বাধ্য হয়৷ তৃতীয়বার মই নিয়ে এসে ঢুকে পড়ে তারা৷ চার ঘণ্টায় তারা সফল হলেও ওই সময়ে পুলিশ আসতে পারেনি৷

https://p.dw.com/p/41iYw
Bangladesch Angriffe auf Hindu-Tempel während Durga-Puja-Feierlichkeit
ছবি: bdnews24.com

চাঁন্দমনি কালী মন্দির কমিটির নেতারা ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত তিন দফায় মন্দিরে হামলা হলেও ফোন করে দীর্ঘ সময় পুলিশের সাহায্য পাওয়া যায়নি। একই অভিযোগ শহরের আরো দুটি মন্দির কমিটির।

বৃহস্পতিবার কুমিল্লার মন্দিরগুলো পরিদর্শনে যান জা্তীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক। কালীগাছ তলা মন্দির প্রাঙ্গণে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘সব মন্দিরেই একই অভিযোগ যে পুলিশ আসেনি। মন্দিরের ভক্তরা বলছেন, সকাল থেকে যখন একের পর এক হামলা হচ্ছে, তখন তারা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু পুলিশ আসেনি।

‘‘চাঁন্দমনি কালী মন্দিরে মই দিয়ে টপকে ভেতরে ঢুকে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে চার ঘণ্টায়ও পুলিশ আসেনি।’’

তবে মন্দিরে পুলিশের না যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।

বৃহস্পতিবার বিকালে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘মণ্ডপগুলোতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। আনসাররাও টহলে ছিল।’’

কোরান অবমাননার কথিত অভিযোগে বুধবার সকালে প্রথমে হামলা হয় কুমিল্লার নানুয়া দীঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে। এরপর আরো মণ্ডপে হামলা হয়।

কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিবু প্রসাদ দত্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুধবার কুমিল্লায় মোট আটটি মন্দিরে হামলা চালানো হয়। এই ঘটনার জের ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও মন্দিরেও হামলা হয়।

এক মন্দিরে চার ঘণ্টায় ৩ হামলা

নানুয়া দীঘি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে শহরের চকবাজার এলাকায় (কাপুড়িয়াপট্টি) শত বছরের পুরনো চাঁন্দমনি রক্ষাকালী মন্দির। সেখানে সকাল ১১টার সময় প্রথম হামলা হয়েছিল।

মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারাধন চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘প্রথম দফায় হামলার চেষ্টা হয়। তবে ফটক টপকে তারা ঢুকতে পারেনি। সাড়ে ১২টার দিকে আরেকবার হামলার চেষ্টা করে তারা। কিছুক্ষণ ঢিলাঢিলি করে চলে যায়। এরপর বেলা ৩টার দিকে তারা মই, হাতুড়ি, পেট্রোল নিয়ে চুড়ান্ত হামলা চালিয়ে সব ভেঙেচুড়ে, পুড়িয়ে চলে যায়।’’

হারাধন চক্রবর্তী আরো বলেন, ‘‘আমি সদর থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) সঙ্গে কথা বলেছি প্রথম দফা হামলা চেষ্টার পর ১১টার দিকে। তিনি বললেন, ‘ফোর্স পাঠাবেন'। তবে সেই ফোর্স আসেনি।’’

এরপর বেলা আড়াইটার দিকে আবারও পুলিশের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন হারাধন, তবে তাতেও ফল হয়নি বলে তার অভিযোগ।

হারাধন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘৩টার পর ফটকে মই লাগিয়ে হামলাকারীরা মন্দিরে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়ে নির্বিঘ্নে বের হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মন্দিরে আসেন। পুলিশ সুপার কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও আনসার সদস্যকে এখানে পাহারায় রেখে যান।’’

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা থেকে চাঁন্দমনি মন্দিরের দুরত্ব এক কিলোমিটারের কম। আধা কিলোমিটার দূরেই চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ি। পুলিশ লাইনও খুব বেশি দূরে নয়।

চাঁন্দমনি মন্দির কমিটির সদস্য বিপ্লব ধর বলেন, হামলার পর মন্দির কমিটির নেতারা পুলিশ ও স্থানীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করেও শুধু ‘পুলিশ আসছে' এই আশার বাণীই শুনেছেন তারা।

‘‘শেষে যখন হামলাকারীরা মই নিয়ে আসল, তখন আমি নিজে ৯৯৯ এ ফোন করি। একজন মহিলা ফোন ধরল। আমি কইলাম, ম্যাডাম আমাগো বাঁচান। তিনি বললেন, ‘চিন্তা কইরেন না ব্যবস্থা নিতেছি’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব ভাইঙা-চুইড়া হ্যাতেরা চইলা গেল। কাউরে না পারলাম চিনতে, না পারলাম একজনরে ধইরা-বাইন্দা রাখতে।’’

স্থানীয়দের প্রতিরোধ

শহরের সালাহউদ্দীন রোডে কালীগাছতলা মন্দির কমিটির সহ সভাপতি সজল কুমার চন্দ বলেন, বেলা আড়াইটার দিকে তাদের মন্দিরে হামলা হয়। এর আগে থেকে তিনি নিজে কয়েক দফা পুলিশের সাহায্য চেয়ে ফোন করেছেন। কিন্তু কেউই আসেনি।

পাড়ার তরুণরা একত্রিত হয়ে মন্দির রক্ষায় এগিয়ে এসেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, হামলাকারীরা মন্দির প্রাঙ্গণ ও আশপাশের বসতবাড়িতে হামলা চালালেও তালা মেরে রক্ষা পায় মূল মন্দির ও প্রতিমা।

মাস্টারপাড়া এলাকার বাসিন্দা শিল্পী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পাড়ার ছেলেরা সবাই মিলে প্রতিরোধ করেছে বলে রক্ষা।’’

কালীগাছতলা মন্দির কমিটির তরুণ সদস্য রানা চক্রবর্তী, বাপ্পী দাস জানান, তারা যখন একত্রিত হয়ে হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, তখন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একরামুল হোসেন বাবুও তাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনিও বারবার পুলিশকে কল করছিলেন। তবে পুলিশ এসেছে হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর।

কাউন্সিলর একরামুল হোসেনের দাবি, তিনি হামলাকারীদের ঠেকাতে তার কর্মীদের নিয়ে ছিলেন। এ সময় সহায়তা চেয়ে তিনি প্রথমে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিট পুলিশের ইনচার্জকে ফোন করেন। এরপর ফোন করেন কান্দিরপাড় ফাঁড়ির ইনচার্জকে। তারা দুজনই কোতয়ালি থানার ওসিকে ফোন করতে বলেন। তবে ওসিকে তিনি পাননি।

একরামুল হোসেন বলেন, ‘‘ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় হামলাকারীদের ইটের আঘাত লাগে তার কোমরে। কোমর ব্যথায় এখন শয্যাশায়ী তিনি।

এদিকে মন্দিরে হামলার অভিযোগে যে মামলাগুলো হয়েছে, তার একটিতে কাউন্সিলর একরামুলকেও আসামি করা হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।

এ বিষয়ে একরামুল বলেন, ‘‘একজন ফোন করে মামলার কথা জানিয়ে পালাতে বলেছে। তবে আমি এখন বিছানা থেকেই উঠতে পারছি না।’’

সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কুমিল্লার নানুয়া দিঘীর পাড় পূজা মণ্ডপ পরিদর্শনে এসে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। 

জেলা প্রশাসনের বক্তব্য

কুমিল্লার সার্বিক বিষয়ে বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান ও পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কুমিল্লায় মন্দিরে হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। চারটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ৪১ জনকে।

ফেসবুকে নানুয়া দীঘি মন্দিরের ভিডিও পোস্টকারী রঘুরামপুরের ফয়েজ আহমেদকে মনোহরপুর এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার আটক করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘‘কুমিল্লা ছাড়াও দাউদকান্দি ও সদর দক্ষিণে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটে। এর বাইরে আর কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’’

‘‘দয়া করে ফেসবুকের গুজবে কান দেবেন না,’’ বলেন তিনি।

এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)  

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান