কুড়ির অনেক বেশি যৌন নির্যাতনের তথ্য
২৮ জুন ২০১৯ধারণা করা হচ্ছে ২০ জন নয় আরো অনেক বেশি শিক্ষার্থী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি কান্দাপাড়ার ‘অক্সফোর্ড হাইস্কুল' নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অংক ও ইংরেজি শিক্ষক আরিফুল ইসলাম (৩০) ও প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জুলফিকারকে (৫৫) বৃহস্পতিবার বিকেলে আটক করে র্যাব৷ আরিফুল ইসলাম সরাসরি ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত৷ শিক্ষক আরিফুল ওই এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় কোচিং-এ পড়ানোর নামে ছাত্রীদের ব্ল্যাক মেইল করে ছবি তুলে ভিডিও করে তাদের ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করে৷
র্যাব-১১ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক আলেপ উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে শুক্রবার জানান, ‘‘ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে জিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দু'টি মামলা হয়েছে৷ তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে৷ এখন রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷''
তিনি বলেন,‘‘আরিফুল ইসলামের মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ডিভাইসে যে সব ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে তা ভয়াবহ৷ তাতে ধর্ষণসহ নান ধরণের যৌন নির্যাতনের প্রমাণ রয়েছে৷ আমরা ওই ছবি ও ভিডিও ধরে এরইমধ্যে ১৫ জন ভিকটিম এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছি৷ তাদের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা রক্ষা করছি৷ ফলে আরো যারা অপরাধের শিকার তাদের অনেকে মুখ খুলতে শুরু করেছেন৷ প্রাথমিকভাবে আমরা ২০ জনের তথ্য ও অভিযোগ পেয়েছিলাম৷ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি৷ এমনকি শিক্ষার্থীদের পরিবারের নারী সদস্যরা ওই শিক্ষকের যৌন সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন৷ তারা ভয় ভেঙে অভিযোগ করতে শুরু করেছেন৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের কাছে এর আগে দুইবার শিক্ষক আরিফুল ইসলামের যৌন সন্ত্রাসের ব্যাপারে অভিযোগ করা হয়েছে৷ কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি৷ নিলে হয়তো পরিস্থতি এক ভয়াবহ হতো না৷ ফলে তিনিও দায়ী''৷
দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করেও অভিভাবকেরা কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা ওই স্কুলে হামলা চালিয়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে গণপিটুনি দেয়৷ এরপর র্যাব ও পুলিশ গিয়ে শিক্ষক দু'জনকে আটক করে৷
বাংলাদেশে কঠোর আইন এবং নানা ধরনের যৌন নির্যাতন বিরোধী প্রচার প্রচারণা থাকলেও ধর্ষণ কমছে না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও যৌন নির্যাতনও বাড়ছে৷ যারা ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তাদের বড় একটি অংশ শিশু৷
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের হিসাব বলছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে এক হাজার ২৫১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ আর পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসেই সারাদেশে এক হাজার ৫৩৪টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে৷ এই চার মাসে প্রতিদিন গড়ে ১৩টি মামলা হয়েছে৷ তাদের হিসেবে ২০১৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোট ধর্ষণ মামলা হয়েছে ২০ হাজার ৮৩৫টি৷ এই সময়ে প্রতিদিন গড়ে ধর্ষণ মামলা হয়েছে ১১টি৷
মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘কঠোর আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই৷ এখন সবাই বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন৷ এক ব্যক্তির ইচ্ছায় যখন দেশ চলে তাহলে অন্য মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যরা কেন আছেন? তারা কি কোনো কাজ করেন না! আসলে ক্ষমতার সঙ্গে যাদের ন্যূনতম সম্পর্ক আছে তাদের আর আইনের আওতায় আনা যায় না৷ ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ আর এই পরিস্থিতির প্রধান শিকার নারী ও শিশুরা৷ নারীদের চরিত্রের দোষ দিয়ে অপরাধীরা পার পায়৷ আর শিশুদের ওপর যে অপরাধ হচ্ছে তা তারা নিজেরাও অনেক সময় বুঝতে পারে না''৷