কূটনীতিকদের মনে এখনো জঙ্গি হামলার আশঙ্কা
১৭ মে ২০১৭মঙ্গলবার ঢাকায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ(ডিক্যাব) -এর এক অনুষ্ঠানে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মিকায়েল উইন্টার বলেন, ‘‘হোলি আর্টিজান হামলার পর যেসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা সন্তোষজনক৷ তবে ঝুঁকি বিচার করতে গেলে আমরা এখনও ঝুঁকিটা অনুভব করি৷ আমাদের চলাফেরায় এখনও সতর্কতা বজায় রাখতে হয়৷ বিদেশি হিসেবে আমরা খোলামেলা হতে পারিনা৷ আমাদের মন থেকে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা দূর হয়নি৷’’
তিনি বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের নিরাপত্তা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘‘বিদেশি বিনোয়াগকারীদের আকৃষ্ট করতে সরকারের আরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন৷’’
এর পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘এই নিরাপত্তা ঝুঁকি বিশ্বের অনেক দেশেই রয়েছে৷ কিছু দেশের গোয়েন্দা কার্যক্রম ভালো হলেও মোটামুটি বিশ্বের ১৪০টি দেশে কম-বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে৷’’
গতবছর অক্টোবরে ঢাকার দায়িত্বে আসেন মিকায়েল উইন্টার৷ তার ঠিক এক মাস আগে গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় হোলি আর্টিজান রেষ্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জন নিহত হন৷
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানায়, হোলি আর্টিজানে হামলার পর কয়েকটি দেশের দূতাবাস চিঠি দিয়ে নিরাপত্তার কথা জানায়৷ এরপর পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে তাদের নিরাপত্তার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়৷ এ পর্যন্ত টাস্কফোর্সের তিনটি বৈঠক হয়েছে৷ দূতাবাসগুলোর পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য তিনটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল- ১. কূটনীতিকদের ব্যক্তিগতভাবে অস্ত্র বহনের অনুমতি ২. বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার ও ৩. বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া নিরাপত্তার বাইরেও অতিরিক্ত নিরাপত্তা৷
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বুলেটপ্রুফ গাড়ি এবং বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত আনসার সদস্য নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়৷ তবে বাংলাদেশের আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে ব্যক্তিগতভাবে অস্ত্র বহনের অনুমতি দেয়া হয়নি৷
জানা গেছে, আনসারের ২০০ সদস্যের একটি দলকে কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে৷ তাদের বেতন দিয়ে কূটনৈতিক মিশন চাইলে নিরাপত্তার কাজে লাগাতে পারে৷
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘হোলি আর্টিজানের ঘটনার পর ঢাকাসহ বাংলাদেশে বিদেশি কূটনৈতিক মিশনগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ কূটনৈতিক পল্লী, বিশেষ করে গুলশান ও বারিধারায় যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ এবং তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে৷ মিশন ও ব্যক্তি পর্যায়ে প্রয়োজন অনুযায়ী ফোর্স বাড়ানো হয়েছে৷’’
তিনি জানান, ‘‘এর বাইরে নিরাপত্তার জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো ছাড়াও কোনো মিশন অতিরিক্ত নিরাপত্তা সহায়তা চাইলে তা দেবার ব্যবস্থা আছে৷’’
মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার বলেন, ‘‘বাংলাদেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার হয়েছে৷ হোলি আর্টিজানের হামলার পর অভিযানের মুখে জঙ্গিরা এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ তারা এখন বড় ধরণের কোনো হামলা চালাতে সক্ষম নয় বলেই আমরা মনে করি৷ তাই জঙ্গি হামলার আশঙ্কার কোনো কারণ নেই৷ বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তারও কোনো ঘাটতি নেই৷’’
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে জানাতে পারেন নীচে মন্তব্যের ঘরে...