1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রধান কারণ ‘কূটনৈতিক ব্যর্থতা'

সমীর কুমার দে, ঢাকা৪ মে ২০১৬

বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি কমেছে৷ জনশক্তির সবচেয়ে বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্যে এখন খুব বেশি মানুষ যাচ্ছে না৷ বায়রা-র সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ কালাম মনে করেন, কূটনৈতিক ব্যর্থতাই এর মূল কারণ৷

https://p.dw.com/p/1Igr3
প্রবাসী বাংলাদেশি
ছবি: picture alliance / augenklick/firo Sportphoto

মধ্যপ্রচ্যে জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়ায় ডয়চে ভেলেকে এমনটিই বলেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)-র সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ কালাম৷ তিনি বলেন, ‘‘কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানি এখন প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে৷ আগের তুলনায় আমরা ৫ শতাংশ মানুষও পাঠাতে পারি না৷ মালয়েশিয়ার বাজারও বন্ধ৷ ফলে আমরা একটা খারাপ সময় পার করছি৷'’

রাশিয়ার বাজারে নতুন করে শ্রমিক পাঠানো যাবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে মনসুর আহমেদ জানান, ‘‘বর্তমানে এক কোটির মতো শ্রমিক বিভিন্ন দেশে আছেন৷ বিশ্বের ১৬৮টি দেশে বাংলাদেশের মানুষ কাজ করছেন৷'’ এ সময় শিগগিরই মালয়েশিয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে – এমন আশ্বাস পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷

ডয়চে ভেলে: বায়রার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শ্রম বাজারের খোঁজ খবর তো আপনাকে রাখতেই হয়৷ জনশক্তি রপ্তানির একটি সার্বিক চিত্র আপনার কাছে নিশ্চয় আছে৷ এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির পরিস্থিতি কী?

মনসুর আহমেদ কালাম: এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অবস্থা খুব একটা ভালো না৷ আমরা যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি জনশক্তি পাঠাই তার মধ্যে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও কাতার অন্যতম৷ এর মধ্যে সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানির হার খুবই নগণ্য৷ অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন ৫ শতাংশ লোক সৌদি আরবে যাচ্ছে৷ আগে এক সময় মহিলারা সৌদি আরবে যেত, ৭/৮ বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের শেষ দিক থেকে মহিলাদের আবার পাঠানো শুরু করেছি৷ সেখানেও আমরা পর্যাপ্ত নারী শ্রমিক পাচ্ছি না৷ তারা ওখানে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করেন৷ এখন যা-ই টুকটাক যাচ্ছে সেটা নারী শ্রমিক৷ আর মালয়েশিয়াতেও জনশক্তি রপ্তানি একেবারে বন্ধ৷ প্রফেশনাল ক্যাটাগরিতে কিছু লোক সেখানে যেত, তাও দুই মাস ধরে বন্ধ৷ গত সাড়ে তিন বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাত কোনো লোক নিচ্ছে না৷ মাঝে মধ্যে দু-একজন ‘ক্লিনার’ যাচ্ছে৷ এই মুহূর্তে তাই জনশক্তি রপ্তানি একেবারে নগণ্য পর্যায়ে রয়েছে৷

আমাদের জনশক্তি রপ্তানির এমন খারাপ অবস্থার কারণ কী ?

আমাদের একটা বড় বাজার হলো সৌদি আরব৷ ওরা অনেকদিন ধরে আমাদের কোনো লোক নিচ্ছে না৷ এর জন্য আমাদেরও দায় আছে৷ সেখানে অবস্থান করা আমাদের লোকজন প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ ও হানাহানিতে লিপ্ত হয়৷ মানুষ খুন পর্যন্ত করেছে বাঙালিরা৷ সে কারণে একটা নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে৷ পাশাপাশি আমি কূটনৈতিক সম্পর্কটাকেও দায়ী করব৷ দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরব আশ্বাস দিচ্ছে, তারা লোক নেবে৷ কিন্তু নিচ্ছে না৷ এখানে আমি কূটনৈতিক ব্যর্থতার কথাই বলব৷ কেন জানি এটা শুধু আশ্বাসের পর্যায়েই আছে৷ দুবাইতে কিন্তু এক সময় এক দেড় লাখ লোকও গেছে৷ সেখানেও অনেকদিন ধরে লোক পাঠানো বন্ধ৷ গত বছর আমাদের প্রধানমন্ত্রী শুধু ম্যানপাওয়ার এক্সপোর্টকে সচল করার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন৷ তিনিও পারেননি, বা হয়নি৷ তারাও আমাদের মাঝে মাঝে আশ্বাস দিচ্ছে৷ এভাবে বিভিন্ন দেশে আমাদের লোকজন খুবই অল্প পরিমাণে যাচ্ছে৷ মালয়েশিয়ার ব্যাপারটাই ধরুন৷ মাঝখানে চুক্তি হলো৷ পরের দিনই ওরা বাইরে থেকে সব শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দিল৷ এখন আমরা শুনছি, তারা বাজারটা উন্মুক্ত করে দেবে৷ তাহলে অবশ্য এখান থেকে বেশ কিছু শ্রমিক যাওয়ার সুযোগ পাবে৷

বায়রা-র সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ কালাম

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের কতজন শ্রমিক বিদেশে আছেন?

আপনারা জানেন, বাংলাদেশ থেকে ১৬৮টি দেশে লোক যায়৷ এ মুহূর্তে সব মিলিয়ে বাংলাদেশের এক কোটির মতো মানুষ বিদেশে অবস্থান করছেন৷

বিদেশে অবস্থানকারীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ কেমন?

এখন প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার৷ এটা অফিসিয়াল হিসাব৷ এর বাইরে নানাভাবে আরো ১০/১২ বিলিয়ন ডলার দেশে আসে৷ যেমন লোক মারফত বা আমরা যেটাকে হুন্ডি বলি সেভাবে৷ সেটার মাধ্যমে ওই টাকাটা আসে৷

আমাদের অনেক শ্রমিক অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন৷ এভাবে যেতে গিয়ে তাদের নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে বায়রার কি কিছু করার আছে?

অবৈধ শ্রমিকদের বেলায় আমরা শুধু সরকারকে অনুরোধ করি৷ গত বছর আপনারা দেখেছেন, জাহাজে করে, নৌকায় করে অনেক লোক থাইল্যান্ড বা মিয়ানমার হয়ে মালয়েশিয়ায় গেছে৷ বায়রা যেটা করে, বিভিন্ন ধরনের সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করে সরকার ও সুধী সমাজকে বিষয়গুলো জানানোর চেষ্টা করে থাকে৷ কিন্তু নিয়ন্ত্রণটা তো সরকারের হাতে৷ যেসব এলাকা দিয়ে এই অবৈধ শ্রমিকরা যাচ্ছে সেসব এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে৷ এদের নাকের ডগা দিয়েই তো তারা যাচ্ছে৷ তাদেরই এগুলো প্রতিরোধ করা দরকার৷ সেক্ষেত্রে বায়রা সংশিস্নষ্টদের সতর্ক করার জন্য যেটুকু করা দরকার সেটুকুই করে থাকে৷

বায়রার সদস্য, এমন অনেক এজেন্সি থেকে বিদেশে গিয়েও শ্রমিকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷ ও সব ক্ষেত্রে বায়রা কি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে?

আমাদের কোনো সদস্য যদি এমন কাজ করে তাহলে আমরা তার লাইসেন্স বাতিল করি৷ একই সঙ্গে সরকারকে অনুরোধ করি যাতে সরকার তার লাইসেন্স বাতিল করে দেয়৷ গত বছর আমরা ৭-৮টা এজেন্সির বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি৷ আমাদের মাধ্যমে যারা যায় তাদের দু-একজনের সমস্যা হতে পারে৷ সেটা যদি আমরা জানতে পারি তাহলে প্রতিরোধের চেষ্টাও করি৷ পাশাপাশি তারা যেন চাকরি পায় সেটারও ব্যবস্থা করে থাকি৷ আমরা বিদেশ থেকে একটা ভিসা আনলে দূতাবাস সেটা অ্যাটাস্টেড করে দেয়৷ সরকারের মেকানিজম ছাড়া আমরা একটা লোকও পাঠাতে পারি না৷ তারপরও আপনারা জানেন, ভাত খেতে গেলে ভাত পড়ে৷ দু-একজনের ক্ষেত্রে যেটা সমস্যা হয়, আমরা জানতে পারলে তাদের কেউ আমাদের মেম্বার হলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই৷

দেশে ফিরছে প্রবাসী শ্রমিক
দেশে ফিরে আসছে বহু শ্রমিক...ছবি: imago/imagebroker

নতুন কোনো সম্ভাবনাময় দেশ আছে যেখানে আমাদের শ্রমিকরা যেতে পারেন?

আমার জানা মতে, এই মুহূর্তে রাশিয়াতে কিছু লোকের ডিমান্ড সৃষ্টি হচ্ছে৷ আপনারা জানেন, বছরে অন্তত এক লাখ লোক থাইল্যান্ডে যেতে পারত৷ কিন্তু গত বছর গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর এবং জঙ্গিবাদ নিয়ে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার পর ওখানে অবস্থানকারী দু-একজন বাংলাদেশিকে সন্দেহ করেছিল৷ ওই ঘটনার পর থাইল্যান্ড বিদেশি লোক নেয়ার চিন্তা-ভাবনা স্থগিত রেখেছে৷ আর রাশিয়ার কথা শুনেছি, সেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে৷ ফলে লোকজন গিয়ে সহজে সার্ভাইভ করতে পারে না৷ তবে আমরা যে ধরনের তাপমাত্রায় চলেফিরে অভ্যস্ত সেরকম না হলেও রাশিয়াতে একটা সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে৷

জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানো বা এই সেক্টরকে সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের কি করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

যেসব দেশে আমাদের বেশি বেশি লোক যায়, সেই সব দেশে, যেমন ধরুন সৌদি আরবে এখনো আমাদের ১৭/১৮ লাখ লোক অবস্থান করছেন, এক সময় সেখানে ২৫ লাখ মানুষ ছিলেন- এই জায়গাগুলোতে আমাদের পাশের রাষ্ট্র নানা বদনাম করার চেষ্টা চালিয়ে যায়৷ ওদের মিডিয়া সেখানে খুব স্ট্রং৷ আমরা সরকারকে সেখানে মিডিয়া সেন্টার খোলার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, যাতে ওদের প্রচারণার জবাব আমরা দিতে পারি বা সত্য ঘটনাটা সবাইকে দ্রুত জানাতে পারি৷ পাশাপাশি সৌদিআরবের একটি জায়গায় কিছু বাঙালি আছে, যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত৷ তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে পারে সরকার৷ কিন্তু আমাদের দূতাবাসগুলো সেই ধরনের কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না৷

মনসুর আহমেদ কালামের সাক্ষাৎকারটি আপনার কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য