কৃত্রিম হাত
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪দুর্ঘটনা বা রোগের কারণে অঙ্গহানি একটা বড় সমস্যা৷ নতুন করে শরীরকে মানিয়ে নিতে হয়৷ ক্রাচ, লাঠি, কৃত্রিম পা বা হাত কিছুটা সহায়তা করতে পারে বটে, কিন্তু সে সব যে শরীরের অংশ নয়, তা পদে পদে বোঝা যায়৷ কারণ অনুভূতি ছাড়া কোনো কিছুকেই কি নিজের ভাবা চলে!
ইউরোপীয় গবেষকরা এবার এই অসম্ভবকেই সম্ভব করে তুলছেন৷ তাঁরা এমন একটি রোবোট হাত তৈরি করেছেন, যা দিয়ে কোনো বস্তুকে ছুঁলে বোঝা যাবে – সেটি বোতল, বেসবল না কমলা লেবু৷ ডেনমার্কের ডেনিস আবো সোরেনসেন এই ‘বায়নিক' হাতের প্রথম প্রোটোটাইপ পরীক্ষা করে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন৷ বছর দশেক আগে এক দুর্ঘটনায় তিনি নিজের বাঁ হাত খুইয়েছিলেন৷ পরীক্ষামূলক হাত দিয়ে নানা বস্তু ছুঁইয়ে তাঁর মনে হয়েছে সেই অনুভূতি অনেকটা স্বাভাবিক হাতের মতোই৷
ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় এমন প্রচেষ্টা আগেও হয়েছে৷ তবে সাম্প্রতিকতম এই উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে একটা চমক রয়েছে৷ নতুন ‘হাত' পরে সোরেনসেন শুধু বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন নি, সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছেন৷ বস্তুর আকার অনুযায়ী হাত মেলে ধরেছেন তিনি৷ এতকাল কৃত্রিম হাত পরেও চোখে না দেখে কিছুই বুঝতে পারতেন না সোরেনসেন৷ এবার চোখ বুজেও সব কিছু অনুভব করতে পারছেন তিনি৷
তবে এই ‘বায়নিক' হাত চটে করে পরে নেওয়া যায় না৷ রোমের হাসপাতালে ডাক্রাররা সোরেনসেন-এর হাতে ‘আলনার' ও ‘মেডিয়ান' নামের দুটি নার্ভে ছোট ইলেকট্রোড ঢুকিয়েছিলেন৷ দুর্বল ইলেকট্রিক স্পন্দন দিতেই তাঁর মনে হলো, হারিয়ে যাওয়া আঙুলগুলি যেন নড়াচড়া করছে৷ তারপর রোবোটের দুটি আঙুলের সঙ্গে তাঁর হাতের মধ্যে সংযোগ ঘটানো হয়৷ ফলে সোরেনসেন-এর মস্তিষ্কের সঙ্গে আঙুলগুলির একটা সমন্বয় গড়ে ওঠে৷
অনুভূতি সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে সোরেনসেন-এর চোখ বেঁধে তাঁর কানে হেডফোন পরিয়ে দেওয়া হয়৷ তারপর ‘তাঁর হাতে' নানা রকম জিনিস তুলে দেওয়া হতে থাকে৷ প্রতিবারই আকার-আয়তন ও ওজন অনুযায়ী সেই হাত নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছে৷
পরীক্ষা সফল হলেও মানুষের ব্যবহারের জন্য এমন কৃত্রিম হাত তৈরি করতে আরও কয়েক বছর লেগে যাবে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন৷
এসবি/ডিজি (এপি, এএফপি)