1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কৃষকদের জন্য বিশেষ কিছুই নেই মোদীর বাজেটে

১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

প্রত্যাশা ছিল প্রচুর। কিন্তু মোদী সরকারের বাজেটে কৃষকদের জন্য খুব বেশি কিছু নেই।

https://p.dw.com/p/3of9j
বাজেট পেশ করার জন্য সংসদ ভবনে ঢুকছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছবি: AFP/P. Singh

করোনা এবং তারপর অর্থনৈতিক সংকট শুরুর এক বছর পরের বাজেট। গত কয়েকমাস ধরে কৃষকদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বাজেট। আর কয়েক মাস পরে পশ্চিমবঙ্গ সহ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন, তার আগের বাজেট। তাই প্রত্যাশা ছিল, বাজেটে এই সব দিকে নজর দেবেন এবং বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম পেপারলেস বাজেটে এই সব দিকগুলিই ছুঁয়ে গেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বেশ কিছু ঘোষণা করেছেন। তবে সেই সব ঘোষণা প্রত্যাশাপূরণ করেছে কি?

সেই প্রশ্নের জবাব পাওয়ার আগে দেখতে হবে, সীতারামনের বাজেটে এই সব বিষয়ে কী বলা আছে। প্রথমেই নেওয়া যাক কৃষি ও কৃষক নিয়ে নির্মলা সীতারামনের ঘোষণা। কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা হয়েছে এবং ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি উৎপাদনের দেড় গুণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সীতারামন। চাল, গম, তুলোয় সহায়ক মূল্য দিতে কত হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে সেই হিসাবও তিনি দিয়েছেন। কিন্তু সেসব নতুন কোনো ঘোষণা নয়। তিনি বলেছেন এবং হিসাব দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করেছেন, সরকার আগের তুলনায় এমএসপি অনেক বাড়িয়েছে। সরকার এমএসপি চালু রাখবে এবং কৃষকদের কাছ থেকে এমএসপি-তে ফসল কিনবে। কিন্তু কৃষকদের প্রধান দাবি ছিল, এমএসপি-কে আইনি মান্যতা দিতে হবে। বাজেটে সে বিষয়ে একটি কথাও নেই। কৃষকদের আশঙ্কা, সরকার এমএসপি চালিয়ে যাবে ঠিক আছে, কিন্তু ফসল কেনার পরিমাণ তারা কমিয়ে দিলে কী হবে? আর বেসরকারি সংস্থা এমএসপি-তে ফসল কেনে না। তাদের কী করে এই দামে কিনতে বাধ্য করবে কেন্দ্র? এর কোনো জবাব সীতারামনের বাজেটে নেই।

বাজেট ভাষণে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কৃষকদের ঋণ দেয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে ১৬ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। মাইক্রো ইরিগেশন ফান্ডে অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। গ্রামের পরিকাঠামোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি খরচ করা হবে। কৃষকরা যাতে আরো বেশি ফসল বিদেশে বেচতে পারেন, তার জন্য আরো ২২টি ফসল অপারেশন গ্রিন স্কিমে আনা হয়েছে।

কৃষক নেতা এবং স্বরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা যোগেন্দ্র যাদবের দাবি, বাজেটে পিএম কৃষক প্রকল্পে আসলে অর্থবরাদ্দ কমানো হয়েছে। গতবছর ৭৫ হাজার কোটি টাকা কৃষিতে দেয়া হয়েছিল। এবার কমিয়ে করা হয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। কৃষি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বরাদ্দ মোট বাজেটের পাঁচ দশমিক এক শতাংশ থেকে কমিয়ে চার দশমিক তিন শতাংশ করা হয়েছে। যোগেন্দ্রের দাবি, কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনে এফসিআই। তাদের বরাদ্দও কমানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেছেন, কৃষকরা আন্দোলন করছে, তাই তাদের শাস্তি দিতে পেট্রোল-ডিজেলে এগ্রিকালচারাল সেস বসানো হলো। পেট্রোলে আড়াই টাকা ও ডিজেলে চার টাকা। কৃষক পাম্পে করে খেতে জল তুলবে তো বেশি পয়সা দিতে হবে। 

বেশ কিছু রাজ্য ভোটে আসন্ন। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরালা, আসাম আছে। প্রতিটি রাজ্যের জন্য কিছু ঘোষণা আছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কলকাতা থেকে শিলিগুড়ির জাতীয় সড়ক পুরোটা সারানো হবে। সবমিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাস্তাঘাটের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে। মোট ৬৭৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হবে। বাজেট ভাষণে পশ্চিমবঙ্গের জন্য সুখবর এটুকুই। মেট্রো রেলের জন্য নতুন কোনো ঘোষণা করেননি সীতারামন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ''ভোট এসেছে, এখন ওরা বলছে রাস্তা বানিয়ে দেবে। দরকার নেই। আমিই সব রাস্তা বানাব। গ্রামে রাস্তা বানিয়েও দিয়েছি। ওরা বিক্ষোভরত কৃষকদের দাবি মানুক।'' 

করোনা-পরবর্তী সময়ে প্রত্যাশিত ছিল স্বাস্থ্যখাতে অর্থমন্ত্রীর নজর থাকবে। সীতারামন ঘোষণা করেছেন, শহর ও গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে কেন্দ্র সাহায্য করবে। সব জেলায় ইন্টিগ্রেটেড টেস্টিং ল্যাব তৈরি করা হবে। ৬০২টি জেলায় ক্রিটিক্যাল কেয়ার হাসপাতাল তৈরি করা হবে। এছাড়াও একগুচ্ছ ঘোষণা করেছেন তিনি। কিন্তু পিএম আত্মনির্ভর স্বাস্থ্য ভারত যোজনায় ছয় বছরে ৬৪ হাজার ১৮০ কোটি টাকা বেশি খরচ করার কথা বলা হয়েছে। তার মানে বছরে ১১ হাজার কোটি টাকারও কম। নির্মলা জানিয়েছেন, আরো দুইটি করোনার টিকা  এবার আসতে চলেছে। 

প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, ''করোনার পরে অসাধারণ বাজেট হয়েছে। প্রো-অ্যাকটিভ বাজেট হয়েছে। কৃষকরা আরো বেশি ঋণ পাবেন। কৃষি মান্ডির জন্য আরো টাকা দেয়া হয়েছে। বাজেটের হৃদয়ে আছে কৃষি, কৃষক, গরিব ও উন্নয়ন।''  কিন্তু বিরোধীরা সেই দাবি মানতে রাজি হননি। শশী থারুর বলেছেন, তাঁর এক মেকানিকের গল্প মনে পড়ে যাচ্ছে। যিনি ব্রেক ঠিক করতে না পেরে হর্নের আওয়াজ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, আসল জায়গায় জোর নয়, অন্য জায়গায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েনের মতে, বাজেটে ভারতকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। রেল, বিমানবন্দর, পোর্ট, বিমা, ২৩টি রাষ্টায়ত্ত্ব সংস্থা বিক্রি করা হয়েছে।

তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুখবর হলো, বাজেট পেশের পর শেয়ার বাজারে বুম দেখা দিয়েছে।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)