কে হতাশ আর কে খুশি তা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবেচ্য নয়
২৫ মে ২০২১কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এরইমধ্যে বলেছেন, এই পরিবর্তন পাসপোর্টের আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক মানের জন্য করা হয়ছে। এই কারণে বাংলাদেশের ইসরায়েল নীতর কোনো পরিবর্তন হয়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন মঙ্গলবার ডয়চে ভেলেকে বলেন," আমরা কিছুদিন আগে সাউথ আফ্রিকা বাদ দিয়েছি। কিছুদিন আগে আরেকটি দেশ বাদ দিয়েছি । সেটা নিয়ে তো কোনো হৈ চৈ হয়নি। এখন এটা নিয়ে এত হৈ চৈ হচ্ছে কেন? এতে আমাদের ফরেন পলিসির কোনো পরিবর্তন হবেনা। বাংলাদেশের নাগরিকরা ইসরায়েল ভ্রমণও করতে পারবেন না। ”
তিনি জানান," পাসপোর্ট স্ট্যান্ডর্ডাইজ করার জন্য এক বছর আগে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি । তখন তো কেউ কথা বলেনি। কোনো দেশের পাসাপোর্টেই এসব লেখা থাকেন। এখন ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনের কনফ্লিক্ট, তাই এটা নিয়ে আপনারা হৈ চৈ শুরু করেছেন।”
এদিকে বাংলাদেশে প্যালেস্টাইনের রাষ্ট্রদূত এস ওয়াই রামাদান পাসপোর্টের এই বিষয় নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন সোমবার। তিনি আশা করছেন বাংলাদেশ তার পাসপোর্ট আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
এর জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন," কে হতাশ হলো আর কে খুশি হলো এটা আমাদের কাছে কোনো বিষয় নয়। আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। আমরা নিজেদের বোধ বুদ্ধিতে চলি।”
বাংলাদেশের পাসপোর্টে এরকম নিষেধাজ্ঞার মোট তিনটি দেশের নাম ছিলো। সাউথ আফ্রিকা, তাইওয়ান এবং ইসরায়েল। আগে ওই দুইটি দেশের নাম তুলে দেয়া হয়। এবার ইসরায়েলের নামও তুলে দেয়া হলো।
বাংলাদেশ মেশিন রিডেবল পাসাপোর্ট(এমআরপি) থেকে এখন ই- পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করেছে। এমআরপিতেও লেখা ছিলে একসেপ্ট ইসরায়েল। কিন্তু এখন লেখা আছে," ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড'। বাংলাদেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন," সময়ের কারণে এখন এটা নিয়ে কথা হচ্ছে। ফিলিস্তিন ইসরালের সংঘাত মাত্র শেষ হলো। সময়ের কারণে তাই এখন সবাই এটা নিয়ে কথা বলছে । মজা পাচ্ছে। তবে ইসরায়েলের ব্যাপারে নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। ”
তিনি বলেন," বাংলাদেশ তো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি। তাইওয়ানের নাম উঠে গেছে আগেই। তাই বলে তো বাংলাদেশ তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেয়নি। বাংলাদেশ এখনো এক চীন নীতিতে বিশ্বাসী। ইসরায়েলের বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে।” বাংলাদেশের পাসপোর্টে ইসরায়েলের স্ট্যাম্প লাগিয়ে সেদেশে ভ্রমণ করা যাবে না। ইসরাইল স্ট্যাম্প দেবে কীনা জানি না। তবে বাংলাদেশের পাসপোর্টে কেউ যদি ইসরাইলে ভ্রমণের স্ট্যাম্প লাগান তাহলে দেশে ফিরে আইনের মুখোমুখি হবেন বলে মনে করেন তিান।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন," বাংলাদেশের ইসরায়েল নীতি এখনো আগের মত থাকলেও একটি দৃশ্যমান পরিবর্তন তো এসেছে। পাসপোর্ট থেকে তো ইসরায়েলের নাম উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ইসরায়েলের পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক টুইট বার্তায় এটাকে ওয়েলকাম করেছে। তাই ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতকে তো উদ্বেগ প্রকাশ করতে হবেই। তারা তো চাইবেই বাংলাদেশের নীতি যেন আগের মতই থাকে। লেখাটা তো একটা সিম্বলিক গুরুত্ব বহন করত।”
"বাংলাদেশের পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তাতে বাংলাদেশের অবস্থান পরিস্কার। নীতির কোনা পরিবর্তন হয়নি। তবে ভবিষ্যতে কী হবে বা ভিতরে আরো কোনো বিষয় আছে কী না তা তো আমরা জানি না,'' বলেন সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি আরো যোগ করেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বর্তমান অবস্থার অবসান ঘটলে, প্যালেস্টাইন সমস্যার সমাধান হলে তো স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি হতে পারে। এটা তো ১৯৯৩ সালেই আশা করা হয়েছিলো।