বিশ্বকাপের সুপারস্টার কে?
৮ জুন ২০১৪প্রথমেই আসে ফিটনেস, শারীরিক ও মানসিক৷ যে দু'ধরনের ফিটনেস থাকলে এবার উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজ-ও বিশ্বকাপে সকলের নজর কাড়তে পারেন৷ অপরদিকে রোনাল্ডোর টেন্ডিনাইটিস ও পেশির চোট কিন্তু তাঁর সুপারস্টার হওয়ায় বাদ সাধতে পারে, যদিও তিনি সরকারিভাবে – অর্থাৎ ফিফা-র নির্বাচনে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়৷
সেক্ষেত্রে চারবার বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি শুধু আর্জেন্টিনা দলের ক্যাপ্টেনই নন, দেশের ও বিশ্বের ফুটবল ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে নাম লেখাতে গেলে তাঁর এবার নীল-সাদা আলবিসেলেস্তে জার্সি গায়ে চড়িয়ে মারাত্মক কিছু একটা করে ফেলতে হবে৷ নয়ত তাঁর এই বদনাম কোনোদিনই ঘুচবে না যে, তিনি বার্সেলোনার হয়ে যে ম্যাজিকই দেখান না কেন, স্বদেশের হয়ে সেরকম ঝলসে উঠতে পারেন না৷
বাকি থাকছেন নেইমার৷ ২২ বছর বয়সি ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ওয়ান্ডার৷ তাঁর পায়ের চোট দৃশ্যত সেরে গেছে৷ নয়ত খেলেন বার্সেলোনায় মেসির পাশে৷ সম্প্রতি পানামার বিরুদ্ধে ফ্রেন্ডলি-তে ব্রাজিলের ৪-০ জয়ে নেইমারের একটি গোল ও দু'টি অ্যাসিস্ট ছিল৷ তার পরেও নেইমার বলেন: ‘‘আমি এখনও পুরোপুরি তৈরি নই, টপ ফর্মে পৌঁছাতে কিছু বাকি৷ খেলার শেষের দিকে কিছুটা ক্লান্ত লাগছিল৷ প্রতিযোগিতার এখনও ন'দিন বাকি, আমি ধীরে ধীরে আইডিয়াল ফিটনেসে পৌঁছাব৷''
সব দেশেই ভালো ফুটবলার আছেন এবং তাঁদের কাছে দেশবাসী – ও ক্ষেত্রবিশেষে জগৎবাসীর প্রত্যাশা অসীম৷ ইটালির ফরোয়ার্ড মারিও বালোতেল্লি, স্পেনের মিডফিল্ডের কারিগর আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জার্মানির মেসুত ও্যজিল কিংবা টোমাস ম্যুলার, নেদারল্যান্ডসের রবিন ফ্যান পার্সি, ইংল্যান্ডের ওয়েন রুনি – এঁদের যে কেউ দলের সাফল্যে চমকপ্রদ অবদান রাখতে পারেন৷ কিন্তু সুপারস্টার?
পেলে থেকে মারাদোনা হয়ে জিনেদিন জিদান, সুপারস্টার গোত্রীয় খেলোয়াড়রা ডজনে-ডজনে জন্ম নেন না কিংবা দর্শন দেন না৷ সুপারস্টারদের সবচেয়ে বড় গুণ হলো, তাঁদের খেলায় এমন একটা নিজস্ব শৈলী থাকে – অনেকটা গানের গলার মতো – যা একবার দেখলে ভোলা যায় না, আরেকবার দেখলে চেনা যায়৷ এবার যাঁরা মাঠে নামছেন, তাঁদের মধ্যে বিশেষ করে মেসি-নেইমার-রোনাল্ডোর ঐ অবিস্মরণীয় কোয়ালিটি আছে৷
‘মেসি ম্যাজিক' আজ অনেকটা পুরনো হয়ে এসেছে; নেইমারের ম্যাজিক কতটা ব্যক্তিনির্ভর আর কতটা গোষ্ঠীনির্ভর, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না৷ কিন্তু ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে এবারকার ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নস লিগে যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা জানেন, এ এক নতুন রোনাল্ডো: ওয়েস্টার্ন ফিল্মের কাউবয় হিরোর মতো পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে ফ্রি-কিকের প্রস্তুতি নেওয়া আজও রয়ে গেছে৷ এবং ডিফেন্সে যে তিনি প্রাণপাত করবেন, এ আশা করা সত্যিই বৃথা৷
তবে এই নতুন রোনাল্ডো বিগত চ্যাম্পিয়নস লিগে একবার নয়, একাধিকবার প্রমাণ করেছেন যে, তাঁর মাথায় সম্ভাব্য অ্যাটাকের নানান নকশা ঘোরে –এবং তিনি সুযোগ দেখলে একটি পাসে সামনের দু'জন ফরোয়ার্ডের পা ঘুরে শেষমেষ গোল হওয়ার মতো আক্রমণের পথটি খুলে দিতে পারেন৷ অর্থাৎ এই নতুন রোনাল্ডো শুধু গোলন্দাজ নন, একজন কৌশলীও বটে৷ একমাত্র প্রশ্ন হলো: তাঁর দলীয় সতীর্থরা এই নতুন রোনাল্ডোকে কতটা বুঝেছেন এবং কতটা সঙ্গ দিতে পারবেন৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স