কেজরিওয়ালের পদত্যাগ
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ভারতের দিল্লির উপ-রাজ্যপাল নাজিব জঙ্গের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দলীয় অফিসের সামনে শুক্রবার রাতে একথা জানান মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ তিনি বিধানসভা ভেঙে দেবারও সুপারিশ করেন৷ এর পরই শুরু হয়ে যায় নতুন করে ভোট নেয়া হবে কিনা তা নিয়ে জল্পনা৷ তবে এই মুহূর্তে সবাই তাকিয়ে আছে উপ-রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের দিকে৷ কী ধরনের সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পারেন? তিনি বিরোধী দল বিজেপিকে সরকার গঠনের জন্য বলতে পারেন৷ বিধানসভা ভেঙে দিতে পারেন৷ কিংবা ঝুলিয়ে রাখতে পারেন৷ অথবা কয়েক মাস পর সাধারণ নির্বাচনের সঙ্গে দিল্লি বিধানসভার নির্বাচন করার কথা বলতে পারেন৷ প্রথম সম্ভাবনা ক্ষীণ৷ কারণ বিজেপি একক বৃহত্তম দল হলেও সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই৷ তাই বিজেপি তাতে রাজি হবে না বলেই মনে হয়৷
কেজরিওয়ালের এই পদত্যাগ কী হঠকারিতা নাকি পূর্ব-পরিকল্পিত? এর পেছনে আছে প্রধানত দুটো কারণ৷ তিনি জানতেন দিল্লির জন্য দুর্নীতি-বিরোধী জন লোকপাল বিল পেশ করা যাবে না৷ কারণ কংগ্রেস এবং বিজেপি কোনমতেই তা পেশ করতে দেবে না৷ কেননা এই বিল ভিমরুলের চাকে ঘা দেবে৷ দিন কয়েক আগেই কৃষ্ণা-গোদাবরি অববাহিকা থেকে উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানোর অভিযোগে কেজরিওয়াল কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি এবং রিলায়েন্স ইন্ডাষ্ট্রিজ ও তার মালিক মুকেশ আম্বানির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেন দিল্লি সরকারের দুর্নীতি দমন ব্যুরোকে৷ কেজরিওয়ালের অভিযোগ কেন্দ্রীয় সরকার এবং রিলায়েন্সে ইন্ডাষ্ট্রিজের যোগসাজসে গ্যাসের দাম অন্যায্যভাবে বাড়ানো হয়৷ গুজরাটেও নাকি মোদীর বিজেপি সরকার অনুরুপ সুবিধা পাইয়ে দেয় মুকেশের শিল্পগোষ্ঠীকে এমনটাই অভিযোগ কেজরিওয়ালের৷ সেক্ষেত্রে দুর্নীতি বিরোধী জন লোকপাল বিল পাশ হলে আলমারি থেকে আরো কঙ্কাল বেরিয়ে পড়বে৷
তাই এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছেন কেজরিওয়াল৷ আম জনতাকে তিনি বলতে পারবেন, ‘‘দ্যাখো, দুর্নীতি দমন করতে চেয়েছি, কিন্তু কংগ্রেস-বিজেপির নেপথ্য আতাঁত সেই বিল পেশে বাধা দিয়েছে৷ বলেছে জন লোকপাল বিল অসাংবিধানিক৷''
আম আদমি পার্টির সমর্থকরা মানুষকে গিয়ে বলতে পারবে রাজনৈতিক সিস্টেম তাঁর প্রতিটি জনকল্যাণ কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করেছে৷ তা সে বিদ্যুৎ বিল অর্ধেক করা হোক, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতির জন্য পুলিশকে দিল্লি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা হোক৷ কিন্তু কেজরিওয়াল ক্ষমতার লোভে নীতি আর অঙ্গীকার বিসর্জন না দিয়ে ইস্তফা দেয়াকেই শ্রেয় মনে করেছেন৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে কেজরিওয়াল পেতে পারেন শহিদের মর্যাদা৷ এতে আম আদমি পার্টির দিকে আম জনতার সমর্থন এবং সহানুভূতির ঢল নামতে পারে৷ সাধারণ নির্বাচনে এবং দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে এতে কেজরিওয়ালের পাল্লা তাতে ভারি হবে সন্দেহ নেই৷ যেটা অতীতেও দেখা গেছে৷ ১৯৮০ সালে ইন্দিরা গান্ধী, ৮৪ সালে রাজীব গান্ধী, ৯১ সালে কংগ্রেস এবং তারপর বাজপেয়ী সরকার৷ নতুন নির্বাচনের জন্য আম আদমি পার্টি প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বলে জানা গেছে সরকার চালাবার মত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার জন্য সহানুভূতির স্রোতটাকে ধরে রাখতে৷
সমালোচকদের একাংশ অবশ্য বলছেন, কেজরিওয়ালকে বিরোধী নেতা হিসেবেই ভালো মানায়৷ সরকার চালাবার পেশাদারিত্বের অভাব চোখে পড়ে৷