কেন আমি হিন্দি ছবি দেখি?
৬ জুন ২০১৭গতবছর গ্রীষ্মের এক সন্ধ্যায় রাইন নদীতে নৌ ভ্রমণে গিয়েছিলাম, সঙ্গে ছিল কয়েকজন বন্ধু৷ কারো সঙ্গে নতুন পরিচয়, কাউকে আগে থেকে চিনতাম৷ সেখানে বন্ধুর বন্ধুরাও ছিল৷ গ্রীষ্মের সন্ধ্যা হলেও জাহাজ চলতে শুরু করার এক পর্যায়ে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলো৷ সেই বৃষ্টিপাতের মধ্যেই অবশ্য চলছিল ডিস্কো, জাহাজের ছাদের একাংশে৷ অন্য দুই ফ্লোরে ছিল আড্ডার সুযোগ৷
বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে রাইন নদীতে নৌকা ভ্রমণ সেটাই প্রথম৷ শুরুতে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলাম৷ কিন্তু এক পর্যায়ে ভালো লাগতে শুরু করে৷ বৃষ্টি দেখে কারো কারো মনে যখন আতঙ্ক, তখন আমি দিব্যি বারান্দায় এক নিরিবিলি কোণায় বসে তা উপভোগ করতে শুরু করলাম৷ এক দিকে ভরা রাইন নদী, অন্যদিকে জাহাজের গা ছাপিয়ে পানির ফোয়ারা৷ পানির দেশের মানুষ না যারা, তাদের জন্য কিঞ্চিৎ আতঙ্কেরই৷
আমি অবশ্য ছোটবেলাতে লঞ্চে পদ্মা, মেঘনা পাড়ি দিয়েছি অনেকবার৷ তাই কিছুটা নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছিলাম জাহাজের দুলুনিতে৷ এরই মাঝে হঠাৎ শুনি কে যেন হিন্দি গান গাইছে৷ প্রথমে ভেবেছিলাম, নিশ্চিয়ই কোনো ভারতীয় শিক্ষার্থী হবে৷ কিন্তু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি এক জার্মান তন্বী৷ আমার এক বন্ধুর বন্ধু সে৷ দিব্যি গাইছে সত্তরের দশকের জনপ্রিয় হিন্দি গান ‘‘কাভি কাভি মেরে দিল মে...৷''
সেই তন্বীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়তে বেশি সময় লাগেনি৷ সেই রাতে জাহাজে সে, আমি এবং আরো কয়েক বন্ধু মিলে অনেক হিন্দি গান গেয়েছি৷ কোনো গানই পুরোটা জানতাম না আমরা, জানতো না আমাদের ভারতীয় বন্ধুরাও৷ তারপরও যে যতটা পেরেছি, গেয়েছি৷ সময়টা তখন আনন্দেই কেটেছে৷
এত কথা বলছি এজন্য যে, হিন্দি গানের জনপ্রিয়তা আসলে জগৎ জুড়ে৷ এই জার্মানিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় বলিউড তারকা শাহরুখ খান৷ তাঁর ‘কাভি খুশি কাভি গম' দেখে কেঁদে বুক ভাসায় অসংখ্য জার্মান তরুণী৷ এখনতো রীতিমতো বলিউডভিত্তিক এক চ্যানেলও চালু হয়েছে জার্মানিতে৷
সুদূর জার্মানিতে যখন এই অবস্থা, তখন ভারতের পাশের দেশ বাংলাদেশে হিন্দি সিনেমার, হিন্দি গানের জনপ্রিয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ আসলে বলিউড বাণিজ্যিক দিক থেকে অনেক এগিয়ে৷ তাদের সিনেমার বিজ্ঞাপন, প্রচারণায় যে অর্থ খরচ করা হয়, তা দক্ষিণ এশিয়ার বা গোটা এশিয়ার অন্য কোনো দেশের পক্ষে কঠিন৷
ছবি নির্মাণের দিক থেকেও বলিউড অনেক এগিয়ে৷ তাদের জনপ্রিয় অভিনেতা, অভিনেত্রীরা অভিনয় জানেন৷ যখন যৌন আবেদনময়ী হওয়ার প্রয়োজন হয়, তখন তারা পুরোটাই তা হতে পারেন৷ আবার কাহিনীর প্রয়োজনে বোরকাতেও সাবলীল তারা৷ তাদের অভিনয়ে ন্যাচারাল ব্যাপারটা রয়েছে৷
আমাদের দেশের চলচ্চিত্রে প্রচার এক বড় বাধা৷ ছবি তৈরির ক্ষেত্রে কাহিনীর প্রয়োজন অনুযায়ী পয়সা খরচ আর অভিনেতা, অভিনেত্রীদের উদারতা বা রক্ষণশীলতা কোনোটাই ঠিকভাবে প্রকাশ হয় না৷ নিজস্ব কাহিনীর চেয়ে নকল করার প্রবণতা বেশি৷ ফলে মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিগুলোর অধিকাংশতেই থাকে আর্থিক দৈন্যতা, দুর্বল অভিনয়ের ছাপ৷ এমন ছবি দেখিয়ে হিন্দি ছবি দেখা দর্শকদের মন জয় সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না৷
তবে ঢালিউড যদি বড় বাজেটে, ভালো কাহিনীর বাণিজ্যিক ছবি তৈরিতে সক্ষম হয়, তাহলে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে আমার বিশ্বাস৷ বাংলাদেশে সেরকম বিনিয়োগকারীও আছে, প্রয়োজন যথার্থ উদ্যোগ৷ আর সেটা করতে হবে হিন্দি ছবির জনপ্রিয়তাকে মেনে নিয়েই৷ সংখ্যায় কম করে হলেও ভালো মানের বাণিজ্যিক বাংলা ছবি হিন্দি ছবি দেখা দর্শকদের হলে টানতে পারে বলে আমার ধারণা৷ কিন্তু সে চেষ্টা কি আদৌ হবে?
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷