1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন তারা সাগরে ভাসে, কেন তারা জীবন বাজি রাখে

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলেছে, মে মাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রায় পাঁচ হাজার নাগরিককে সাগরে ভাসমান জাহাজ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/1GPcN
Malaysia Flüchtlingsboot Rohingya
ছবি: Getty Images/AFP/M. Vatsyayana

তাঁরা সবাই উন্নত জীবনের আশায় মালয়েশিয়া কিংবা থাইল্যান্ডে পাড়ি জমাচ্ছিলেন৷ ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রায় এক লাখ নাগরিক সাগরপথে পাড়ি দেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়৷ তাঁরা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছেন আর তাঁদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে কিনা তা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়নি৷ তবে এবছরের মে-জুন মাসে মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে গণকবর আবিষ্কৃত হওয়ার পর এসব ভাগ্যান্বেষী মানুষের ভয়াবহ এবং করুণ কাহিনি শোনা গেছে৷ জানা গেছে তাদের একাংশের পরিণতির কথা৷ জানা গেছে কীভাবে পাচারকারীরা উন্নত জীবনের লোভ দেখিয়ে এসব মানুষকে ফাঁদে ফেলে৷

এই পাচারকারীদের হাত থেকে যাঁরা ফিরে আসতে পেরেছেন তাঁদের মধ্যে দু'জন হলেন মাগুরা সদরের ডেফুলিয়া গ্রামের ইমরান শেখ (২৩) ও শাহিন মোল্লা (২২)৷ ফিরে আসার পর তাঁরা সংবাদ মাধ্যমের কাছে মৃত্যুর দুয়ার থেকে তাঁদের ফিরে আসার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান৷ তাঁরা জানান, দালাল তাঁদের মালয়েশিয়া অথবা থাইল্যান্ডে ২৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরির কথা বলেছিল৷ আর এই চাকরির জন্য তাঁরা জনপ্রতি দেড় লাখ টাকায় চুক্তি করেছিলেন৷ দালালদের অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন৷ এরপর তাঁদের কক্সবাজার থেকে ট্রলারে করে গভীর সমুদ্রে নিয়ে জাহাজে তোলা হয়৷ আগে থেকে ওই জাহাজে নারী ও শিশুসহ আরো সাড়ে ৪০০ লোক ছিল৷ জাহাজটি থাইল্যান্ডে ঢুকতে ব্যর্থ হয়৷ এরপর তাদের ওপর শুরু হয় নির্যাতন৷ কাউকে সাগরে ফেলে দেয়া হয়৷ আবার কাউকে করা হয় মারধর৷ এমন করুন গল্প আছে আরো অনেকের৷ থাইল্যান্ড অথবা মালয়েশিয়ার জঙ্গলে আটক রেখে মানবপাচারকারীরা কীভাবে মুক্তিপণ আদায় করে তার কাহিনিও সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয়েছে৷

DW-Korrespondent in Bangladesch, Harun Ur Rashid Swapan
হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকাছবি: Harun Ur Rashid Swapan

এসব কাহিনি থেকে এটাই স্পষ্ট যে সমুদ্রপথে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারের কারণ প্রধানত তিনটি৷ দারিদ্র্য ও বেকারত্ব, উন্নত জীবনের আশা এবং পাচারকারী চক্রের ফাঁদ৷

২০১২ সাল থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় সেখান থেকেও সমুদ্রপথে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে৷ জাতিসংঘের হিসাব মতে এই সময়ে নৌকা করে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়ায় যাত্রা করা লোকজনের ৪০ শতাংশের মত বাংলাদেশি৷

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও'র তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি৷ আর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্যমতে, দেশে বেকার যুবকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ এই বেকারদের বড় একটি অংশ অশিক্ষিত এবং অর্ধশিক্ষিত৷ তাদের জন্য দেশে কাজ নেই৷ আবার তাদের আর্থিক সামর্থ্যও তেমন নেই৷ এই সুযোগটি নেয় দালাল চক্র৷ তারা কমখরচে সমুদ্রপথে থাইল্যান্ড অথবা মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রলোভন দেখায়৷ প্রলোভন দেখায় ভাল বেতন এবং উন্নত জীবনের৷

বাংলাদেশের কক্সবাজার অঞ্চল এই দালাল চক্রের প্রধান ঘাঁটি হলেও তাদের নেটওয়ার্ক আছে সারা দেশে৷ দালাল চক্রের সঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অভিযোগ আছে৷ দালাল চক্র তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে বেকার যুবকদের সংগ্রহ করে কক্সবাজারে নিয়ে সমুদ্রপথে পাচার করে৷ তারা এই যুবকদের কাছ থেকে টাকাও নেয়৷ পরে আটকে রেখে তার পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণও আদায় করে৷ এই অবস্থা চলছে বছরের পর বছর ধরে৷

কক্সবাজার অঞ্চলে এই দালাল চক্রের নেতারা বিলাসী জীবনযাপন করেন৷ তাদের আছে বিলাসবহুল বাড়ি৷ তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও আইনের ফাঁক গলিয়ে প্রভাব খাটিয়ে অল্পসময়ের মধ্যেই বেরিয়ে আসে তারা৷ আর যারা পাচার ও প্রতারণার শিকার হয় তারা কক্সবাজারের না হওয়ায় মামলা আর চলেনা৷ কারণ তারা উদ্ধার হওয়ার পর যার যার এলাকায় চলে যায়৷ মানবপাচার আইন পাস হওয়ার পরও পুলিশ সেই আইনে মামলা করেনা৷ এই আইনে বাদি হওয়ার নিয়ম পুলিশের৷ তাই তারা দায় এড়াতে প্রচলিত আইনে মামলা করে, যার সুবিধা পায় পাচারকারীরা৷

সমুদ্রপথে বাংলাদেশের মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের আছে যোগাযোগ৷ বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়া কেন্দ্রিক এই পাচারকারী চক্রের সঙ্গে এক থাই সেনা কর্মকর্তাও জড়িয়ে পড়েছিলেন৷ এছাড়া বাংলাদেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজশেরও অভিযোগ আছে৷ ফলে এই চক্রটি কখনো কখনো সাময়িকভাবে চাপে পড়লেও আবার সক্রিয় হয়৷

শুধু সমুদ্রপথে থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়া নয়৷ এর বাইরেও আরো অনেক দেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে বাংলাদেশিদের৷ এর পেছনেও আছে পাচারকারী চক্র৷ গত সপ্তাহে লিবীয় উপকূলে অভিবাসীপ্রত্যাশীদের বহনকারী নৌকা ডুবে যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের মধ্যে অনন্ত ২৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক৷ মোট ৭৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক ওই নৌকায় ছিলেন৷ দারিদ্র্য আর বেকারত্বেও কারণে অনেক উচ্চশিক্ষিত বাংলাদেশি তরুণও দালাল আর পাচারকারীদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন৷ তাঁদের পাচারকারীরা হাটের পণ্যের মতো বিক্রি করছেন এক হাত থেকে আরেক হাতে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য