কেন্দ্রের চাকুরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি, রাজ্যে বাড়বে কবে
২১ অক্টোবর ২০২৩উৎসবের মরশুমে এক কোটিরও বেশি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী ও পেনশনভোগীর মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ বেড়েছে৷ গত বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ডিএ চার শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ এ বছরের পয়লা জুলাই থেকে বর্ধিত হার কার্যকর হবে৷
কেন্দ্রের মহার্ঘভাতা
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৪২ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা পান৷ এটা বেড়ে হবে ৪৬ শতাংশ৷ এতে লাভবান হবেন ৪৮ লক্ষ ৬৭ হাজার কর্মী, ৬৭ লক্ষ ৯৫ হাজার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী৷ এরজন্য কেন্দ্রের কোষাগার থেকে প্রতি বছর খরচ হবে ১২ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা৷
তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের কর্মীদের মহার্ঘভাতা যে বাড়বে না, তা রাজ্য সরকার আগেই ঘোষণা করেছে৷ ষষ্ঠ বেতন কমিশনের রাজ্য সরকারের কর্মীরা ছয় শতাংশ ডিএ পেয়েছেন৷ সপ্তম বেতন কমিশনের অধীনে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ডিএ-র বেড়ে হয়েছে ৪৬ শতাংশ৷
পশ্চিমবঙ্গে ২০২০ সালে ষষ্ঠ বেতন কমিশন কার্যকর হওয়ার পরে তিন শতাংশ ডিএ বেড়েছিল৷ চলতি বছর বাজেটের সময়ে আরও তিন শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
রাজ্যের সঙ্গে পার্থক্য
তবে এই সময়ের মধ্যে দফায় দফায় ডিএ বাড়িয়েছে কেন্দ্র৷ ২০২২ সালের পয়লা এপ্রিল ও পয়লা জুলাইয়ে তিন ও চার শতাংশ, গত পয়লা জানুয়ারি থেকে চার শতাংশ বেড়েছে৷ এবার কেন্দ্রের বৃদ্ধিতে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে পার্থক্য হল ৪০ শতাংশ৷
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে এক লাফে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন অনেকটাই বেড়ে যাবে৷ এ রাজ্যের সরকারি কর্মীদের প্রাপ্তির থেকে যা অনেক বেশি৷ অন্যান্য রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্য ডিএ-র হার পশ্চিমবঙ্গের মতো এতটা কম নয়৷
প্রতিবেশী একাধিক রাজ্যে মহার্ঘভাতার হার পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেকটাই বেশি৷ রাজ্য সরকারি কর্মীরা বিহার ও অসমে ৩৪ শতাংশ, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডে ৩৮ শতাংশ, ত্রিপুরায় ২০ শতাংশ হারে ডিএ পান৷
টানাপোড়েনের ডিএ
কলকাতা হাইকোর্ট ২০০৬ সাল থেকে নির্দিষ্ট হারে ডিএ দিতে বলেছিল রাজ্যকে৷ এনিয়ে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে৷ নবান্ন জানিয়েছে, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী বকেয়া ডিএ মেটানোর আর্থিক সামর্থ্য রাজ্য সরকারের নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, রাজ্য কোষাগারের যা হাল তাতে কেন্দ্রের সমান হারে মহার্ঘ ভাতা দেয়া সম্ভব নয়৷
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মোট ঋণের বোঝা ২০১৯-এর মার্চে চার লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০২৩-এর মার্চের শেষে ছয় লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে৷ তবে শুধু এই রাজ্য নয়, কোভিড পরিস্থিতিতে অনেক রাজ্যেরই ঋণের বোঝা বেড়েছে৷
এই পরিস্থিতিতে দিনের পর দিন প্রতিবাদ করে চলেছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা৷ বিভিন্ন সংগঠন একইসঙ্গে আইনি লড়াই চালাচ্ছে৷ হচ্ছে মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি৷ গত ১০ ও ১১ অক্টোবর রাজ্যজুড়ে কর্মবিরতি পালন করেন কর্মী ও শিক্ষকরা৷
ভবিষ্যতের পথ
বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বকে নিয়ে গঠিত যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের আহবায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘‘আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে৷ সেই কারণেই রাজ্যের কর্মীদের সরকার ডিএ দিতে পারছে না৷ পদমর্যাদা অনুযায়ী একজন কর্মীর প্রতি মাসে এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে ১২ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা৷''
অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিৎ বসু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশের সব বড় রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে কম হারে ডিএ পান রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা৷ এটা কেন হবে? মহার্ঘভাতা বাবদ কেন্দ্র কোনো টাকা রাজ্যকে দেয় না৷ অৰ্থ কমিশনের সুপারিশে যে টাকা কেন্দ্র দেয়, তা রাজ্য খরচ করে৷ তা হলে কেন রাজ্যের কর্মীরা প্রাপ্য টাকা পাবেন না?’’
আন্দোলনকারী কর্মী ও শিক্ষকরাবলে থাকেন, তারা সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷ যদিও প্রসেনজিতের মতে, মহার্ঘভাতা সাংবিধানিক অধিকার নয়৷
ভবিষ্যতে বাড়তি ডিএ মিলবে, এমন ইঙ্গিত রাজ্য সরকার দেয়নি৷ ভাস্কর বলেন, ‘‘উৎসবের মরশুম শেষ হলেই আমরা আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়াব৷ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে৷’’