২৫ বছর পরের জার্মানি
২২ মার্চ ২০১৩২০৩৭ সালে এসেও প্লেন বা হেলিকপ্টারে করে কাজে যেতে পারবে না মানুষ৷ কিংবা চাঁদে ও মঙ্গল গ্রহে চাষাবাদও করতে পারবে না, অন্তত এটা বলা যায় ৷ গত ২০ বছর ধরে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর চালচিত্রটা কেমন হবে, তা নিয়ে গবেষণা করছে হামবুর্গের ‘ট্রেন্ড ব্যুরো' , সংগ্রহ করছে তথ্য-উপাত্ত৷ সংস্থাটির পরিচালক বির্গিট গেবহার্ট৷ তাঁর সঙ্গে আছেন সমাজতত্ত্ববিদ ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা৷ তাঁদের ভবিষ্যদ্বাণী র অনেক কিছু ফলেও গেছে ইতিমধ্যে৷ ২৫ বছর পর জার্মানির চেহারাটা দেখতে কেমন হবে, এটাই এখন গবেষণার বিষয় বির্গিট গেবহার্ট ও তাঁর সহকর্মীদের৷
ধারণা করা হচ্ছে, তথ্য প্রযুক্তির ইতিবাচক দিকটি তুলে আনতে চেষ্টা করবে জার্মানরা৷ ব্লগ বা ফেসবুকে ঢুকে কেউ হ্যাকিং করতে পারে বা প্রযুক্তিকে অপব্যবহার করতে পারে, এই আতঙ্কটা আর থাকবে না৷ পেশা, পরিবার ও বিনোদন – এই তিন ক্ষেত্রের মধ্যে অনায়াসে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে মানুষ৷ তবে জার্মানিতে লোকজন আরও প্রতিযোগিতামুখী হবে৷ ধনী দরিদ্রের ফারাকটাও বাড়বে৷
পরিষেবা ক্ষেত্রে মানুষের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে৷ বাজার সদাই করতে সহায়তা পাওয়া যাবে৷ বাচ্চা, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের দেখাশোনা করতেও সাহায্য পাওয়া যাবে৷ এসবের জন্য খরচও খুব বেশি হবেনা৷ অনেক কিছু করে দেবে রোবোটরা৷ একেবারে জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ পর্যন্ত৷ এমনকি অসুখ হলে ঠিকমতো ওষুধও খাইয়ে দেবে যান্ত্রিক মানুষরা৷
আর একটা প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাবে মানুষের মধ্যে৷ কোনো কিছু কিনে মালিক হওয়ার চাইতে ভাগাভাগি বা বদলাবদলি করার দিকে ঝুঁকে পড়বে লোকে৷ যেমন একটি গাড়ি সারাদিন কাজে না লাগলে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা হবে৷ দিনে একজন রাতে আরেক জন৷ এই ভাবে দুই তরফেরই আর্থিক সাশ্রয় হবে৷ বার্লিনে তো এখনই একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে: কয়েকজন মিলে একটি বাগান লিজ নেন, কাজকর্ম করেন ভাগাভাগি করে, ফলমূল-তরিতরকারিটাও ভাগ করে নেন৷
শহরগুলি অবশ্য মানুষের ভিড়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে না৷ তবে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রিক গাড়ি শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় চলাফেরা সহজ করবে৷
বড়বড় দালানে নিজস্ব বিদ্যুতশক্তি উত্পাদনের ব্যবস্থা থাকবে৷ ছাদে তৈরি করা হবে বাগান৷ ফলে আবহাওয়ার ওপর পড়বে ইতিবাচক প্রভাব৷
শহরের ধনী বাসিন্দারা দেয়ালঘেরা বাড়িতে বসবাস করবেন৷ গেটে থাকবে দারোয়ান৷ এতে করে বেকার, অভিবাসী বা দরিদ্রদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা যাবে৷ যাদের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকবে জার্মানিতে৷
অন্যদিকে বিভিন্ন প্রজন্ম কাছাকাছি বসবাস করতে পছন্দ করবে৷ প্রযুক্তির দৌড় অনেকটা বেড়ে যাবে৷ ডিজিটাল ভিজিটিং কার্ডের মাধ্যমে অন্যকে চেনাজানা সহজ হবে৷ কার্ডে শুধু ব্যক্তির নাম ঠিকানা নয়, আত্মীয়স্বজন, পছন্দ -অপছন্দ, হবি ইত্যাদি সব কিছুর উল্লেখ থাকবে৷ স্ক্যানারের মাধ্যমে জানা যাবে কোন পণ্য কোথায় সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে৷ অর্থাৎ আশপাশের এলাকাটাই দোকানপাটের মত হবে৷ চাহিদা অনুযায়ী জিনিসপত্র তৈরি করা হবে৷ প্রত্যেকের রুচি অনুযায়ী পোশাক আশাক বা ভোজ্যপণ্য প্রস্তুত করা হবে৷ অর্থাৎ কর্তার ইচ্ছায় হবে কর্ম৷
পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে৷ ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় কাজ খোঁজা আরও সহজ হবে৷ খেয়েপরে বেঁচে থাকতে অ্যামেরিকায় যেমন একাধিক কাজ করতে হয় অনেককে, জার্মানিতেও এই রকম একটা প্রবণতা দেখা যাবে৷ এক কাজ থেকে আরেক কাজে ছুটবে লোকে৷ ট্রেনিং, প্রশিক্ষণ চলতেই থাকবে৷ অনেক বেশি বয়স পর্যন্ত কাজ করবে মানুষ৷ অভিজ্ঞতার ওপর জোর দেয়া হবে৷ বেতন বাড়ানোর চেয়ে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে কর্মীদের৷ যেমন কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু ন্যাপ বা বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে অফিসে৷ থাকবে হালকা ব্যায়ামের ব্যবস্থা৷ পাওনা ছুটি ছাড়াও অতিরিক্ত ছুটি মঞ্জুর করা হবে প্রবীণ কর্মীদের জন্য৷ ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের মধ্যে সীমারেখাটা একাকার হয়ে যাবে৷
‘এমন একটা পৃথিবীতে আমি বাস করতে চাইনা৷' বির্গিট গেবহার্ট ভবিষ্যতের এই চিত্রটা যেখানেই তুলে ধরেছেন সেখানেই এমন একটা উত্তর পাওয়া গেছে৷ যে সমাজে মানুষ এত আত্মকেন্দ্রিক, নিঃসঙ্গ ও হৃদয়হীন, সেখানে স্বস্তি বোধ করা যাবে না, এটাই অনেকের ধারণা৷ বির্গিট গেবহার্ট অবশ্য মনে করেন, ভবিষ্যতের জার্মানি অতটা ধূসর নয়, অনেক ইতিবাচক দিকও রয়েছে সেখানে৷ নতুন নতুন সুযোগ সুবিধাগুলিকে একটু হাতড়ে দেখলে ভয়ও দূর হবে মানুষের মন থেকে৷