‘কোন দলই দেশের মানুষের ভালো করার চেষ্টা করেনা’
১০ আগস্ট ২০১১অস্ত্র যখন হকিস্টিক
বাংলাদেশের ফরিদপুরের বাসিন্দা আমিনুর রহমান ফরিদ৷ একাত্তরে শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি৷ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান'এর সাতই মার্চের ভাষণের পর মুক্তি সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হন ফরিদরা৷ দলবেঁধে সেনা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ফরিদপুরেই৷ সাত-আটশ ছেলেমেয়ে ছিল সেই দলে৷ শুরুতে তাদের অস্ত্র ছিলনা৷ একদিন ফরিদ তাই হকিস্টিক নিয়েই লড়তে গিয়েছিলেন পাক সেনাদের বিরুদ্ধে৷ তিনি জানান, ‘‘তখন কোনকিছু বিবেচনা না করেই পাক বাহিনীর মোকাবিলা করতে চেয়েছিলাম৷ আমাদের মাথায় ছিল না, সশস্ত্র পাকসেনাদের শুধু হকিস্টিক দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়৷''
ভারতে নয় দেশেই প্রশিক্ষণ
মুরব্বিদের বাধার কারণে সেদিন হকিস্টিক নিয়ে পাকবাহিনীর মোকাবিলা করতে পারেননি ফরিদরা৷ তাই বলে থেমে যায়নি তাঁদের সংগ্রাম৷ বরং সিদ্ধান্ত নেন, বন্ধুরাসহ ভারতে যাবেন, সেখানে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ নেবেন, সংগ্রহ করবেন অস্ত্র৷ এরপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন স্বাধীনতার লড়াইয়ে৷ এই চিন্তা নিয়ে একাত্তরে ফরিদরা যখন ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন, তখন দেখা হয় ওবায়দুর রহমান'এর সঙ্গে৷ তিনি ফরিদদেরকে দেশের মধ্যে থেকেই যুদ্ধে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দিলেন৷ এই পরামর্শের পর ফরিদরা ভারতে না গিয়ে ফরিদপুরেই অস্ত্র সংগ্রহ করেন এবং যুদ্ধে অংশ নেন৷
বারোখাদা সেতু
একাত্তরে বেশ কয়েকবার পাক সেনাদের মুখোমুখি হন ফরিদরা৷ সেপ্টেম্বরের একযুদ্ধে বারোখাদা সেতু পাহারারত একদল পাকসেনাকে হত্যা করেন তাঁরা৷ সেদিনের কথা আজও পরিষ্কার মনে আছে ফরিদের৷ তিনি বলেন, ‘‘কয়েকজন পাক সেনা সেতুতে বসে ধুমপান করছিল৷ আমরা তাদের সিগারেটের আগুন লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ি৷''
কমলপুরে যুদ্ধ
এভাবে আসল ডিসেম্বর মাস৷ চূড়ান্ত লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিসেনারা৷ ফরিদরা তখন ফরিদপুরের আশেপাশে শত্রু নিধনে ব্যস্ত৷ নয় ডিসেম্বরের কথা৷ খবর এলো, যশোর থেকে ফরিদপুরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে পাক সেনাদের একটি বড় দল৷ এই খবর পেয়ে, কমলপুর এলাকায় ফরিদরা অবস্থান নিলেন৷ শুরু হলো যুদ্ধ৷ সে লড়াইয়ে ১১ মুক্তিসেনা শহীদ হন৷ প্রতিপক্ষ পাকবাহিনী'র পঞ্চাশজন সেনাও নিহত হয় সেই যুদ্ধে৷
স্বাধীন বাংলাদেশ
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফরিদ ফিরে যান কলেজে৷ শিক্ষাজীবন শেষে খেলাধুলায় মনোযোগী হন তিনি৷ বিভিন্ন সংবাদপত্রের ফরিদপুর প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা৷ বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘যে আশা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলাম তা এখনো পূরণ হয়নি৷ রাজনীতিতে আমরা বারবার হেরে যাচ্ছি৷ আমি মনে করি, কোন দলই দেশের মানুষের ভালো করার চেষ্টা করেনা৷ আর কেউ যদি চেষ্টা করে তবে অন্যরা তাতে বাধা প্রদান করে৷''
বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের প্রশংসা করেন ফরিদ৷ তাঁর মতে, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পূরণ করছে৷ দেশের উন্নতিতেও আশানুরূপ অবদান রাখছে৷ এই উন্নতিকে আরো এগিয়ে নিতে গেলে প্রয়োজন সকল পক্ষের সহায়তা৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ