কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত অন্তত চার
১৬ জুলাই ২০২৪কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল চারটার দিকে এই ঘটনা ঘটে৷ তার আগে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)-র শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন।
এদিকে, ঢাকা কলেজের সামনে থেকে রক্তাক্ত একটি মরদেহ উদ্ধারের খবর পরিবেশন করেছে দ্য ডেইলি স্টার৷ খবরে তার মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি৷ সংশ্লিষ্ট এলাকায় মঙ্গলবার দিনভর কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷
নিহত অন্তত চার
চট্টগ্রামে নিহতদের একজন চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী, আরেকজন পথচারী বলে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকাকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)-র কমিশনার সাইফুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘কলেজ শিক্ষার্থীর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে আমরা মৃত্যুর তথ্য পেয়েছি। তবে পুলিশ কোথাও বলপ্রয়োগ করেনি।’’ নিহত তৃতীয় ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি৷
রংপুরে সংঘর্ষের বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বাংলাদেশের পত্রিকাটি লিখেছে, ‘‘আজ দুপুরে বেরোবির কোটা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যায়। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী নিহত হন।’’
এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে৷
জাহাঙ্গীর নগরে রাতভর সংঘর্ষ, আহত অনেক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের রাতভর সংঘর্ষ হয়েছে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ছররা গুলি ছোঁড়ে বলে লিখেছে স্থানীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম৷
কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন৷ সরকারি চাকুরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চান শিক্ষার্থীরা৷ প্রতিবছর তিন হাজারের মতো সরকারি চাকুরির বিপরীতে চার লাখের মতো শিক্ষার্থী আবেদন করেন৷
আন্দোলনরতরা মনে করেন, কোটাভিত্তিক নিয়োগ বৈষম্য সৃষ্টি করে৷ তারা সরকারি চাকুরিতে কোটার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে ‘মেধাভিত্তিক' নিয়োগ চান৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ তার সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী কোটা আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করেছেন৷
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পঞ্চাশ জনেরও বেশি আহত ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আলী বিন সোলায়মান৷ তাদের অন্তত ত্রিশজনের শরীরে ছররা গুলি লেগেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
জাহাঙ্গীরনগর মেডিকেল সেন্টারে ১০০ জনের বেশি আহত শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেন্টারটির প্রধান শামসুর রহমান৷
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুশ' জনেরও বেশি আহত হয়েছেন৷ গভীর রাতে জাহাঙ্গীরনগর ছাড়াও আরো একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ সোমবার দিন এবং রাতে চলা এসব সংঘর্ষে সবমিলিয়ে চারশ'রও বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা ও পুলিশ৷
আন্দোলনরতদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে কোটা আন্দোলনকারীরা৷
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন করছি৷ এখানে তৃতীয় পক্ষের ঢোকার কোনো সুযোগ নেই৷ যৌক্তিক দাবি পূরণ করে দিলেই আমাদের আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে৷''
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যারা লালন করে না, তাদের হাতে আন্দোলনের ‘রিমোট কন্ট্রোল' চলে গেছে৷ ছাত্রলীগ রাজনৈতিকভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলন মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷''
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা, সরকারের প্রতিক্রিয়া
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের দিকে নজর রাখছে বলে জানিয়েছে৷ দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার যে-কোনো বিকাশমান গণতন্ত্রের অপরিহার্য ভিত্তিপ্রস্তর এবং আমরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের বিরুদ্ধে যে-কোনো ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানাই৷ যারা এই সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের প্রতি আমরা সহমর্মিতা জানাচ্ছি৷''
তবে ম্যাথু মিলার মার্কিন সময় সোমবার রাতে দেয়া তার বক্তব্যে ‘‘বিক্ষোভে হামলার শিকার হয়ে দুইজন নিহত’’ হওয়ার যে কথা বলেছেন ‘‘তার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই’’ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
‘‘কোনো রকম তথ্য যাচাই না করেই যুক্তরাষ্ট্রের এমন ভিত্তিহীন দাবি সহিংসতাকে উসকে দিতে পারে’’ বলেও মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুরে ঢাকায় মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন৷
এআই/এসিবি (এপি, এএফপি, দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো)