কোটার বিষয়ে আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থার আদেশ

শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পূর্ণ আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন৷

সুপ্রিম কোর্ট আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরতে ও পরীক্ষায় অংশ নিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদেরকে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে বলেছেন৷ প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল আবেদনের শুনানির সময় আমরা সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আইনজীবীদের মাধ্যমে যুক্তি শুনব৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেক হয়েছে, রাস্তা থেকে ক্লাসে যান৷''

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আইন বিশেষজ্ঞ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আদালতের এই আদেশের পর চার সপ্তাহের জন্য দেশে কোটা ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে না৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘সাবজেক্ট ম্যাটারের ওপর স্থিতি অবস্থা দিয়েছে চার সপ্তাহের জন্য৷ আগামী সাত আগস্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত৷ তখন আদালত রায় দেখে চূড়ান্ত বিবেচনা করবেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘আদালত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেছেন৷ উপাচার্যদের উদ্দেশে বলেছেন, তারা যেন শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখেন৷ ক্লাস করান৷ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা করলে শুনানিতে অংশ নিতে পারেন৷''

সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট করা হয়েছিল৷ যার চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ৫ জুন হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন৷

স্বাধীনতার পর থেকেই কোটা ছিল৷ বিভিন্ন সময় তা কম-বেশি হয়৷ ২০১৮ সালে কোটা ৫৬ শতাংশে এসে দাঁড়ায়৷ এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং এক শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা৷ পরবর্তীতে কোটায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তারপর নাতি-নাতনি যুক্ত করা হয়৷

কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে আন্দোলনে নামে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ৷ আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি তুলে দেয় সরকার৷

ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়৷ তাতে উল্লেখ করা হয়, নবম গ্রেড এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে৷ তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে (১৪তম থেকে ২০তম গ্রেড) কোটাব্যবস্থা বহাল রাখা হয়৷

ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন৷ ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়৷ রুলে পরিপত্রের পাশাপাশি এর আগে দেওয়া হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের আদেশ প্রতিপালন না করা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য অধিকারের প্রতি অবজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়৷ চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করা হয়৷

গত ৫ জুন রায় ঘোষণায়মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ার বাধা দূর হয়৷ ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে৷

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলাটিতে পক্ষভুক্ত হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান আবেদন করেন৷

এপিবি/এসিবি  (ডেইলি স্টার বাংলা)