কোবানিতে আইসিস পিছু হটছে, বলছে কুর্দ তরফ
১৬ অক্টোবর ২০১৪কোবানি থেকে ওয়াইপিজি কুর্দ সশস্ত্র গোষ্ঠীর এক কর্মকর্তা এএফপি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন যে, ইতিপূর্বে কোবানির ৩০ শতাংশ আইসিস-এর নিয়ন্ত্রণে ছিল; এখন তা ২০ শতাংশের কম হয়ে দাঁড়িয়েছে – বিশেষ করে আন্তর্জাতিক জোটের বিমান হানার ফলে৷ দৃশ্যত কুর্দ যোদ্ধারা এখন কোবানির পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন অংশ থেকে আইসিস যোদ্ধাদের ‘‘ফ্লাশ আউট'', অর্থাৎ বাড়ি বাড়ি থেকে বহিষ্কার করছে৷ ওয়াইপিজি কর্মকর্তাটি যুগপৎ বলেছেন যে, ‘‘আমাদের আরো বেশি বিমান হানার প্রয়োজন, সেই সঙ্গে স্থলযুদ্ধের জন্য অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ৷''
৪৮ ঘণ্টায় ৪০ বার
গত সোমবার যাবৎ মার্কিন বিমান কোবানিতে বিভিন্ন আইসিস লক্ষ্যের উপর ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় ৪০টি অভিযান চালিয়েছে: প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ২১টি এবং দ্বিতীয় ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৮টি৷ এর নানা কারণ আছে৷ পেন্টাগনের মুখপাত্র অ্যাডমিরাল জন কার্বি জানিয়েছেন যে, কোবানি এখন বস্তুত দু 'পক্ষের যোদ্ধাদের হাতে: কোবানির বাসিন্দাদের ‘‘একটা বড় অংশ'' শহর ছেড়ে পালিয়েছে; শহরে এখন মাত্র ‘‘কয়েক'শ'' মানুষ পড়ে আছে, বলে মার্কিন তরফের ধারণা৷
কোবানি ও তার চারপাশে বিমান হানা বাড়ানো হলো কেন, এ ব্যাপারে কার্বি বলেছেন যে, সেটা সুযোগ দেখা দিয়েছে বলে; কোনো রণকৌশলের অঙ্গ হিসেবে নয়৷ ইরাকে প্রতিরোধ বেড়েছে বলেই সম্ভবত আইসিস অধিনায়করা কোবানির উপর চাপ বাড়িয়েছেন – যার ফলে মার্কিন বিমানবাহিনী কোবানির আশেপাশে আরো বেশি লক্ষ্য খুঁজে পাচ্ছে, বলেছেন অ্যাডমিরাল কার্বি৷ তিনি আরো জানিয়েছেন যে, কোবানির চারপাশে মার্কিন বিমান হানায় সম্ভবত ‘‘বেশ কয়েক'শ'' আইসিস যোদ্ধা নিহত হয়েছে৷
কোবানিতে বিমান হানা বাড়ার আরেকটি কারণ হলো, ইরাকের আইসিস-অধিকৃত এলাকাগুলিতে আবহাওয়া খারাপ থাকার ফলে মার্কিন অধিনায়করা আরো বেশি বিমান ও বৈমানিক কোবানির দিকে প্রেরণ করার সুযোগ পেয়েছেন৷ তবুও কোবানিতে একটি ‘‘তরল পরিস্থিতি'' বিরাজ করছে, বলে কার্বি মন্তব্য করেন: ‘‘লোকের এটা জানা দরকার যে, কোবানির এখনও পতন ঘটতে পারে'' – অর্থাৎ আইসিস কোবানি জয় করতে পারে৷
অপারেশন ইনহেয়ারেন্ট রিজল্ভ
কোবানির কুর্দ যোদ্ধাদের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, ওয়াইপিজি-র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক জোটকে আইসিস টার্গেটগুলির অবস্থান জানাচ্ছেন – যদিও কিভাবে, তা কুর্দ অথবা মার্কিন, কোনো তরফ থেকেই জানানো হয়নি৷ অপরদিকে আন্তর্জাতিক জোট দৃশ্যত কোবানির কাছে, তুর্কি সীমান্তের অপরপার থেকে পর্যবেক্ষকদের পাঠানো খবরাখবর, এছাড়া চালকবিহীন ড্রোন থেকে তোলা ভিডিও ছবির উপরেও নির্ভর করছে৷
মার্কিন মিলিটারি এবার ইরাক ও সিরিয়ায় জিহাদীদের বিরুদ্ধে গত দু'মাস ধরে চলমান অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন ইনহেরেন্ট রিজল্ভ' – অর্থাৎ অন্তর্নিহিত দৃঢ়তা৷ ওদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইটালির সরকারপ্রধানদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বলেছেন যে, অভিযানের সামরিক দিকটা হলো শুধু একটা অঙ্গ; সেই সঙ্গে আইসিস-এর অর্থ ও সদস্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা রোধ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন৷
কূটনৈতিক রণাঙ্গণের অপরাপর খবরের মধ্যে বলা যেতে পারে যে, সিরিয়া তুর্কি সীমান্তে একটি ‘বাফার জোন' সৃষ্টি করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে৷ এছাড়া জার্মানি থেকে একটি ছোট্ট অথচ গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো এই যে, চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী সিডিইউ দলের সংসদীয় গোষ্ঠীর প্রধান ফল্কার কাউডার মন্তব্য করেছেন: ‘‘(কুর্দ বিদ্রোহী গোষ্ঠী) পিকেকে-কে নিয়ে তুরস্কের যে সমস্যা আছে, তা আমি জানি; তা সত্ত্বেও: আইসিস যে একটির পর একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত শহর (অর্থাৎ কোবানি) দখল করবে এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য আরো বড় বিপদ সৃষ্টি করবে, সেটা কোনো সমাধান হতে পারে না৷''
তবে কি কাউডার পরোক্ষভাবে বলছেন যে, জার্মানি পিকেকে-কে অস্ত্রপ্রদানের কথা বিবেচনা করতে পারে?
এসি/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)