আগে পশ্চিমবঙ্গ জিততে চান মোদী
১৯ এপ্রিল ২০২১পশ্চিমবঙ্গে চলতি বিধানসভা ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যতবার এবং যেরকম ঘন ঘন রাজ্যে এসেছেন, তা বেনজির৷ যদিও কোভিড পরিস্থিতি বিচার করে রাজনৈতিক দলগুলি একে একে গণ কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ব্যতিক্রম বিজেপি৷ মোদি, শাহ, নাড্ডাদের রাজ্যে আসা এবং জনসভা করার কর্মসূচি অব্যাহত৷ সারা দেশে যখন কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় দফার ঢেউ আছড়ে পড়ছে, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বার বার জরুরি সাহায্য চেয়ে বার্তা গেছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে, প্রতিবারই শুনতে হয়েছে, দেশের সরকার প্রধান পশ্চিমবঙ্গের ভোট নিয়ে খুব ব্যস্ত৷ তিনি প্রচারের দায়িত্ব থেকে ফুরসৎ পেলেই, ইত্যাদি৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অবধারিতভাবেই মনে পড়ে যাচ্ছে গুজরাট দাঙ্গার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ির সেই ঐতিহাসিক উক্তির কথা৷ নরেন্দ্র মোদি তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী৷ রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে প্রশাসনিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য কার্যত রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ি নরেন্দ্র মোদিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন প্রজা পালনের রাজধর্মের কথা৷ নিজের দলের রাজনৈতিক দায়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসনিক দায়িত্বকে কি অস্বীকার করলেন না প্রধানমন্ত্রী?
উঠছে প্রশ্ন৷ কিন্তু দেশের সংবিধান কী বলে এই বিষয়ে? প্রধানমন্ত্রী প্রচারে ব্যস্ত বলে কোভিড নিয়ন্ত্রণের আর্জিতে কান দিতে পারছেন না— এই ব্যাপারে আইন কী বলে?
‘‘আইন নির্দিষ্ট করে কিছুই বলে না৷''বললেন বিশিষ্ট আইনজীবী এবং কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ৷ তার সোজা কথা, ‘‘আপনি কী রকম মানুষ, আপনি কোনটাকে গুরুত্ব দেবেন, প্রাধান্য দেবেন, তার উপরেই সব নির্ভর করে৷ কিন্তু এই প্রধানমন্ত্রী, এই সরকারের থেকে সেরকম কিছু প্রত্যাশা না করাই ভাল৷''অরুণাভ ঘোষ সরাসরি কটাক্ষ করেছেন, সেই দায়িত্ববোধ পড়াশোনার উপর নির্ভর করে৷ যে কোনটা প্রাধান্য দেওয়া হবে৷ প্রধানমন্ত্রী যদি ভাবেন পশ্চিমবঙ্গে যে করেই হোক জিততে হবে, সেটাই তার প্রায়োরিটি, তা হলে কিছু করার নেই৷
অথচ যে রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী, বা বিজেপির অন্যান্য নেতারা নিয়মিত প্রচারে আসছেন, সেখানকার অবস্থা সত্যি সঙ্গিন৷ সংক্রমণের হিসেবে রাজ্যের শীর্ষে আছে কলকাতা৷ সেখানে কোভিড হাসপাতালগুলি প্রায় ভর্তি৷ কোথাও জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না৷ অক্সিজেনের জোগানে টান পড়েছে৷ এমনকী কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করতে যে ওষুধগুলি প্রয়োজন, তার মজুতেও টান পড়েছে৷ আড়ালে শুরু হয়ে গেছে ওষুধের কালোবাজারি এবং কার্যত যথেচ্ছাচার হচ্ছে৷