কোরবানি পর্যন্ত ‘লকডাউন’ রাখার তাগিদ
২৯ এপ্রিল ২০২১বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যু হার একটু কমে আসছে৷ আর সেই সাথে শিথিল হয়ে আসছে লকডাউন৷ আগামী ৫ মে পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হলেও গণপরিবহন ছাড়া আর সব কিছুই এখন খোলা৷ গণপরিবহনও চালুর দাবি জানানো হয়েছে৷
আর করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ঈদের পর ২৩ মে থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে বলে মাধমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে৷
গত ১৪ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে ‘কঠোর লকডাউন' শুরু হয়৷ এরপর দুই দফা বড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত করা হয়েছে৷ তবে দোকানপাট,শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকছে৷
এদিকে ভারতের সাথে বাংলাদেশে স্থল সীমান্ত বন্ধ রয়েছে৷ তবে পণ্য পরিবহন অব্যাহত আছে৷ বিমান যোগাযোগও বন্ধ আছে৷
বিএসএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ভারতের অবস্থা বাংলাদেশে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ এখনো বাংলাদেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটির উপস্থিতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ তবে সেটা যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে৷”
করোনা বাংলাদেশে ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু কয়েকদিন ধরে একশ'র নিচে আছে আর সংক্রমণের হারও কমছে৷ কিন্তু একই সঙ্গে পরীক্ষাও কমছে৷ বৃহস্পতিবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে ৮৮ জন মারা গেছেন৷ সনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৩৪১ জন৷ ২৪ ঘন্টায় সনাক্তের হার কমে শতকরা ৯.৪৯ ভাগ হয়েছে৷
এপর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় মারা গেছেন ১১ হাজার ৩৯৩ জন৷ আর সনাক্ত হয়েছেন সাত লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৫ জন৷
আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হেসেন বলেন, ‘‘পরীক্ষা বাড়তে হবে৷ আর পরীক্ষার ফি তুলে দিতে হবে বা আরো কমতে হবে৷ ততে টেস্ট বাড়বে এবং বাস্তব অবস্থা আরো ভালোভাবে বোঝা যাবে৷ সংক্রমণ এখনো ১০ ভাগের মত আছে৷ এটা শতকরা পাঁচভাগের নিচে না নামলে কমছে বলা যাবে না৷”
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে, লকডাউন হচ্ছে না৷ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে৷ তবে এটা আরো তিন- সাড়ে তিন মাস অব্যাহত রাখতে হবে৷ নাহলে পরস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে৷''
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ কেনোভাবেই এখনো আশঙ্কার বাইরে যেতে পারেনি৷ আর এখন একটু কমছে, দুইদিন পর যে বাড়বে না তা কেউ বলতে পারে না৷ করোনার টিকা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে৷ তাই এখন স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া উপায় নেই৷ মাস্ক পরতেই হবে৷ স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করার কোনো সুযোগ নাই৷
এখন দোকান, শপিংমল, মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মানাই বড় চ্যালেঞ্জ৷ গণপরিবহন চালু হলে এই চ্যালেঞ্জ আরো বাড়বে বলে মনে করেন ডা. মুশতাক হোসেন৷ বদ্ধ ঘরে কোনো সমাবেশ, অনুষ্ঠান করা যাবে না৷ আর এগুলো করতে হবে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে৷
তিনি বলেন, কিছুটা হলেও লকডাউনের সুফল পওয়া যাচ্ছে৷ আরো দুই সপ্তাহ পর ফলাফল আরো ভালো বোঝা যাবে৷ তবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে কোরাবানির পরেও লকডাউন চালিয়ে যেতে হবে৷
করোনার রোগীদের জন্য বেড এবং আইসিইউ বেডের সংকট অব্যাহত আছে৷ গত ২৪ ঘন্টায় ঢাকার সরকারি হাসপাতালে ৫৮টি আইসিইউ বেড খালি দেখানো হলেও রোগীরা আইসিইউ বেড না পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন ন৷ ফলে কেউ কেউ বাসায় মারা যাচ্ছেন৷ গত ২৪ ঘন্টায় বাসায় মারা গেছেন তিন জন৷
দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে মানুষের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুতই বিকল্প উৎস থেকে টিকা আনতে হবে৷