কোরবানির পশুর হাটে জমে উঠেছে কেনাবেচা
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে প্রতিবারের মতো রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পশু বেচাকেনা চলছে। ঈদের আর বাকি একদিন। শেষের দিকে এসে জমতে শুরু করেছে হাট। ঢাকার কয়েকটি কোরবানির হাট দেখুন ছবিতে৷
ট্রাকে করে হাটে
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকে করে গরু-ছাগল ঢাকার হাটগুলোতে বিক্রির জন্য আনা হয়। ব্যাপারিরা বলছেন, গতবারের তুলনায় এবার গরু কম এসেছে। ট্রাক থেকে নামানোর সময় গরুকে নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকেন ব্যাপারি ও রাখালরা। ছবিটি গাবতলী হাটে তোলা।
দুই সিটিতে ১৯ হাট
ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন স্থানে এবার ১৯টি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে স্থায়ী হাট ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) গাবতলী এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) সারুলিয়া। অস্থায়ী হাটগুলোর মধ্যে ডিএসসিসি এলাকায় বসবে ১০টি আর ডিএনসিসি এলাকায় রয়েছে ৭টি।
নারীদের উপস্থিতি
কোরবানির পশুর হাটে সাধারণত বয়স্ক ও তরুণ পুরুষ ক্রেতা সমাগম বেশি হয়ে থাকে। তাদের পাশাপাশি নারীরাও আসেন। তবে তাদের সংখ্যা খুব কম। মোহাম্মদপুরের বসিলায় বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন খালি জায়গায় অস্থায়ী পশুর হাটের চিত্র।
বিনামূল্যে মাস্ক
পশুর হাটে ডিএনসিসি এবং বেসরকারি সংস্থা শক্তি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। আফতাবনগরে ইস্টার্ন হাউজিং ব্লক-ই-এফ-জি-এইচ পর্যন্ত এলাকার খালি জায়গায় বসানো কোরবানির হাটে এমন একটি গাড়ি থাকে দিনভর।
হাটের প্রবেশমুখে দড়ি-খড়
আফতাবনগর হাটের প্রবেশমুখে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দড়ি। আকারভেদে প্রতিটির দাম ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা। দড়ির পাশাপাশি গরুর অন্যতম খাদ্য খড় বিক্রি হয় ২০-৩০ টাকা কেজিতে।
বাহারি মালা
কোরবানির পশুকে সাজালে সবার মধ্যে অন্যরকম আনন্দ হয়। ক্রেতা-বিক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ব্যাপারিরাও উদ্যোগ নেন। এজন্য বিভিন্ন হাটে গরু-ছাগল সাজানোর বাহারি জিনিস ফেরি করেন মৌসুমি বিক্রেতারা। গরুর গলার মালার দাম ৭০ থেকে ২০০ টাকা। একটু বড় আকারের মালার দাম ১০০ থেকে ৩৫০ টাকা। আফতাবনগর হাটে ছবিটি তোলা।
গরুর জন্য ফ্যান
বাংলাদেশের এখন ভীষণ গরম। হাটে গরম আরো বেশি। এ কারণে আফতাবনগর হাটে একটি গরুর সামনে এভাবে স্ট্যান্ডিং ফ্যান চালিয়ে রাখতে দেখা গেল।
গরমে কাহিল ২৫ লাখ টাকার ‘বিগ বস’
কিশোরগঞ্জ থেকে গাবতলী হাটে আসা ‘বিগ বস’ গরমে পরিশ্রান্ত হয়ে একপর্যায়ে এভাবে শুয়ে পড়ে। ৪৩ মণ ওজনের পশুটির দাম হাঁকা হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা।
পশুর খাবার
গরু-ছাগলের খাদ্য হিসেবে কাঁচা ঘাস কিনে থাকেন ব্যাপারিরা। তাদের জন্য মৌসুমি বিক্রেতারা পসরা সাজিয়েছেন। আফতাবনগর সড়কে এই দৃশ্য চোখে পড়লো। একেক আঁটি ঘাসের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা। ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও বসিলা থেকে আসে ঘাস।
হাটে খাওয়া-দাওয়া
কোরবানির হাটে গরুর পরিচর্যা করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাখালসহ অন্যান্য কাজের লোকেরা ঢাকায় আসেন। খরচ কমাতে তারা নিজেরাই হাটের এককোণে রান্না করেন। এরপর সবাই মিলে খেয়ে নেন। মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকে ছবিটি তোলা।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকার প্রতিটি কোরবানির হাটে পুলিশ ও র্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ রয়েছে।
খুলনা বিভাগের ‘সুলতান’
আফতাবনগর হাটে সবচেয়ে সুদৃশ্য গরু ‘সুলতান’। খুলনা থেকে আসা ৪৫ মণ ওজনের এই পশুর দাম হাঁকা হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা। ব্যানারে দাবি করা হয়েছে, এটি খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় গরু।
বিজ্ঞাপনে বরিশালের ‘রাজা বাবু’
‘‘মাশা-আল্লাহ! দর্শকের দৃষ্টিতে গাবতলী হাটের শ্রেষ্ঠ গরু’’– এমন কথা দিয়ে সাজানো ব্যানার মনযোগ আকর্ষণ করছে অনেকের। বরিশাল থেকে আনা গরুটির দাম হাঁকা হচ্ছে ২০ লাখ টাকা।
ডিজিটাল পেমেন্ট বুথ
কোরবানির পশু বেচাকেনার লেনদেন নিরাপদ ও সহজ করতে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’ প্রতিপাদ্য নিয়ে গাবতলী হাটে ডিজিটাল পেমেন্ট বুথ দিয়েছে ডিএনসিসি। এখানে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের এটিএম মেশিন আছে। ব্যাপারিরা চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গরু বিক্রির টাকা পাঠাতে পারছেন। এর কার্যক্রম চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
‘ভাই, কত নিলো?’
হাট থেকে গরু-ছাগল কিনে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে একটা প্রশ্ন সবাইকেই শুনতে হয়, ‘ভাই. কত নিলো?’ উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি কোরবানির পশুর সঙ্গে সেলফিও তোলেন অনেকে। আফতাবনগর এলাকা থেকে ছবিটি তোলা।
হাসিল ঘর
গরু-ছাগল কিনে নিয়ম অনুযায়ী ক্রেতাকে হাসিল দিতে হয়। এটি হলো পশুর হাটের ভাড়া। হাট কর্তৃপক্ষ এই টাকা পেয়ে থাকে। পশুর হাটে হাসিল ঘরে প্রতিদিন ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে। গাবতলী হাটের চিত্র।
ছাগলের হাট
কোরবানির জন্য গরু কেনাবেচা হয় বেশি। তবে ছাগলের প্রতিও আগ্রহ দেখা যায় অনেকের। আফতাবনগরে খোলা আকাশের নিচে বিশাল জায়গা জুড়ে ছাগল বিক্রির জন্য এনেছেন ব্যাপারিরা।
ব্যস্ত কামারপট্টি
কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে এলে কামারদের ব্যস্ততা পুরোদমে বেড়ে যায়। ছুরি, চাপাতি, দা, বটি তৈরি এবং যন্ত্রের মাধ্যমে শান দেওয়ার কাজ করছেন তারা। রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজারে কামারপট্টি এখন টুংটাং টুংটাং শব্দে মুখর।
ঈদের আগের দিনের অপেক্ষা
কাওরান বাজারে বিভিন্ন দোকানের সামনে এভাবে সাজিয়ে রাখা হয় কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটাকাটির বিভিন্ন সরঞ্জাম। তবে ক্রেতা কম। ঈদের আগের দিন বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। তাই বিক্রেতারা সেজন্য অপেক্ষা করেন।
১ কোটির বেশি পশু
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এবারের ঈদুল আজহায় দেশে কোরবানিযোগ্য মোট পশু রয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি। এরমধ্যে গরু ৪৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯৭টি, মহিষ ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫০৪টি, ছাগল ৬৫ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৫টি, ভেড়া ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮২টি এবং ১ হাজার ৪০৯টি অন্যান্য পশু রয়েছে।
ডিজিটাল হাট
গতবারের মতো এবারও ডিজিটাল কোরবানির হাট বাস্তবায়ন করেছে ডিএনসিসি, ই-ক্যাব ও বিডিএফএ। কারিগরি সহযোগিতায় এটুআই’র অনলাইন প্ল্যাটফর্ম একশপ। এছাড়া বেসরকারি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অনলাইনে কোরবানির পশু সরবরাহ করছে।
লেখা: জনি হক (ঢাকা)
ছবি: রাজিব পাল