ক্যালিফোর্নিয়ায় ‘বিশ্বের অ্যাকোয়ারিয়াম'
১৫ জুলাই ২০১৫গাল্ফ অফ ক্যালিফোর্নিয়ায় ইসাবেল দ্বীপ৷ মেরিন বায়োলজিস্ট জাক-ইভ কুস্তো একবার এলাকাটির নাম দিয়েছিলেন ‘বিশ্বের অ্যাকোয়ারিয়াম'৷ ধীবর ফেলিসিয়ানো মেন্দিয়াস গনসালেস বলেন, ‘‘আমরা সবাই এই দ্বীপের ওপর নির্ভরশীল, আমি, আমার স্ত্রী, আমার ছেলে, গোটা পরিবার৷ এই দ্বীপ আমাদের সম্পদ৷ এর ভালোমন্দ আছে, যেমন জীবনেরও ভালোমন্দ আছে৷ আমরা এই দ্বীপ নিয়েই বেঁচে আছি৷''
এদের বাস দ্বীপ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে, মূল ভূখণ্ডে৷ কিন্তু মাছ ধরতে বেরিয়ে এরা অনেক সময় দ্বীপে রাত কাটান৷ ফেলিসিয়ানো-র ভাষ্যে, ‘‘বড় ট্রলার দিয়ে মাছ ধরা আর আমরা ছোট জেলেদের মাছধরার ফলে মাছ পাওয়া ক্রমেই আরো শক্ত হয়ে উঠছে৷ আগে দু'টো বা তিনটে জাল পাততাম; আজ আমরা পাঁচটা করে জাল ছাড়ি৷''
প্রাণীবৈচিত্র্য
আগ্নেয়গিরি থেকে দ্বীপটার সৃষ্টি৷ গত ১৫ বছর যাবৎ এটি একটি সরকারিভাবে সংরক্ষিত এলাকা৷ এখানকার প্রাণীবৈচিত্র্য মেক্সিকোর বাইরেও সুপরিচিত৷ দ্বীপের এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় হাজার হাজার সামুদ্রিক পাখি ভিড় করে৷
জার্মান উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড-এর গবেষকরা মেক্সিকোর ন্যাশনাল পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একযোগে কাজ করে ইসাবেল দ্বীপের চারপাশের সামুদ্রিক এলাকাটিকেও সংরক্ষিত ঘোষণা করার চেষ্টা করছে৷ ইসাবেল দ্বীপ ন্যাশনাল পার্কের প্রধান খর্খে কাস্ত্রেখন পিনিয়েদা বলেন, ‘‘এখানে গোটা অঞ্চলের নানা ধরনের মাছ বিপুল সংখ্যায় দেখতে পাওয়া যায়৷ মজার কথা, গাল্ফ অফ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে শুরু করে কোস্টা রিকা আর অন্যান্য দেশ থেকে আসা সামুদ্রিক স্রোত এখানে পৌঁছায় – যা কিনা প্রাণীবৈচিত্র্য বৃদ্ধির জন্য অনন্য৷''
সেই প্রাণীবৈচিত্র্য এখানেও অক্ষত নেই৷ বিজ্ঞানীরা চান, দ্বীপের অব্যবহিত কাছে মাছধরা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হোক৷
পাখির পরে মাছ?
আরো মাছ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীকে এখানে আনানোর প্রচেষ্টায় বায়োলজিস্টরা কয়েক সপ্তাহ আগে একাধিক কৃত্রিম ‘রিফ' বা প্রবালদ্বীপ সৃষ্টি করেছেন৷ এবার তারা ডুবুরি হয়ে জলের নীচে নেমে দেখতে চান, সে প্রচেষ্টা সফল হয়েছে কিনা৷
গুয়াদালাহারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী আমিলকার কুপুল মাগানিয়া উচ্ছ্বসিত৷ তিনি বলেন, ‘‘যা দেখলাম, তাতে আমি খুব খুশি, সব কিছু ঠিকঠাক চলেছে৷ নতুন নতুন সামুদ্রিক শ্যাওলা, পাশের এলাকাগুলোর চেয়ে অনেক বেশি মাছ, নানা ধরনের মাছ৷ কাজেই আমরা আমাদের লক্ষ্য সাধন করেছি, বলা চলে৷''
হঠাৎ একটি হোয়েল-শার্ক বা তিমি-হাঙর! দ্বীপের চারপাশের এলাকাটি তার খাবার খোঁজার জায়গা৷ ওদিকে সে নিজেই বিজ্ঞানীদের কাছে পরম কৌতূহলের বস্তু৷
পাখি বাঁচাতে হলে চাই মাছ
দ্বীপের পাখিগুলোর কোনো স্বাভাবিক শত্রু নেই৷ দ্বীপে যে ক'টি মানুষ আসেন, পাখিরা তাদের বিশেষ ভয় পায় না৷ গ্যানেট পাখি আর ফ্রিগেট বার্ডরা এখানে তাদের ছানাপোনা মানুষ করতে পারে৷ সৈকতগুলোতে যথেষ্ট খাদ্য পাওয়া যায়৷ জাতীয় উদ্যানটির পরিচালকের বহুবছরের প্রচেষ্টা হলো, মাছধরার ট্রলারগুলো যেন ইসাবেল দ্বীপের ধারে-কাছে না আসে৷ তিনি বলেন, ‘‘শুধু দ্বীপকে সংরক্ষিত করে লাভ নেই, আশপাশের সমুদ্রকেও সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে এখানকার প্রাণীবৈচিত্র্য বজায় থাকে৷ মাছেদের বাঁচাতে হবে, যাতে পাখিরা তাদের খাবার পায়৷ জেলেদেরও মাছ চাই, যাতে তারা আরো বেশি মাছ ধরতে পারে৷''
বিজ্ঞানীরা জেলেদের সঙ্গে সংযোগ রেখে চলেন – ইতিমধ্যে তারাও বুঝেছে যে, দ্বীপের চারপাশের এলাকা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন৷ ধীবর হোসে মার্তিন সাঞ্চেস বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য হবে, এখানকার মাছধরার পেশা আর ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের জন্যও বাঁচিয়ে রাখা৷ আমার ছেলে ইতিমধ্যেই জেলে হতে চায়, আমিও চাই, মাছধরা ওর পেশা হোক৷ এখান থেকে একজনকে যেতে হলে, আমাদের সকলকেই যেতে হবে৷''
পাখিরাও যদি একদিন কোনো খাবার না খুঁজে পায়, তাহলে তারাও বিদায় নেবে...