ক্রিকেট ইতিহাসে বোর্ড ও ক্রিকেটারের বিবাদ
ক্রিকেটের বোর্ড বা ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্বে জড়ানোর অনেক উদাহরণ আছে৷ এমনকি ডন ব্র্যাডম্যানও বাদ যান না সেই তালিকা থেকে৷ কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো ছবিঘরে৷
ব্র্যাডম্যানের হুমকি
ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরাকেও বোর্ডের সঙ্গে বিবাদে জড়াতে হয়েছিল৷ সময়টা ১৯৩১ সাল৷ লেখালেখির জন্য অ্যাসোসিয়েট নিউজপেপারের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করেন ডন ব্র্যাডম্যান৷ অস্ট্রেলিয়ান বোর্ড অব কন্ট্রোল তাতে বাধ সাধে৷ ব্র্যাডম্যানও সাফ জানিয়ে দেন প্রয়োজনে ক্রিকেট ছাড়বেন তবু চুক্তির অসম্মান করবেন না৷ বিষয়টির সুরাহা হয়েছিল অ্যাসোসিয়েট নিউজপেপারের সম্পাদকীয় প্রধানের মধ্যস্থতায় চুক্তি বাতিলের মাধ্যমে৷
অসিদের টালমাটাল দশক
১৯৭০-এর দশকে খেলোয়াড়াদের সঙ্গে বোর্ডের টানাপোড়েনে অচলাবস্থা তৈরি হয় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে৷ বেতন বাড়ানোর দাবিতে ১৯৭৫ সালে এক পর্যায়ে ক্রিকেটাররা ধর্মঘটেরও হুমকি দেন৷ জবাবে একটি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তখনকার ক্রিকেট বোর্ডের সেক্রেটারি অ্যালান বার্নার বলেছিলেন, পাঁচ লাখ ক্রিকেটার আছেন, যারা বিনা পয়সায় অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে চাইবেন৷ ছবিতে, ১৯৬৩ সালের অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা৷
ক্যারি প্যাকারের ‘বিদ্রোহী লিগ’
অস্ট্রেলিয়ার ‘মিডিয়া টাইকুন’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন ক্যারি প্যাকার৷ ১৯৭৬ সালে নিজের মালিকানার চ্যানেল নাইনকে টেস্ট ম্যাচ সম্প্রচারের স্বত্ত্ব না দেয়ায় বোর্ডের উপর ক্ষুব্ধ হন৷ প্রতিশোধ হিসেবে ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট নামে আলাদা লিগ চালু করেন৷ ব্যক্তি মালিকানার সেই টুর্নামেন্টের ছিল তিন দল, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর বিশ্ব একাদশ৷ বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ডে বড় ধাক্কা লাগে এই টুর্নামেন্টের জেরে৷
গ্রেগ চ্যাপেল থেকে টনি ক্রেগ
বেতন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় গ্রেগ চ্যাপেলের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা নাম লেখান প্যাকারের টুর্নামেন্টে৷ এমনকি ইংল্যান্ডের অধিনায়ক টনি ক্রেগ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড, পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক ইমরান খান, নিউজিল্যান্ডের রিচার্ড হ্যাডলি পর্যন্ত যোগ দিয়েছিলেন বিতর্কিত এই সিরিজে৷ মাত্র তিন বছর চললেও দিবারাত্রি ম্যাচ, সাদা বল থেকে শুরু করে আধুনিক ক্রিকেটের অনেক কিছুরই অবদান এই টুর্নামেন্টের৷
ভারতের বৃহৎ ছয়
সময়টা ১৯৮৮৷ অধিনায়ক দিলীপ ভেংসরকারের (ছবিতে) সাথে বিসিসিআই-এর সম্পর্ক আগে থেকেই খারাপ যাচ্ছিল৷ সঙ্গে যোগ দেন কপিল দেব, কিরণ মোরে, অরুন লাল, আজহারউদ্দিন ও রবি শাস্ত্রী৷ ম্যানেজমেন্টকে শর্ত মানাতে বাধ্য করে চুক্তি সই করেন তারা৷ এক বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে ক্যানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শনী ম্যাচে অংশ নেয়ায় ছয়জনকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে বোর্ড৷ আদালতের মধ্যস্থতায় পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়৷
বিতর্কিত কপিল
ভারতের ক্রিকেট গ্রেটদের তালিকায় কপিল দেবের নামটি চোখ বন্ধ করেই আসবে৷ তার হাতেই উঠেছিল দেশটির প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপাও৷ কিন্তু বিতর্কের পাল্লাটাও কম ভারি নয় কপিলের জন্য৷ খেলোয়াড়ী জীবনে সতীর্থ সুনিল গাভাস্কারের সঙ্গে ‘কথিত’ দ্বন্দ্ব আর খেলা ছাড়ার পরে বিদ্রোহী ক্রিকেট লিগ হিসেবে পরিচিত আইসিএল দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের চক্ষুশূল হয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার৷
নির্বাচকরা জোকারের দল!
ভারতের আরেক কিংবদন্তী ক্রিকেটার মহিন্দর অমরনাথ৷ সুনীল গাভাস্কার যাকে ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে সাহসী ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিহিত করেছিলেন৷ তবে টেস্ট দলে তার জায়গাটা তেমন পাকাপোক্ত ছিল না৷ সব সময়ই থাকতেন আসা-যাওয়ার মধ্যে৷ এমন পরিস্থিতিতে ১৯৮৮ সালে তিনি ভারতীয় নির্বাচকদের অভিহিত করেছিলেন ‘একগুচ্ছ জোকার’ বলে৷ পরে নিজেও অবশ্য নির্বাচক হয়েছেন৷ বোর্ডের সঙ্গে সেসময় দ্বন্দে জড়িয়ে খবরের শিরোনামও হয়েছেন৷
হিথ স্ট্রিক ও সতীর্থরা
দল নির্বাচন নিয়ে প্রতিবাদ ও নির্বাচকদের সমালোচনার জেরে ২০০৪ সালে বরখাস্ত হন জিম্বাবোয়ের অধিনায়ক হিথ স্ট্রিক৷ মাত্র ৩০ বছর বয়সেই খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানতে বাধ্য হন দেশটির বিশ্বমানের এই বোলার৷ তবে স্ট্রিকের বিদায়ের প্রতিবাদ, ন্যুনতম মজুরি ও খোলোয়াড়দের অ্যাসোসিয়েশন গঠনের দাবিতে দরখাস্ত দেন তার ১৫ সতীর্থ৷ পরে তারাও দেশের হয়ে খেলতে অস্বীকৃতি জানান৷
গেইলদের বিদ্রোহ
২০০৫ সালের স্পন্সর চুক্তির পর থেকেই খেলোয়াড়দের নিয়ে সংকটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড৷ সবচেয়ে বড় তিক্ততাটি তৈরি হয় ২০০৯ সালের বার্ষিক চুক্তির সময়ে৷ ক্রিস গেইল, শিবনারায়ন চন্দরপাল, ডোয়াইন ব্রাভোসহ আরো দশ খেলোয়াড় চুক্তি করতে অস্বীকৃতি জানায়৷ ফলাফল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আনকোরা দল নিয়ে ভরাডুবির শিকার হয় ক্যারিবীয়রা৷ খেলোয়াড়-বোর্ডের এই দ্বন্দ্বে এখনও ধুঁকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট৷
সাম্প্রতিক উদাহরণ
বোর্ডের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক কেভিন পিটারসনের৷ পাওনা নিয়ে খেলোয়াড়দের অ্যাসোসিয়েশন আর বোর্ডের দ্বন্দ্বে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে অচলাবস্থা তৈরি হয় ২০১৭ সালেও৷ পাকিস্তানেও বোর্ডের সঙ্গে ক্রিকেটারদের দূরত্ব আছে৷ সবশেষ পেসার আমীর নিজের ক্যারিয়ারের জন্য দুষেছেন বোর্ডকে৷ ১১ দফা দাবিতে সাকিবের নেতৃত্বে ২০১৯ সালে নজিরবিহীন ধর্মঘটের ডাক দেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা৷