ক্রিকেট ছাড়া অন্য খেলাগুলো যেমন চলছে
ক্রিকেট ছাড়া বাংলাদেশের অন্য সব খেলায় চরম অর্থ সংকট রয়েছে৷ নেই পর্যাপ্ত অবকাঠামো৷ স্পন্সরদের আগ্রহও কম৷ এসব নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন কয়েকটি ফেডারেশনের কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়েরা৷
রিফাত বিন সাত্তার, গ্র্যান্ডমাস্টার দাবাড়ু
বাজেটের দিক দিয়ে দাবা ফেডারেশন অবশ্যই অবহেলিত৷ আমি মনে করি, যতগুলো ফেডারেশন আছে তার মধ্যে যে ফেডারেশনগুলো সাফল্য দেখাচ্ছে তার মধ্যে দাবা অন্যতম৷ সাফল্য বিচারে যে বাজেট এখানে পাওয়ার কথা, তা কিন্তু পাচ্ছে না৷ এখানে বাজেট অসম্ভব রকমের অপ্রতুল৷ অন্য যে-কোনো খেলার চেয়ে এখানে একটু বিনিয়োগ করলেই রিটার্নটা অনেক বেশি৷
আসাদুজ্জামান কোহিনুর, বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশন
সরকার আমাদের সাহায্য করে৷ কিন্তু সরকার আসলে কতটুকু করতে পারে? টুর্নামেন্ট হলে আমাদেরই স্পন্সর জোগাড় করতে হয়৷ হ্যাঁ, সরকার যেটা পারে প্রশিক্ষণের বা উন্নয়নের দায়িত্ব নিতে৷ অবকাঠামো সরকারকেই গড়ে দিতে হবে৷ এসব ব্যাপারে সরকার সহযোগিতা করে৷ কিন্তু আমাদের বাজেটটা একেবারেই অপ্রতুল৷ যে টাকা পাই তা দিয়ে কর্মচারীদের বেতনই হয় না৷
খোরশেদুর রহমান, জাতীয় হকি দলের খেলোয়াড়
ক্রিকেট বা ফুটবলে একটু ভালো করলেই ফলাও করে মিডিয়ায় আসে৷ সম্প্রতি আমরা একটা টুর্নামেন্ট জিতেছি, কিন্তু মিডিয়াতে আসেনি৷ ১৫০ দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান ২৯তম৷ কিন্তু আমাদের প্লেয়ারদের কোনো সম্মানী নেই৷ শুধু ক্যাম্প শুরু হলে প্রতিদিন ৪০০ টাকা পাই৷ আর দেশের বাইরে গেলে এখন প্রতিদিন ১৫ ডলার দেওয়া হয়৷ যেখানে ভারত বা পাকিস্তানের একটা প্লেয়ার দেশের বাইরে গেলে প্রতিদিন ২০০ ডলার পায়৷ আমরা সত্যি অবহেলিত৷
মো. মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশ সার্ফিং এসোসিয়েশন
আমরা তো অবশ্যই অবহেলিত৷ আমরা তো কারও সাহায্য পাই না৷ আমাদের জন্য সরকারি কোনো বাজেটও নেই৷ ফেডারেশনের অফিস খরচ বাবদ সামান্য কিছু পাই৷ আমরা নিজেরা কিছু টাকা পকেট থেকে দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছি৷ আমাদের বাজেট কম, কিন্তু খরচ অনেক বেশি৷ আমাদের তো প্রতিদিনই ট্রেনিং দিতে হয়৷ সেখানে তো খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়৷
নজরুল হোসেন অয়ন, গলফার ও দ্যা গলফহাউজ ম্যাগাজিনের সম্পাদক
গলফ কিন্তু অবহেলিত না৷ কারণ এটা সেনাবাহিনী পৃষ্ঠপোষকতা করে৷ তারা নার্সিংও করে৷ তবে গলফ টুরিজমটা অবহেলিত বলা যায়৷ আমাদের যে সম্ভবনা আছে সেটা কাজে লাগানো হচ্ছে না৷ আমাদের হোটেলগুলোর সঙ্গে গলফের একটা সমন্বয় দরকার৷ গলফ টুরিজমটা করা গেলে দেশের একটা প্রচারও হয়৷ যদিও গলফ ফেডারেশন এটা নিয়ে কাজও করছে৷
আহমেদ আসিফুল হাসান, বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশন
আমি মনে করে, আমাদের যে বাজেট সেটা একেবারেই অপ্রতুল৷ আমাদের প্রতিটি ফেডারেশনের দ্বারে দ্বারে দৌড়াতে হয়৷ আমরা বছরে ৪ লাখ টাকা পাই, স্টাফদের বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য৷ তবে সরকারের যে সাপোর্ট বেড়েছে৷ আসলে আমরা তো আশানুরূপ রেজাল্ট দিতে পারছি না৷ এটা রাস্তায় ছিল৷ এখন একটা জায়গায় এসেছি, সরকারের সাপোর্টেই৷ আপাতত আমরা একটা জায়গায় এসেছি৷
ফয়েজ আহমেদ, বাংলাদেশ কান্ট্রি গেমস এসোসিয়েশন
আমাদের ফেডারেশনটা তৈরি হয়েছে ২০১৮ সালে৷ এরপরই তো কোভিড চলে এল৷ তখন আসলে আমরা তেমন কোনো বাজেট পাইনি৷ এরপর থেকে কিছু কিছু পাচ্ছি৷ আমাদের যে ৫৩টা ফেডারেশন আছে তার মধ্যে এই একটা ফেডারেশন দেশীয় খেলা নিয়ে৷ আর সবই তো বাইরের খেলা৷ আমরা চেষ্টা করছি, দেশীয় খেলাগুলোকে এক ছাতার নিচে আনতে৷ প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে আন্তরিক৷ তিনি আমাদের সহযোগিতা করছেন৷
অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু, অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এনএসসির কাছ থেকে ফেডারেশন চালানোর খরচ বাবদ ১৯ লাখ টাকা পাই৷ উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রস্তাবনা দেওয়া হলে প্রশিক্ষণ, বিদেশের খেলায় অংশগ্রহণে বছরে আরও ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা দেয় এনএসসি৷ আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন থেকেও বছরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার ডলার পাওয়া যায়৷ খেলার থেকেও বেশি বাজেট লাগে প্রশিক্ষণে, বিদেশি কোচ নিয়োগ দিতে৷ স্পন্সর না থাকায় সবকিছু ছোট পরিসরে করতে হয়৷
মোল্লা বদরুল সাইফ, সাঁতার ফেডারেশন
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে বছরে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা আসে৷ স্পন্সর থেকে বাকি টাকা জোগাড় করি৷ বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়৷ রাষ্ট্রীয় যে কাঠামো সেভাবে চলা সম্ভব না৷ কয়েকটি ভালো মানের স্পন্সর থাকায় সাঁতারের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি৷ যখন ক্যাম্প করি তখন অনেক টাকা লাগে৷ বছরে আমাদের বিদ্যুৎ বিলই আসে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা৷ তারপরও আমি বলব অন্য ফেডারেশনের থেকে অনেক ভালো আছি৷
সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর, বাংলাদেশ অলিম্পক অ্যাসোসিয়েশন
আমি সংগঠক হিসেবে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করেছি৷ অন্য খেলায় যখন যুক্ত হলাম তখন ভিন্ন চিত্র দেখলাম৷ ক্রিকেট ছাড়া দেশের বাকি ফেডারেশনগুলো লক্ষ্যহীন৷ আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুযোগ নেই৷ সুযোগ-সুবিধা বলতে কিছুই নেই৷ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠোপোষকতার অভাব আছে৷ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নজরদারি নেই৷ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন চাইলেও কিছু করতে পারে না৷ শুধু গেমসগুলোতে কিছু আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে থাকে৷