‘ক্রেতারা যোগাযোগ করতে শুরু করেছে’
২৭ মার্চ ২০২০‘‘ব্র্যান্ডগুলো যোগাযোগ করতে শুরু করেছে,'' ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু প্রস্তাব পাঠিয়েছি৷''
এর আগে গত কিছুদিন ধরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে একের পর এক অর্ডার বাতিল হতে থাকে৷ বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯৩৬টি কারখানার অর্ডার বাতিল হতে থাকে, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২.৫৮ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা৷
এ অবস্থায় বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর কাছে খোলাখুলিভাবে আবেদন জানান৷ তিনি বলেন, এ রকম সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্র্যান্ডগুলো যদি হাত তুলে নেয়, তাহলে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৪১ লাখ শ্রমিককে না খেয়ে মরতে হবে৷
তিনি অভিযোগ করেন, অনেক কোম্পানি এরইমধ্যে অর্ডার করা পণ্য তৈরির মাঝামাঝি থাকা অবস্থায়, তৈরি হয়ে যাবার পর এমনকি তৈরি পণ্য পাঠিয়ে দেবার পরও অর্ডার বাতিল হয়েছে, যেটা অনুচিত৷
তিনি এ অবস্থার উত্তরণে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন৷ সেসব প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এরই মধ্যে অনেকে যোগাযোগ করেছে বলে জানান তিনি৷
বিজিএমইএর প্রস্তাব
বিজিএমইএ পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ প্রথমত, আগে অর্ডার করা যেসব পণ্য এরই মধ্যে উৎপাদনে চলে গেছে কিংবা উৎপাদিত হয়ে সরবরাহের অপেক্ষায় আছে, সব পণ্যের মূল্য সাধারণ নিয়মে পরিশোধ নিতে হবে৷ দ্বিতীয়ত, যদি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে আনকাট ফেব্রিক থাকে, তাহলে হয় এর শিপমেন্ট নিতে হবে, অথবা এর ‘কাট অ্যান্ড মেক' বা শ্রমের খরচটুকু দিতে হবে, যেন শ্রমিকদের বেতন দেয়া যায়৷ তৃতীয়ত, অব্যবহৃত ফেব্রিকের দাম পরিশোধের ক্ষেত্রে ১৭০ দিন সময় নিতে পারে ক্রেতারা৷ চতুর্থত, ক্রেতা চাইলে উৎপাদনকারী বা বিক্রেতা এই পণ্য আপাতত মজুদ করেও রাখতে পারে, কিন্তু তা উৎপাদন এলাকা ছাড়লেই সরবরাহকৃত বলে বিবেচিত হবে৷ পঞ্চমত, যদি কোনো বিশেষ কারণে শিপমেন্ট বাতিল হয় তাহলে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷
জার্মানির কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া
বিজিএমইএ জার্মানির উন্নয়ন সহযোগী মন্ত্রী গার্ড ম্যুলারের কাছেও সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছিল৷ জবাবে ম্যুলার বলেন, যেহেতু এত লোক এই খাতে কাজ করেন, তাই বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ও এর সঙ্গে জড়িতদের সহযোগিতার একটি উপায় বের করা হবে৷
‘‘আমরা জার্মান মন্ত্রীর কাছে বলেছি যেন জার্মান ব্র্যান্ডগুলো তাদের অর্ডার বাতিল না করে, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করতে,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন রুবানা৷ ‘‘কোভিড পরবর্তী সময়ে আমাদের ঘুরে দাঁড়াবার সময়টুকুতেও তারা যেন আমাদের পাশে থাকেন, সেটি বলেছি৷''
রুবানা জানান, বাংলাদেশের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক হলো জার্মানি৷ মোট রপ্তানির ১৮ ভাগ করা হয় এই দেশটিতে৷ সবমিলিয়ে ইউরোপে ৬০ ভাগ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ৷ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ তিন হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা মোট রপ্তানির ৮০ ভাগেরও বেশি৷
গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের বেতন ভাতা দেবার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল ঘোষণা করেছেন৷ উৎপাদন খাতগুলোর জন্য এই তহবিল সাময়িক কিছুটা স্বস্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানান রুবানা৷
‘‘আমরা মাসে শ্রমিকদের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা বেতন দেই৷ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা আমাদের স্বস্তি দিয়েছে৷ তবে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোকে সামনে আসতে হবে এবং দায়িত্ব নিতে হবে,'' বলেন তিনি৷