ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হিমালয়
১৩ জানুয়ারি ২০০৯এর ফলে একদিকে যেমন ব্যাপক বন্যার ঝুঁকি রয়েছে হিমালয়ের পাদদেশের বিভিন্ন জনবসতিতে, আরেক দিকে তেমনি সাগরে তলিয়ে যাওয়ার আশংকায় রয়েছে নিম্ন এলাকার দেশগুলো৷
নেপালের উত্তরাঞ্চলে হিমালয়ের উপত্যকা ল্যাংট্যাং৷ এর মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে লিরাং হিমবাহ৷ ক্রমেই বরফ গলে ছোট হয়ে আসছে লিরাং৷ হিমবাহটির গা বেয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন হ্রদ৷ নেপালের হাইড্রোলজি বিভাগের দীর্ঘমেয়াদী এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি বছর হিমালয়ের তাপমাত্রা দশমিক শূন্য ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বাড়ছে৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হারের চেয়ে তা অনেক বেশি৷
হিমবাহ গলা ছাড়াও গত কয়েক দশকে ল্যাংটাং উপত্যকায় অনেক পরিবর্তনই ঘটেছে৷ সেখানকার অধিবাসী রিনজিন দর্জি লামা জানালেন, আগে শীতকালে অনেক বেশি তুষারপাত হতো৷ দুই মিটার পর্যন্ত বরফ জমা হতো উপত্যকা জুড়ে৷ কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকতো সেই বরফ৷ কিন্তু গত শীতে বরফ জমেছে মাত্র দুই সেন্টিমিটার৷
জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের কারণে লিরাং-এর মতো আরো অনেক হিমবাহই গলে যাচ্ছে৷ ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের হিসেবে, নেপালে হিমবাহ থেকে কমপক্ষে ২ হাজার হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে৷ বেশি মাত্রায় বরফ গলার কারণে অনেক ক্ষেত্রে হ্রদের তীর ভেঙ্গে আকস্মিক বন্যার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ নেপাল ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টেগরেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্ট বা আইসিআইএমওডি-র গবেষকরা বলছেন, ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত এরকম হ্রদের তীর ভেঙ্গে বড় ধরনের কমপক্ষে ৫টি বন্যা হয়েছে নেপালে৷ দুটি হয়েছে তিব্বতে এবং ভুটানে একটি৷
চার দশক আগে নেপালের এভারেস্ট অঞ্চলে ইমজা হ্রদটি ছিলো ছোট্ট একটি পুকুরের মতো৷ এখন এটি প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা, চওড়া ৯০০ মিটার আর ৯২ মিটার গভীর৷ হ্রদটির তীর ভেঙ্গে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে৷ আর তা হলে পানির প্রবল স্রোত আশপাশের লোকালয়ে সুনামির মতো ভয়াবহ আঘাত হানতে পারে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ইমজার মতো আরো কমপক্ষে ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ হ্রদ রয়েছে নেপালে৷
হিমবাহ গলে যাওয়ায় এর ভয়াবহতার শিকার যেমন হচ্ছে পাহাড়ী অধিবাসীরা৷ তেমনি আরেক দিকে অদূর ভবিষ্যতেই পানির অভাবে পড়বে বাংলাদেশের মতো এলাকার মানুষ৷ কারণ হিমালয়ের বরফ হলো মিঠা পানির বড় উত্স৷ এখান থেকেই সিন্ধু নদ, গঙ্গা আর ব্রহ্মপুত্রের মতো বড় বড় নদের সৃষ্টি৷ আইসিআইএমওডি গত আগস্টে বলেছে, বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে হিমালয়৷ সেই সঙ্গে এশিয়ার ১৩০ কোটি মানুষের জীবনযাত্রাও৷