খাবার যখন ছবির মডেল
১৯ এপ্রিল ২০১৪খাবার-দাবার নিয়ে খেলা করতে নেই – আকিকো ইডা ও পিয়ের জাভেল কিন্তু এমন ফরমান মানেন না৷ বছর দশেক ধরে প্যারিসের এই শিল্পী দম্পতি খাবার আর পুতুল নিয়ে কাজ করছেন৷ তাঁরা নিজেদের নাম রেখেছেন ‘মিনিমিয়াম' – অর্থাৎ মিনিমাম ও ইয়াম, মানে সুস্বাদু৷ তাঁরা বলেন, ‘‘ছবি তোলার সময় তাতে প্রায়ই নিজেদের দেখতে ইচ্ছে করে, বিশেষ করে সে ছবি চকোলেটের হলে৷ ছবি তোলা হলেই সব খেয়ে নিই৷ ''
প্যারিসে আন্তর্জাতিক কৃষি প্রদর্শনীর জন্য তাঁরা দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়ার এক ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরি করছিলেন৷ প্রায় ৫ লাখেরও দর্শকের সামনে নিজেদের সৃষ্টিকর্ম তুলে ধরার রোমাঞ্চই আলাদা৷ তবে শিল্পী দম্পতি ও তাঁদের কর্মচারীদের কাছে তার প্রস্তুতির কাজ ছিল বিশাল এক চ্যালেঞ্জ৷ পিয়ের বলেন, ‘‘এখানে দুধ উৎপাদন শিল্পের কাজ দেখাতে গিয়ে দুধের শহর তৈরি করছি আমরা৷ একদিকে দই, একদিকে চিজ, আরেক দিকে ক্রিম, এখানে মাখনের আলাদা জগত তৈরি হচ্ছে৷''
এই জগতের মধ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে নানা ছোট কাহিনি৷ প্রেক্ষাপট যেমন ফ্রান্সের এক পাহাড়ি গ্রামের কেন্দ্রস্থল অথবা আধুনিক কোনো শহরের দৃশ্য৷ পিয়ের বলেন, ‘‘এই ক্ষুদ্র শহর দুধ শিল্প ও ইউরোপ সহ গোটা বিশ্বে দুধের বেড়ে চলা চাহিদার প্রতীক৷ কী ভাবে তা তৈরি হয়, কীভাবে তা ভোগ করা হয়৷''
তবে আসল দুধ দিয়ে এই শহর তৈরি হয়নি৷ তার বদলে ব্যবহার করা হয়েছে স্টাইরোফোম-এর মতো কৃত্রিম পদার্থ৷ আকিকো ও পিয়ের বললেন, ‘‘খাবার বদলে যায়, শুকিয়ে যায়, পচে যায়৷ আসল খাবার নিয়ে দ্রুত কাজ সারতে হয়৷ এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷''
পেশাদার ফটোগ্রাফার হিসেবে আকিকো ইটা ও পিয়ের জাভেল খাবারকে দেখতে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন৷ রান্নার বই ও বিজ্ঞাপনের জন্য ছবি তুলেই সবচেয়ে বেশি আয় হয়৷ খাবারের প্রতি ভালবাসাই এই ফরাসি ও জাপানি বংশোদ্ভূত শিল্পীকে পরস্পরের কাছে এনেছে৷ দু'জনেই প্যারিসের আর্ট কলেজে ফটোগ্রাফি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন৷
প্যারিসের অনেক বেকারি, রেস্তোরাঁ ও দোকান ঘুরে তাঁরা নতুন ছবির প্রেরণা পান৷ আকিকো বলেন, ‘‘একদিন আমরা এক বেকারিতে দারুণ চকোলেট ভরা এক টফি খেয়েছিলাম৷ কামড় দিতেই চকোলেট দারুণভাবে ভেঙে গেল৷ দেখে মনে হলো, ঠিক যেন ভূমিকম্প হয়েছে৷ এমন দৈনন্দিন জিনিস থেকেই অনেক আইডিয়া পাওয়া যায়৷''
প্যারিসের মঁমাত্র এলাকায় তাঁদের স্টুডিওতে আকিকো ও পিয়ের ধৈর্য ধরে তিলে তিলে দুধের শহর গড়ে তুলেছেন৷ এখানে চিজ দিয়ে নাগরদোলা তৈরি হচ্ছে৷ এখনো পর্যন্ত খাবার-দাবার নিয়ে ১০০টি ছোট দৃশ্য তৈরি হয়েছে৷ যোগ হচ্ছে আরও নতুন দৃশ্য৷ নিউ ইয়র্কে ‘মিনিমিয়াম' ছবির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ প্রকাশিত হচ্ছে ছবি নিয়ে বইও৷