খালি হাতে ঘরে ফিরলেন ম্যার্কেল
২৫ জুন ২০১৮ইউরোপীয় স্তরে শরণার্থী সংকটের সমাধানসূত্র খুঁজতে তড়িঘড়ি কিছু দেশের এক শীর্ষ বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ রবিবার ব্রাসেলসে ১৬ দেশের শীর্ষ নেতারা সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোনো বোঝাপড়ায় আসতে পারলেন না৷
ইউরোপে শরণার্থী সংকটকে ঘিরে রাজনৈতিক সংকট চরমে উঠেছে৷ অনেক দেশের সরকার কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে৷ জনমতও উদার নীতির বদলে শরণার্থীদের প্রবেশ আরও কঠিন করে তোলার পক্ষে৷ বিশেষ চাপের মুখে পড়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ জোটসঙ্গী বাভেরিয়ার সিএসইউ দল এই প্রশ্নে তাঁর বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে৷ চলতি মাসেই ইউরোপীয় স্তরে সমাধানসূত্র খুঁজে না পেলে তারা ম্যার্কেলকে উপেক্ষা করে জার্মান সীমান্ত থেকে সেই সব শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েছে, যারা অন্য কোনো ইইউ দেশে নিজেদের নথিভুক্ত করেছে৷ অর্থাৎ ম্যার্কেল বিফল হলে চ্যান্সেলর হিসেবে তাঁর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে৷ সেই সঙ্গে জার্মানির রক্ষণশীল ইউনিয়ন শিবিরে অভূতপূর্ব ভাঙনের জের ধরে দেশের রাজনৈতিক সমীকরণ আমূল বদলে যেতে পারে৷ গোটা ইউরোপে তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷
রবিবার ব্রাসেলসে কয়েকটি ইইউ দেশের ‘মিনি' শীর্ষ বৈঠকে ম্যার্কেল সেই সমাধানসূত্র সম্পর্কে ঐকমত্য অর্জন করতে পারেননি৷ ১৬টি দেশের শীর্ষ নেতা শরণার্থী সংকটের সার্বিক ইউরোপীয় সমাধানসূত্র সম্পর্কে সদিচ্ছা প্রকাশ করলেও এই মুহূর্তে কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি৷ ম্যার্কেল নিজেও এত দ্রুত অগ্রগতির আশা করেননি৷ বৃহস্পতিবার ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগেই, অর্থাৎ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করার চেষ্টা করতে চান তিনি৷ এমনকি শীর্ষ সম্মেলনেও চূড়ান্ত বোঝাপড়ার বিষয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন নি তিনি৷ তার বদলে দ্বিপাক্ষিক অথবা ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করে আপাতত নিজের ঘর সামলানোর চেষ্টা করতে চান ম্যার্কেল৷
ইউরোপের রাজনৈতিক আঙিনার বর্তমান কঠিন বাস্তব সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ম্যার্কেল৷ তাই তিনি বলেন, কোনো সমাধানসূত্রের জন্য ইইউ-র ২৮টি সদস্য দেশের সম্মতির জন্য সব সময়ে অপেক্ষা করা সম্ভব নয়৷ তবে একই সঙ্গে যে সব দেশকে শরণার্থীদের ঢল সামলাতে হচ্ছে, তাদের প্রতি সংহতির উপর জোর দিয়েছেন তিনি৷ তারা একাই সমস্যার সমাধান করবে, এমনটা হতে পারে না৷ অন্যদিকে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যে শরণার্থীরা পছন্দমতো ইইউ দেশে আশ্রয়ের আবেদন করতে পারবে না৷ উল্লেখ্য, এতকাল ডাবলিন চুক্তি অনুযায়ী যে দেশে শরণার্থীরা প্রথম পা রাখতেন, সেখানেই তাদের নথিভুক্ত করে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে৷ ইটালির নতুন সরকার সেই ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দাবি করছে৷ গত সপ্তাহে তারা প্রায় ৬০০ শরণার্থীসহ একটি জাহাজ ইটালির ভূখণ্ডে নোঙর করতে দেয় নি৷
ইটালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপে কন্টে শরণার্থী সংকট সমাধানে ১০ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন৷ তার আওতায় এমনকি ইউরোপে শরণার্থীদের আগমন রুখতে পদক্ষেপের উল্লেখ রয়েছে বলে জানা গেছে৷ জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংগঠনের সহায়তায় ইইউ-র বাইরেই শরণার্থী সুরক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে৷ মাল্টাও কড়া পদক্ষেপের দাবি করেছে৷ তবে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস বলেন, এমন সব প্রস্তাব আগেও পেশ করা হয়েছে৷
এমন প্রেক্ষাপটে ম্যার্কেল কী করবেন? ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের পর আগামী সপ্তাহান্তে তিনি দলীয় নেতাদের বৈঠক ডাকবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ তারপর সোমবার সিএসইউ নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার-এর সঙ্গে বৈঠকে তিনি তাঁর অর্জন সম্পর্কে জানাবেন৷ সেহোফার সেই প্রস্তাব মেনে না নিলে ইউনিয়ন শিবিরে ভাঙন অনিবার্য – এমনটাই আপাতত ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ অন্যদিকে বাভেরিয়ার সিএসইউ দল শেষ পর্যন্ত এত বড় ঝুঁকি নেবে কিনা, চলতি সপ্তাহেই তাদের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)