1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে ফিরছে বিএনপি

২৭ জুন ২০২৪

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো বড় সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি৷ শনিবারের এই কর্মসূচির মূল দাবি, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি৷ এরপর, সরকার বিরোধী ধারাবাহিক কর্মসূচির দিকে এগোচ্ছে যাচ্ছে দলটি৷

https://p.dw.com/p/4hbEI
বিএনপির সমাবেশ (ফাইল ফটো)
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করছে বিএনপিছবি: M. Sarwar ul Alam

বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়াও আরো দুইটি ইস্যুকে সামনে রেখে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে চান৷ ভারতের সঙ্গে রেল ট্রানজিট এবং দুর্নীতি-এই দুটি ইস্যুকে তারা সামনে আনতে চান৷ এ নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গেও কথা বলছেন দলের নেতারা৷

বিএনপির এক নেতা জানান, ‘‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি দলের যুগ্ম মহাসচিবদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন৷ ওই বৈঠকেই দলের সামনের দিনের বেশ কিছু আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়েছে৷''

বিএনপির কর্মসূচির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ৷ তারা পরিস্থিতি বুঝে আগের মতো পাল্টা কর্মসূচি দিতে পারে৷

শনিবার বিকালে নয়াপল্টনে সমাবেশের পর ১ জুলাই দেশের সব মহানগরে এবং ৩ জুলাই জেলা পর্যায়ে সমাবেশের কর্মসূচিও দিয়েছে বিএনপি৷ গত বুধবার যৌথ সভা শেষে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷

তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, যেকোনো সময় তার জীবনহানি হতে পারে৷ কিন্তু আদালতের দোহাই দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না৷ সে কারণে এখন রাজপথে কর্মসূচি নেয়া হয়েছে৷''

গত শুক্রবার থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন৷ তার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়েছে৷

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া৷ দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন তিনি৷ তার পরিবারের করা একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়৷ তখন থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার৷ খালেদা জিয়া এখন আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন৷

‘সামনে যে ইস্যু আসবে, আমরা সেই ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তুলবো’

বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশররফ হোসেন বলেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিয়ে সরকার তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে বাধা দিচ্ছে৷ এর মাধ্যমে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে৷ খালেদা জিয়াই হলেন এই সরকারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী৷ ফলে তাকে এইভাবে তিলে তিলে শেষ করে দেয়া হচ্ছে৷ দল তাই তার মুক্তির জন্য সর্বাত্মক আন্দোলনের সিদ্বান্ত নিয়েছে৷ এর সঙ্গে অন্য আরো ইস্যু নিয়ে আন্দোলন জেরদার করা হবে৷''

শনিবারের সমাবেশের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এরমধ্যে ঢাকা মোট্রেপলিটন পুলিশের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে৷ তারা সহসাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবশেষ ভারত সফর নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করবে বলেও জানা গেছে৷ সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়াও আরো কয়েকটি ইস্যুতে বিএনপি কর্মসূটি দিতে পারে বলে আভাস মিলেছে৷

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, ‘‘সামনে যে ইস্যু আসবে আমরা সেই ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তুলব৷ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমরা যুগ্ম মহাসচিবেরা বৈঠক করেছি৷ সেখানে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি৷ বিভিন্ন ইস্যু যেমন দুর্নীতি, ভারতের সঙ্গে চুক্তি এসব ব্যাপারে আমরা আন্দোলনের প্রস্তাব তুলে ধরেছি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘কয়েকদিনের মধ্যে একটি সংবাদ সম্মেলনে আমরা ভারতের সঙ্গে রেল ট্রানজিট এবং অন্যান্য সমঝোতা স্মারক নিয়ে কথা বলবো৷ এটা নিয়ে দেশে এবং বিদেশে আমাদের কাজ হচ্ছে৷ একই সঙ্গে সীমাহীন দুর্নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও আমরা কথা বলবো৷ এইসব ইস্যুতে আমরা অলআউট কর্মসূচি দেব৷''

জানা গেছে, ওই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরবে বিএনপি৷ ওইসব কর্মসূচিতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সম্পৃক্ত করার কাজ চলছে৷ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘যুগপৎ আন্দোলনের শরিকেরা নতুন করে এই সরকারের পতন আন্দোলনে একমত হয়েছে৷''

‘আমরা প্রয়োজনে উন্নয়ন সমাবেশ দেবো’

যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের রেল ট্রানজিট এবং দুর্নীতি ইস্যু নিয়ে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়া নিয়ে কথা বলছি৷ বিএনপি একটি সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত জানাবে৷ এরপরই হয়তো যুগপৎ কর্মসূচি আসবে৷''

আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি তারা দেবে কি-না তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি৷ তবে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন৷ যদি প্রয়োজন মনে করে তাহলে পাল্টা কর্মসূচি দেবে৷

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘‘আমরা কাউন্টার নয়, প্রয়োজনে উন্নয়ন সমাবেশ দেব৷ তবে সেটা দল সিদ্ধান্ত নেবে৷ বিএনপি  শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতেই পারে৷ এটা তাদের অধিকার৷ তবে অশান্তি করলে সেটা তো পুলিশ প্রশাসন দেখবে৷''

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি একটি দুর্নীতিবাজ দল৷ তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা মানায়না৷ আমাদের সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে৷ আর শেখ হাসিনার সরকারই ভারতের কাছ থেকে যা কিছু আদায় করেছে৷ বিএনপি পারেনি৷ তারা ক্ষমতায় থাকতে ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার কথা বলেছিলো৷ আর খালেদা জিয়ার মুক্তি বিএনপিই চায় না৷ তারা এটা নিয়ে রাজনীতি করছে৷''