খালেদার সামনে আরো মামলা
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮এই চারটি মামলায় খালেদা জিয়াকে পলাতক দেখিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা আছে৷ নাশকতা ও বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার অভিযোগে কুমিল্লায় মোট দু'টি মামলা হয় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে৷ এরমধ্যে একটি উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত থাকলেও আরেকটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা আছে৷ নড়াইলে একটি মানহানির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মানচিত্র ও জাতীয় পতাকাকে অবমাননার অভিযোগে ঢাকার আদালতে দায়ের করা একটি মামলায়ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে৷ ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে ঢাকার আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে৷
জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয় ৮ ফেব্রুয়ারি৷ ওইদিনই তাঁকে কারাগারে নেয়া হয়৷ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরো ৩৪টি মামলা আছে৷ এরমধ্যে ১৯টি মামলা বিচারাধীন, তদন্ত চলছে ১২টি মামলার এবং আদালতের নির্দেশে ৩টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত আছে৷ বিচারাধীন ১৯টি মামলার মধ্যে ১৪টির বিচার কার্যক্রম বকশি বাজারের বিশেষ আদালতে পাঠানো হয়েছে৷ এই মামলাগুলোর মধ্যে চারটি মামলা দায়ের হয় গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে৷ বাকি ৩০টি বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে দায়ের করা হয়৷ জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্টের যে দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে, সেই মামলা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই করা হয়৷ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর অভিযোগের মধ্যে আছে দুর্নীতি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি, যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, সহিংসতা, নাশকতা , রাষ্ট্রদ্রোহ প্রভৃতি৷
বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাভোকেট শ ম রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘ যেসব মামলায় খালেদা জিয়াকে পলাতক দেখিয়ে এরইমধ্যে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, সেইসব মামলায় তাঁকে এখন গ্রেপ্তার দেখানো একটি আইনগত বিষয়৷ ওইসব মামলায় তাঁকে আদালতে হাজির করতে হলে অবশ্যই তাঁকে তার আগে গ্রেপ্তার দেখাতে হবে৷ আর যেসব মামলায় তিনি জামিনে আছেন বা তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নাই, সেসব মামলায় তাঁকে আদালতে হাজির করতে হলে আদালত কাস্টডি ওয়ারেন্ট বা প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করবেন৷ এর ভিত্তিতে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে আদালতে হাজির করবেন৷ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার বাইরে যেসব মামলা আছে, সেসব মামলায়ও একই নিয়ম প্রযোজ্য৷''
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এটা কারাগারে থাকা বা না থাকার বিষয় নয়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে, সেসব মামলায় তাঁকে আদালতে হাজিরা দিতে হবে৷ কারাগারে থাকলে আইন অনুযায়ী যেভাবে হাজিরা দিতে হয়, সেভাবেই দেবেন৷ এসব ভিত্তিহীন মামলা৷ তারপরও তো খালেদা জিয়া হাজিরা দিয়ে আসছিলেন৷ কিছু গুরুত্বহীন মামলায় তিনি আদালতে যেতেন না৷''
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘‘শাহবাগ থানায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা ও তেজগাঁও থানায় দায়ের করা গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার আসামি খালেদা জিয়া৷ এ দু'টি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট দেয়া হয়েছে আদালতে হাজিরার জন্য৷ উনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন৷ উনি যদি নিয়মিত এসব মামলায় হাজিরা দেন, তাহলে তাঁকে আর গ্রেফতার দেখানো লাগবে না৷''
তিনি জানান, ‘‘এই দু'টি মামলার পরবর্তী তারিখ যথাক্রমে ১৮ ফেব্রুয়ারি ও ৪ মার্চ৷ এসব মামলায় তাঁর হাজিরা দেওয়ার বিষয়টি আদালত ও জেল কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভরশীল৷''
তিনি খালেদা জিয়াকে কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর (শোন অ্যারেস্ট) বিষয়টি অস্বীকার করেন৷ তবে আইনজীবীদের মতে, যে চারটি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, সেই মামলার হাজিরার তারিখ পর্যন্ত যদি তিনি কারাগারে থকেন, তাঁকে আদালতে হাজির করতে হলে অবশ্যই গ্রেপ্তার দেখাতে হবে৷ কারণ, পলাতক কাউকে আদালতে হাজির করা যায় না৷ শ ম রেজাউল করিম জানান, ‘‘সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়া ওইসব মামলায় জামিনের আবেদন জানাতে পারবেন৷আর প্রোডাকশন বা কাস্টডি ওয়ারেন্ট হলো একটি মামলায় কারাগারে থাকা আসামির বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা থাকলে সেইসব মামলায় (যদি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না থাকে) তাঁকে আদালতে হাজির করার জন্য কারাকর্তৃপক্ষের প্রতি আদালতের লিখিত নির্দেশ৷ এটা আদালতে উস্থাপন করার জন্য পরোয়ানা৷''
খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের বিরুদ্ধে এখনো আপিল ও জামিনের আবেদন করা হয়নি৷ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘‘রায়ের কপি না পেলে আমরা তো আপিল ও জামিনের আবেদন করতে পারছি না৷ তারা তো কপি দিতে দেরি করছে৷ যত দেরি হবে, খালেদা জিয়ার জামিনেও তত দেরি হবে৷ আর তিনি কারাগারে থেকে তত কষ্ট পাবেন৷ তিনি কষ্ট পেলেই তো তাদের আনন্দ৷''
আর খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জানিয়েছেন, ‘‘আদালতের পেশকার আমাদের বলেছেন, আগামী রবিবার রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়া যাবে৷ আমরা তার পরদিনই খালেদা জিয়ার আপিল এবং জামিন আবেদন করব৷''