খাশগজির পর সৌদি টার্গেটে আব্দুলাজিজ?
২৭ জুন ২০২০ওমর আব্দুলাজিজ জানেন যে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না৷ এ কারণেই অনেক বছর ধরেই ক্যানাডায় আশ্রয়ে আছেন তিনি৷ এখন তিনি বলছেন, রয়্যাল ক্যানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ তার বিরুদ্ধেও হামলা হতে পারে বলে তথ্য পেয়েছে৷ সে হুমকির উৎপত্তি সৌদি আরব বলেও জানিয়েছে পুলিশ৷
আব্দুলাজিজ গার্ডিয়ান পত্রিকা এবং নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক ভিডিওতে এমন তথ্য জানিয়েছেন৷
টুইটে শেয়ার করা ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘‘মোহাম্মদ বিন সালমান ও তার লোকজন আমার ক্ষতি করতে চায়৷ তারা আমাকে হত্যা করতে চায় নাকি অপহরণ, তা জানি না৷’’
ওমর আব্দুলাজিজকে কয়েক বছর আগে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া হয়৷ জার্মানির ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স এর গুইডো শ্টাইনবার্গ মনে করেন, ‘‘তার (ওমর আব্দুলাজিজ) অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ এরই মধ্যে সৌদি সরকারের বিরোধিতাকারী সবাইকে চুপ করিয়ে দেয়া হয়েছে৷ তাদের বেশিরভাগই হয় কারাগারে, অথবা অন্যকোনোভাবে তাদেরকে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়েছে৷’’ কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকায় আব্দুলাজিজের গুরুত্ব আরো বেড়েছে বলেও মনে করেন তিনি৷
এবারই প্রথম ক্যানাডিয়ান পুলিশ তার সঙ্গে যোগাযোগ করলো বলে জানান ওমর আব্দুলাজিজ৷ তার আইনজীবী আলা মহাজন গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, এই হুমকির তথ্য খুবই নির্ভরযোগ্য৷
কাওয়াকিবি ফাউন্ডেশনের প্রধান এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকর্মী ইয়াদ আল-বাগদাদী জানান, তারা আরো আগে থেকেই এমন হুমকির আশঙ্কা করছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানি, অনেকদিন ধরেই তাকে টার্গেট করে রেখেছেন এমবিএস (মোহাম্মদ বিন সালমান)৷’’
আল-বাগদাদীও এমবিএসের অধীনে সৌদি নীতির কট্টর সমালোচক৷ তিনি এখন নরওয়েতে বাস করেন এবং ২০১৯ সালে তাকেও সৌদি আরব থেকে হুমকি পাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছিল৷ আল-বাগদাদীর সঙ্গে কখনও আব্দুলাজিজের দেখা না হলেও দুজনই লেখালেখি ও একই ধরনের নীতির পক্ষে কথা বলেন৷ ২০১৮ সালে তুরস্কে সৌদি দূতাবাসে খুন হওয়া সাংবাদিক খাশগজির বন্ধু ছিলেন এরা দুজনই৷
২০১৭-১৮ সালে আব্দুলাজিজের সঙ্গে খাশগজির নিয়মিত যোগাযোগ হতো৷ শ্টাইনবার্গ জানান, ‘‘জামাল খাশগজি যখন ওয়াশিংটন ডিসিতে ছিলেন তখন তিনি আব্দুলাজিজের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন৷ তারা একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারেও পরিকল্পনা করেছিলেন৷ ফলে খাশগজি যখন টার্গেট হলেন, সৌদ আরব বুঝতে পারলো আব্দুলাজিজও তাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেন৷’’
হ্যাকিংয়ের শিকার
২০১৮ সালে আব্দুলাজিজ টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটিজেন ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারেন যে তার ফোন সৌদি আরব থেকে হ্যাক করা হয়েছিল৷ এবং এই হ্যাকের পরই সৌদি আরবে অবস্থানরত তার পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে দাবি আব্দুলাজিজের৷ টুইটারের ভিডিওতে আব্দুলাজিজ বলেন, ‘‘সমালোচনার কারণে তারা আমাকে আঘাত করতে চায়৷ কিন্তু এর সঙ্গে আমার পরিবারের সম্পর্ক কী? আমার বাবা-মা ও ভাইবোনদের কেন আমার সঙ্গে যোগাযোগ ও ভ্রমণ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না?’’
নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও একসঙ্গে কাজের পরিকল্পনার ফলেই তাকে ও খাশগজিকে টার্গেট করা হয়েছে বলে দাবি আব্দুলাজিজের৷ ২০১৯ সালের নভেম্বরে ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয়তে এমনটাই দাবি করেছিলেন তিনি৷
তিনি লিখেছিলেন, ‘‘পুরোটাই একটি সমন্বিত ও পরিকল্পিত হয়রানি৷ সৌদি আরব ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও এর বিক্রি করা যন্ত্র দিয়ে আমার ও জামালের মধ্যে চালাচালি করা বার্তা পড়েছে৷ আমি আর জামাল টুইটারে সৌদ ট্রলকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছিলাম৷ আমরা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলতে চাচ্ছিলাম৷’’
সৌদি গলার কাঁটা টুইটার
আব্দুলাজিজের পাঁচ লাখের মতো ফলোয়ার রয়েছেন টুইটারে৷ নিজের আর্টিকেলে তিনি নিজেকে সৌদি আরবের শীর্ষ তিন টুইটার ইনফ্লুয়েন্সারের মধ্যে জায়গা দিয়েছেন৷ এর মধ্যে তিনি আছেন নির্বাসনে, দ্বিতীয় জনকে আটক করা হয়েছে, তৃতীয় জন নিখোঁজ রয়েছেন৷ আব্দুলাজিজের মতে, ২০১৭ সালে মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হওয়ার পর দেশটিতে টুইটারও পালটে গেছে৷ ওমর আব্দুলাজিজের মতে, এর আগে মানুষ টুইটারে পোস্ট করে নিজেদের মত জানাতে পারতো, সমালোচনা করতে পারতো৷
ডিয়ানা হোডালি/এডিকে